সে যেন আমার স্বামী নয় বরং শত্রু!!

সে যেন আমার স্বামী নয় বরং শত্রু!!
আয়শা ও সাথী দুজনই একে বান্ধবী সেই ক্লাস ফাইভ থেকে। তারা এক সাথে স্কুলে যেত, এক সাথে টিপিন করত। তারা টিপিনে একে অপরের সাথে ভাগ করে টিপিন করত। কাউকে ছেড়ে কেউ কখনো না স্কুলে যেত! না কলেজে! তাদের বেড়ে উঠা যেন এক সাথেই। বলা যায়, তারা একে অপরের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিল। এভাবেই তারা এক সাথে থেকেই ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা শেষ করে। বয়স তখন দুজনরী আঠারোর কাছা কাছি। চার দিক থেকে তাদের জন্য পাত্র আসতেছে।
দুজনই স্মার্ট ও আধুনিক  মন মানুষিকতা সম্পন্ন পাত্রর প্রতি আগ্রহী। জাত ধর্ম কিছুই যেন তাদের কাছে চাওয়া নয়।
স্কুল কলেজে পড়া এবং সিনেমায় গিয়ে সালমান শাবনূরের রুমান্টিক ছবি দেখার কারণেই, তাদের এমন চাহিদার জন্ম হয়েছে। তবে, দুজনের মধ্যে চাওয়া পাওয়া নিয়ে মিল থাকলেও তাদের পরিবারের চাহিদা অনেকটা ভিন্ন।
যুগের চাহিদার কথা ভেবে মেয়েকে স্কুল কলেজে পড়ালেও আয়শার পরিবার ছিল ধার্মিক ও রক্ষণশীল। তারা মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজে ভেড়াচ্ছে ধার্মিক। যে পাত্র আল্লাহর ভয়ে মদ, জোয়া সহ যাবতীয় খারাপ কাজ থেকে নিজে বেঁচে থাকবে তার মেয়েটিকেও সুখে রাখবে।
অন্যদিকে সাথীর পরিবার এসবের কিছুই চিন্তা করেনা। মেয়ের চাহিদা তাদের কাছে মেয়ের সুখ।
সাথীর পাত্র খুব দ্রুত পাওয়া গেলেও আয়শার জন্য পাত্র পাওয়া যেন কঠিন হয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত আয়শার পাত্রী পাওয়া গেল বিয়েও হলো। আয়শার পাত্র ধার্মিক হলেও তেমন সুন্দর চেহেরা বিশিষ্ট কোন পুরুষ ছিলনা। বলা যায় এই বিয়েতে আয়শার সম্মতি ছিলনা। তবুও পরিবারের চাপের কারণে এই বিয়ে তাকে করতে হয়। অনেক দিন পর, আয়শার সাথে সাথীর ফেসবুকে যোগাযোগ হলে সাথী তার স্বামীর ছবি আয়শাকে দেয়। সাথী আয়শাকে তার স্বামীর ছবি দিতে বলে। আয়শা কিন্তু কোন অবস্থাতেই তার স্বামীর ছবি সাথীকে দিচ্ছে না। কারণ তার স্বামী দেখতে তেমন সুন্দর ও স্মার্ট নয়।
এইভাবে চলছে আয়শার জীবন।
এরি মধ্যে আয়শার অনেক পরিবর্তন এসে গেছে। সে যেন, অপছন্দের সেই স্বামীর আপন করে নিচ্ছে। আয়শার স্বামী সবসময় তাকে সালাত পড়া, কোরান হাদিস পড়তে উৎসাহিত করত। মুসলিম হয়েও যেসব থেকে সে দূরে ছিল। কোন পরপুরুষের সামনে আয়শাকে যেতে দিত না। বন্ধু আসলেও আয়শাকে কখনো তাদের সামনে যেতে দিত না। এইভাবে আয়শার জীবন সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
অন্য দিকে সাথী পডেছে যন্ত্রনায়। স্বামী ঠিক সময়ে ঘরে না ফিরা। তাকে সময় না দেয়া। যখন তখন বন্ধুদের ঘরে নিয়ে আসা। স্বামীর ধুমপান করা ইত্যাদি। স্বামীর এইসব অগোছালো কর্মে সে এক প্রকার বিরক্ত অনুভব করে। তবুও যেহেতু নিজের পছন্দ মতো বিয়ে করেছে, তাই অসহনীয় হলেও সহ্য করতে হয়।
একদিন, আয়শার সাথে রাস্তায় দেখা। আয়শা স্বামীর সাথে পার্কে বেড়াতে গিয়েছিল আর সাথী কিছু কাঁচা বাজার করতে বাজারে গিয়েছিল। সাথী আয়শাকে চিনতে না পারলেও আয়শা ঠিকই দূর থেকে চিন্তে ফেরেছিল। আয়শার স্বামীও বুঝতে ফেরেছিল উনি নিশ্চয় আয়শার বন্ধু। তাই দূর থেকে সালাম দেয়। সাথী একটু অন্যরকম কিছু অনুভব করল।
অনেক দিন পর দুইজনের দেখা। তাই দুজনই খুবই আনন্দ অনুভব করল। আয়শা সাথীকে তার স্বামীকে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে, সাথী যেন একটু মন খারাপ করে ফেলে। আয়শা তখন একটু চিন্তিত হয়ে পড়ল। আবারো জিজ্ঞাসা করলে, সাথী যেন তা এডিয়ে যায়।
আয়শা আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে সাথীকে রেস্টুরেন্টে ঢুকার জন্য বলে। সাথী ঢুকল না। এবার দুজনই বিধায় নেবার সময়।
বিধায় নেয়ার আগে সাথী আয়শাকে জিজ্ঞাসা করল, তুই কিভাবে এই লোকটাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিলি?
আয়শা বলেছিল, বিয়েও কিছু দিন পর উনি বাজারে গিয়েছিল। বাজার শেষে আসার আগে আমাকে ফোন করেছিল। ফোনে 'সালাম' দিয়ে জিজ্ঞেস করল আমার পার্সোনাল কিছু লাগবে কিনা!! সেদিন আমি খুবই মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার সে আচরণ দেখে। কেননা তিনি আমায় সালাম না দিলেও পারতেন। তাছাডা, আজ পর্যন্ত তিনি এক দিনও রাত করে ঘরে আসেনি। ধুমপানও করে না। যখন তখন বন্ধুদের নিয়ে ঘরেও আসে না। আমাকে বিরক্তও করে না। যার আচরণ এমন সে দেখতে যেমনটি হৌক। সত্যিই সে ভালবাসা পাওয়ার যোগ্য।
এইসব শোনে সাথী আয়শাকে বল্ল, তুই সত্যিই ভাগ্যবান। কেননা, আমার স্বামী দেখতে অনেক স্মার্ট ও সুন্দর হলেও তার চেহারা দেখলে প্রতিনিয়ত তার প্রতি রাগ জন্মে। যেন সে আমার স্বামী নয় বরং শত্রু।

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ