সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
আব্দুল্কাদের জিলানী (রা)এর মাজার |
হুসাইনী।
জন্ম : ২৯ শে শাবান ৪৭০ হিজরী সালে, ফার্সিয়া দেশে (বর্তমান ইরান) জিলানী জেলার নাঈফ শহরে জন্ম গ্রহণ করেন।
পিতা মাতা : তার পিতার নাম সৈয়দ আবু সালেহ মুসা আল হাসানি এবং তার মায়ের নাম সায়্যিদা উম্মুল খায়ের ফাতেমা। তারা দুজনই যথাক্রমে মুহাম্মদ (সা) এর দৌহিত্র ইমাম হাসান ও হোসাইন (রা) এর বংশধর।
সন্তান : দাম্পত্য জীবনে তার মোট সন্তান ছিল ১৫ জন। তার মধ্যে ৪ জন কন্যা সন্তান এবং ১১ পুরুষ সন্তান। মেয়েদের নাম : মদিনা,সাদিকা, মু'মিনাহ, মাহবুবা।
পুত্র সন্তান সমূহ : সাফিউদ্দীন, শরীফুদ্দীন, আবুবকর, সিরাজুদ্দীন, ইয়াহয়িয়া,মুস
উপাধী :
• সৈয়দ (সাম্মানিত)
• শাইখ("নেতা")
• আব্দ আল-কাদির ("সর্বময় ক্ষমতার গোলাম")
• আল-জিলানী ("একজন যিনি গিলান থেকে এসেছেন")
• মুহায়ি’দ-দ্বীন
• আবু মুহাম্মদ ("মুহাম্মদ এর পিতা")
শিক্ষা জীবন : আব্দুল কাদির (রা) জীবনের প্রথম ১৮ বছর তার নিজ শহরে কাটিয়ে ছিল। ১০৯৫ সালে তার বয়স যখন ১৮ বছর তখন তিনি তার নিজ শহর নাঈফ থেকে বাগদাদ গমন করেন। সেখানে তিনি একাধিক আলেমেদ্বীন এর সংস্পর্শে থেকে ইসলামী জ্ঞান অর্জন করেন। তার শিক্ষকদের মধ্যে কাদি আবু সাদ আল মুবারক আল মুখাররিমি, ইবনে আকিল আল হাম্বলী, আবু আল হাসান, ইবনে কাজী আবু ইয়ালি, মুহাম্মদ ইবনে আল হুসাইন প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। তিনি কুরআন, হাদীস, ফিকাহ্ ও তাসাউফের জ্ঞানে পার্দশিতা অর্জন করেন। জ্ঞান অর্জন করে তিনি ইসলামের সেবায় নিয়োজিত হন। তিনি খুব সুন্দর ভাবে বক্তব্য দিতে পারতেন। তার দাওয়াতে অনেক অমুসলিম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন।
মাযহাব : ফিকাহ্ শাত্রের দিকদিয়ে আব্দুল কাদির জিলানী (রহ) ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের ফিকাহ্ অনুসরণ করতেন অর্থাৎ তিনি ছিলেন হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী। দুঃখজনক হলেও সত্য যে তিনি হানাফী মাযহাবের কঠোর বিরোধী ছিলেন। এমনকি তিনি ইমাম আবু হানিফা (রহ) ও তার অনুসারীদের কাফের বলে তাকফির করতেন এবং হানাফি মাযহাবকে ৭২ টি জাহান্নামি ফির্কার একটি মনে করতেন। (আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুক)।
নামাজ আদায় পদ্ধতি: আব্দুল কাদির জিলানী (রহ) ইক্বামাতের বাক্যগুলু একবার করে বলতেন। তিনি নামাজে উচ্চস্বরে আমিন বলতেন এবং রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে উঠে রাফেদাইন বা হাত উত্তোলন করতেন।
তার নামে প্রচলিত কথাঃ হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (র) ছোটকাল থেকেই উত্তন্ত ধার্মিক ও সত্যবাদী ছিলেন। তার নামে বহুল প্রচলিত একটি সত্য ঘটনা হলো, ছোটবেলায় তিনি যখন লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে জিলান নগর থেকে বাগদাদে যাচ্ছিল পথিমধ্যে একদল ডাকাত তাদের কাফেলা আক্রমণ করে। যখন ডাকাত দলের একজন তাকে তার থেকে কি আছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সুজা বলেদেন, তার বগলের নিছে ৪০ দেরহাম মুদ্রা আছে। যদিও সে এই কথাটা লোকিয়ে রাখতে পারত। ব্যপার হলো তার মা তাকে সত্য কথা বলার নির্দেশ দিয়েছিল। তার এই সত্যবাদীতা ডাকাতদের অনেকেই ভাল মুসলিম হয়েগিয়েছিল। ইতিহাসে এটাই তার জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এছাড়া তার নামে অনেক কথায় প্রচলিত আছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ কথায় মিথ্যা ও বানোয়াট। এগুলো তার ছাত্ররা নয় বরং তার অন্ধ অনুসারীরায় তার অবর্তমানে এগুলো প্রচার করে যাচ্ছে। যেমন, তার নামে আলাদা একটি তরীকা তৈরি করা যা ভারতীয় উপমহাদেশে "কাদেরিয়া তরীকা" নামে পরিচিত।
এই তরীকার অনুসারীরা বেশির ভাগই হানাফি ও শিয়া। এরা তার নামে অনেক আজগুবি কাহিনী ও প্রচলন করেছে।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায়, পেটে থাকা অবস্থায় তিনি তার মাকে বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে, মহানবী (সা) যখন মিরাজে গিয়েছিলেন তখন তিনি মহানবী (সা) কে সাহায্য করেছিলেন ইত্যাদি।
তার নামে প্রচলিত শির্কী কথাঃ যদিও তিনি ছিলেন তাওহীদবাদী আলেম কিন্তু তার ইন্তেকালের পরে তার অন্ধভক্তরা তাকে কেন্দ্রকরে অনেক শির্কী আক্বিদা পোশণ করে। যেমন, তাকে বলা হয় "সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী বা গাওসুল আজম " (নাউযুবিল্লাহ)।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, তিনি এখনো মানুষকে সাহায্য করে থাকেন। যার কারণে তার মাজারে তার ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকত। তবে ২০০৩ আমেরিকা কর্তৃক ইরাক হামলার পর তার ভক্তদের এই বিশ্বাস হালকা হয়ে যাচ্ছে। তাদের কথা যেখানে আব্দুল কাদের জিলানী শুয়ে আছেন সেখানে কিভাবে লাখো মুসলিম মহিলা ধর্ষিত হয়। লাখো শিশুকে হত্যা করা হয়। যদি তার সাহায্য করার কোনো রকম ক্ষমতা থাকত তবে তিনি অবশ্যই তাদের সাহায্য করতেন।
তার নামে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনঃ তার নামে কত সংগঠন পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত আছে তা আমার জানা নেই, তবে বাংলাদেশে তার নামে একটি সংগঠন রয়েছে যা "গাওসিয়া কমিটি বাংলদেশ " নামে পরিচিত। এই সংগঠন এর প্রধান কাজ হলো তার জীবনী বর্ণনা করা। মূলত এই সংগঠনটিই বাংলাদেশে হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর নামে আজগুবি গল্প কাহিনী গুলো প্রচার করে বেশি।
মৃত্যুঃ ইসলামের এই মহান সেবক শাইখ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) 89 বছর বয়সে, সোমবার সন্ধ্যায়, 14 ফেব্রুয়ারী 1136 ঈসায়ী বা 11 ই রবিউল আওয়াল 531 হিজরী সনে ইহলোক ত্যাগ করে চলে যান আপন রবের কাছে।
এরপর তার নিথর দেহকানা ইরাকের, বাগদাদে তার মাদ্রাসা বাবুল শেখ, রেফাসা, টাইগ্রিস নদী পূর্বতীরে সমাহিত করা হয়।
আল্লাহ তাকে উত্তম পুরুষ্কার দান করুক ..আমিন।
Writer: Abubakar siddiq.(admin) 30-june-2016.
Comments
Post a Comment