রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

স্বয়ং মহানবী (দঃ) কর্তৃক সোমবারে রোযা রেখে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করেছেন বলে যে অপপ্রচার করা হয় তার জবাব।
হযরত আবু কাতাদাহ্ আনসার রাদ্বি আল্লাহু তাআলা আনহু হতে বর্ণিত “হুযুর (দঃ)-কে
সোমবার দিনে রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, “ঐ
দিনেই আমার শুভাগমন হয়েছে এবং ঐ দিনে আমার আমার উপর নবুয়তের দায়িত্ব আপিত
হয়েছে” (ছহিহ্ মুসলিম, পৃঃ-৫৯১, হাদিস নং-১৯৮)।
অতএব প্রমানিত হল ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা সুন্নাত !!!
জবাবঃ
আমরা নীচে তিনটি হাদীছ পেশ করবো। অতঃপর উপরোল্লিখিত হাদীছটির বিষয়ে
চূড়ান্ত ফায়ছালা দিবো। ইনশা আল্লাহ।
(১) রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু সোমবারে ছওম রাখার কথা
বলেছেন তা কিন্তু নয়। বরং তিনি প্রতি সোম এবং বৃহস্পতিবার ছওম পালন করার কথা
বলেছেন। যেমন- আয়েশাহ রাযিআল্লাহু তা‘আলা আনহা বলেছেন,  ﺃَﻥَّ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ : ﺇِﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
  ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺘَﺤَﺮَّﻯ ﺻِﻴَﺎﻡَ ﺍﻟِﺎﺛْﻨَﻴْﻦِ ﻭَﺍﻟْﺨَﻤِﻴﺲِ
নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সোম এবং বৃহস্পতিবারে ছওম
রাখাকে প্রাধান্য দিতেন (নাসাঈ হাদীছ-২৩৬০; ইবনে মাজাহ হাদীছ-১৭৩৯)।
(২) ছহীহ মুসলিমে এসেছে, ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ، ﻗَﺎﻝَ : ” ﺗُﻔْﺘَﺢُ ﺃَﺑْﻮَﺍﺏُ ﺍﻟْﺠَﻨَّﺔِ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺈِﺛْﻨَﻴْﻦِ،
ﻭَﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﺨَﻤِﻴﺲِ، ﻓَﻴُﻐْﻔَﺮُ ﻟِﻜُﻞِّ ﻋَﺒْﺪٍ ﻟَﺎ ﻳُﺸْﺮِﻙُ ﺑِﺎﻟﻠﻪِ ﺷَﻴْﺌًﺎ، ﺇِﻟَّﺎ ﺭَﺟُﻠًﺎ ﻛَﺎﻧَﺖْ
ﺑَﻴْﻨَﻪُ ﻭَﺑَﻴْﻦَ ﺃَﺧِﻴﻪِ ﺷَﺤْﻨَﺎﺀُ ،
আবূ হুরায়রা রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু হ’তে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সোমবার এবং বৃহস্পতিবার জান্নাতের
দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অতঃপর প্রত্যেক বান্দাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় যে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি…। (মুসলিম হাদীছ-২৫৬৫)।
(৩) আবূ হুরায়রা বলেছেন, ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ
ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ : ্র ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﺍﻷَﻋْﻤَﺎﻝُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟِﺎﺛْﻨَﻴْﻦِ
ﻭَﺍﻟﺨَﻤِﻴﺲِ، ﻓَﺄُﺣِﺐُّ ﺃَﻥْ ﻳُﻌْﺮَﺽَ ﻋَﻤَﻠِﻲ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺻَﺎﺋِﻢٌ রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে আমলসমূহকে পেশ করা হয়। আর আমি পসন্দ করি যে, আমার আমলসমূহ আমি ছওম থাকাবস্থা পেশ করা হোক। (তিরমিযী হাদীছ-৭৪৭)।
১ নং হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হ’ল যে, রাসূল
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেবল
সোম বারে ছওম রাখতে বলেছেন তা নয়। বরং তিনি সোম এবং বৃহস্পতি- উভয় দিনেই রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন।
২ এবং ৩ নম্বর হাদীছে
সোমবার এবং বৃহস্পতিবারে ছওম রাখার ফযীলত বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই ফযীলত বর্ণনা করেছেন স্বয়ং মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন। তিনি এখানে তার বেলাদাতের কথা উল্লেখ
করেননি। বরং এই দুদিন আমল আল্লাহর কাছে পৌছানো হয় তাই নবী সঃ রোযা রাখতেন
স্বয়ং নবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দুদিনের রোযার
ফযীলত সম্পর্কে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে তিনি বেলাদাতের ফযীলত উল্লেখ
করেন নি। আর এনারা নিজের তরফ থেকে বানোয়াট ব্যাখ্যা প্রচার করছেন।
প্রশ্ন- তাহ’লে এই হাদীছ দ্বারা কি উদ্দেশ্য? জবাব : এই হাদীছ দ্বারা নবী ছাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লামের-এর নিজের বেলাদাতের দিন সম্পর্কে অবহিত করাই হ’ল মূল উদ্দেশ্য। বেলাদতের ফযিলতের কথা বলা হয়নি l
আর তাকে কেবলমাত্র সোমবারে রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কেও এই
হাদীছে জিজ্ঞাসা করা হয়নি। আসুন আমরা হাদীছটি আরবীসহ পাঠ করি- ﻭَﺳُﺌِﻞَ ﻋَﻦْ ﺻَﻮْﻡِ ﻳَﻮْﻡِ
ﺍﻟِﺎﺛْﻨَﻴْﻦِ؟ ﻗَﺎﻝَ : ﺫَﺍﻙَ ﻳَﻮْﻡٌ ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻓِﻴﻪِ، ﻭَﻳَﻮْﻡٌ ﺑُﻌِﺜْﺖُ – ﺃَﻭْ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻲَّ
ﻓِﻴﻪِ
ক্বাতাদা আনছারী বর্ণনা করেছেন যে, …..এবং তাকে সোমবারের ছওম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হ’ল। তিনি বললেন, এটি ঐদিন যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি। এবং ঐ
দিনই আমাকে নবুআত দান করা হয়েছে কিংবা আমার উপর কুরআন নাযিল করা
হয়েছে (মুসলিম হা/৯৭)।
হাদীছের ভাষ্য দ্বারা অনুধাবন হয় যে, এখানে তিনি প্রশ্নের জবাবে বিবৃতি দিয়েছেন মাত্র। কোন মীলাদ
নামক বানোয়াট আমল করতে বলেননি। তাছাড়াও ক্বাতাদা রাযিআল্লাহু তাআলা
আনহু বর্ণিত এই হাদীছটি আবূ দাউদেও রয়েছে। সেখানে সোমবার এবং বৃহস্পতিবার -
উভয়ই দিনের কথাই আছে (আবূ দাঊদ হাদীছ ২৪১৮; আরবী হাদীছটি হ’ল
- ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻗَﺘَﺎﺩَﺓَ،
ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟْﺤَﺪِﻳﺚِ . ﺯَﺍﺩَ ﻗَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ، ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﺻَﻮْﻡَ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟِﺎﺛْﻨَﻴْﻦِ،
ﻭَﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟْﺨَﻤِﻴﺲِ ﻗَﺎﻝَ ﻓِﻴﻪِ : ﻭُﻟِﺪْﺕُ ﻭَﻓِﻴﻪِ ﺃُﻧْﺰِﻝَ ﻋَﻠَﻲَّ ﺍﻟْﻘُﺮْﺁﻥُ )।
বইঃ সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৮/ সওম, হাদিস নম্বরঃ ২৪১৮
মূসা ইবন ইসমাঈল ........ আবূ কাতাদা (রাঃ) পূর্বোক্ত হাদীসের বর্ণনা করেছেন। এরপর তিনি অতিরিক্ত বর্ণনা করে বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ ! সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা সম্পর্কে আপনার অভিমত কী? তিনি বলেন, এ দিন (সোমবার) আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং এ দিন আমার উপর কুরআন সর্বপ্রথম নাযিল হয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ
সোমবার না হয় রাসূলের বেলাদত। কিন্তু বৃহস্পতিবার কেন তিনি ছওম রাখতে উৎসাহ দিলেন? এ দু’টি দিনেই কি জন্মগ্রহণ করেছেন সেজন্য ছওম রাখতে বলেছেন?
নাকি অন্য কারণে ছওম রাখতে বলেছেন? পাঠক! আপনার ইতিমধ্যেই অনুধাবন করতে পেরেছেন যে, মূলত সোমবার এবং বৃহস্পতিবার আমলকে উর্দ্ধে উঠানো হয় তাই এই দুটি দিনে ছওম রাখা উত্তম। যেন ফেরেশতাগণ আমাদের আমলকে ছওমরত অবস্থায় পেীছাতে পারেন।
এখানে বেলাদাত-এর কারণে ছওম রাখতে বলা হয়নি।
(৪) ইমাম নববী এই হাদীছটির চমৎকার ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। কিন্তু কোথাও
তিনি বেলাদাত বা মীলাদ শব্দটি লেখেনন এতে বুঝা যায় যে, এই হাদীছ দ্বারা নবী
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বেলাদাত-এর উপলক্ষ্যে মীলাদ করা বুঝান নি (দেখুন : ইমাম নববী রচিত শরহে ছহীহ মুসলিম ৮/৫২)।
সারাংশ হ’ল, মুসলিমের উপরোক্ত হাদীছ দ্বারা বিলাদাতের ফযীলতের কথা বলে
মীলাদ করার প্রতি ইশারা করা হ’ল বর্তমান সময়ের বানানো ব্যাখ্যা। যার কোন অস্তিত্ব
চার মাযহাবের ইমামদের যুগেও ছিল না। যদি থাকতো তবে তারা অবশ্যই এই হাদীছ দ্বারা মীলাদ করার দলীল দিতেন। কিন্তু তারা তা করেন নি।
আহমেদ মুসার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে। 

Comments

  1. প্রথম হাদিসটির যথাযথ ব্যাখ্যা কিন্তু দেওয়া হয়নি

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ