কবর পূজারিদের সেইকাল আর এইকাল!



kobor puja, Abdul wohab, Qobor poja
কবর পূজারিদের সেইকাল আর এইকাল

প্রায় ১৪৪০ বছর পূর্বে আরবের মক্কা নগরীতে মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর জন্ম হয়। আর তার জন্ম স্থান ছিল মুশরিকদের আবাস স্থল। এ মুশরিকণ নানা রকম ওসীলা ধরে আল্লাহর ইবাদত করত। তাদের ধারণা ছিল যে, উসিলা ছাড়া আল্লাহর নিকট কোন দোয়া বা প্রার্থনা কবুল হয়না। তাই তারা আল্লাহর নির্দেশন গুলােকে উসীলা বানাত। যেমন কোন কোন মুশরিকদের দল চন্দ্র, সূর্য, গাছ পালাকে উসীলা বানাত আবার কোন কোন মুশরিকদের দল আল্লাহর নেককার বান্দাদের মূর্তি, কবর ইত্যাদিকে উসীলা বানাত। প্রকৃত পক্ষে, তারা আল্লাহকে এক স্রষ্টা হিসেবে বিশ্বাস করত এবং তারা ছিল ইব্রাহিম (আঃ) এর অনুসারী। কালের পরিবর্তনে তারা আল্লাহর সাথে শরীক করে মুশরিক হয়ে যায়।
যাই হােক, আমার কথা হল তারা চন্দ্র, সূর্য প্রভৃতির পাশাপাশি আল্লাহর নেককার বান্দাদের কবর, মুর্তি ইত্যাদিকে উসীলা হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করা। আর আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের সহজ উপকরণ হিসেবে করবাসীকে গ্রহণ করেন। তাদের ধারণা ঐ কবরবাসী আল্লাহর ওলী। সুতারাং তাকে খুশি করলে জান্নাত পাওয়া যাবে। এ ভ্রান্তধারণার ভিত্তিতে তারা কবর বাসিকে খুশি করার জন্য তার কবরের পাশে এসে নানা অনুষ্ঠান করে। টাকা দান করে তার নামে জীবজন্তু কোরবানি করে। আর এভাবে আল্লাহর এ বান্দাদের কবর হয় ইবাদতের কেন্দ্রস্থল। তারা এক 'আল্লাহই বিশ্বাসী হলেও কবর বাসিকে কেন্দ্র করে তাদের এসব বিশ্বাস ও কর্মের কারণে তাদেরকে কবর পূজারি বলা হত। একারণেই নবীজি (সাঃ) ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক সময়ে কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। এবং কবর পাকা করা, কবরের উপর সমাধি নির্মাণ করাও নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন। পরবর্তীতে যখন মুলমানদের ঈমান মজবুত হয়, তখন তিনি কবর জিয়ারতের অনুমতি দেন, কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, কবর জিয়ারত মানুষকে মৃত্যুণ কথা স্বরণ করে দেয় এবং কবরবাসীর জন্য দোয়া করা । কিন্তু কবর পাকা করা, কবরের উপর মসজিদ নির্মান করা ইত্যাদি সব কর্ম কাণ্ড করতে নিষেধ করেছেন। তার ইন্তেকালের পাঁচ দিন পূর্বেও তার উম্মতদের এই উপদেশ দিয়ে ছিল যে, “তোমরা মনোযোগ দিয়ে শােন! তোমাদের পূর্ববর্তী জাতি সমূহের লােকে তাদের নবী ও ওলীদের কবরকে মসজিদ বা ইবাদাত গৃহ বা নামাযের স্থান বানিয়ে নিত। তােমরা সাবধান! তােমরা করতে মসজিদ বা ইবাদত ও নামাযের জায়গা বানিয়ে নিবেন আ। নিশ্চই আমি নিষেধ করছি এই কাজ থেকে" (সহীহ মুসলিম) নবীজি আল্লাহর কাছে এই দোয়া করেছেন, "হে আল্লাহ! আমার কবরকে পূজার বস্তু বানিয়ে দেবেননা। যাকে পূজা করা হয়।" (মুয়াত্তা মালেক)। এখান থেকে বুঝা যায় যে, সেই কালের মুশরিকদের একদল ছিল কবর পূজারী। নবীজির কারণে তারা সম্পূর্ণ রূপে কবর পূজা বাদ দিয়ে আল্লাহর খাঁটি বান্দা হয়ে যায় । কিন্তু নবীজির ইন্তাকালের অনেক বছর পর মক্কা মদিনায় কবর পূজা আরম্ভ হয়। আর এটা ছিল তুর্কি শাষণ আমলে। তখন ইউরােপের নওমুসলিম ও শিয়া মতালম্বিদের প্রভাবে মক্কা মদিনা কবর পূজা শুরু হয়। তারা মক্কা ও মদিনার প্রায় সকল পূরনো কবরকে পাকা করে পেলেন এবং কবর গুলোকে কেন্দ্র করে শুরু হয় নানা অনুষ্ঠান। কিন্তু ১৯২৫ সালে বর্তমান সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল আযীয ইবনে আব্দুর রহমান ও তার পুত্র ইবনে সৌদ (সাউদ) সকল পাকা কর ধংস করে দেন। বর্তমানে অৱবের অধিকাংশ দেশেই কবর পাকা করার প্রভাব নাই বল্লেই চলে। অনারব দেশ গুলোতে কবর পাকা করার প্ৰভাব এখনও আছে। যেমন বাংলাদেশে। এখানকার অধিকাংশ মুসলিমই কবর পূজার সাথে জড়িত। তাদের ধ্যান ধারণা সম্পূর্ণ সেই কালের মুশরিকদের মত। তারাও আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় কবর বাসীকে উসিলা হিসেবে গ্রহন করে। এবং সপ্তাহে মাসে, বছরে জিয়ারতের নামে কবরবাসির (মাজারের) নিকট যায়। তার উসিলায় আল্লাহর নিকট সাহায্যে প্রার্থনা করে তাকে খুশি করার জন্য তার কল্যাণের আশায় খাদেমকে টাকা দেয়, কবরে ফুল দেয়,কবরবাসির নামে মানত করে, কুরবানী করে, শ্রদ্ধার বশীভূত হয়ে কবরকে সামনে রেখে নামাজ আদায় করে বা সিজদা দেয় এবং কবরবাসির নিকট নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, যে ভাবে হিন্দুরা গনেশ, কালি, প্রভৃতি কাল্পনিক দেবতার মূর্তির কাছে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে, খ্রিষ্টানরা ঈসা(আঃ) (যিশু), ও মরিয়ম (আঃ) (মেরিন), এর কাল্পনিক মূর্তির কাছে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে। কি করে বুঝায়। এসব অজ্ঞ মুসলমানদের যে, কবরকে কেন্দ্র করে জিয়ারতের নামে আজ যা চলতেছে তা মুশরিকদের কাজ। মুশরিকরা তো কবর পূজা করত না। করত আল্লাহর পূজা। তারা তো কেবল কবর বাসীকে উসীলা বানাত এবং উসিলা দিয়ে আল্লাহ ও তার বান্দার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করে তথা ইবাদতে শরিক সরে মুশরিক হয়ে গেছে। বর্তমান হিন্দুরা মূর্তি পূজা করে না। তারা ভগবান তথা আল্লাহর পূজা করে। মূর্তিকে তারা উসীলা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এখান থেকে বুঝা যায় যে কবর বা মূর্তিকে উসীলা করে আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করা কবর বা মূর্তি পূজার নামান্তর। তাছাড়া এসব মুসলমান হিন্দুদের চেয়ে অধম হয়ে গেছে। কেননা হিন্দুরা মূর্তি তৈরী করে তার উসীলা ধরে, আর মুসলিম নামধারী মূর্খ লোকেরা মাটির সাথে বিলীন হয়ে যাওয়া অস্থিহীন মানুষকে উসীলা ধরে। উভয় প্রকার উসীলা ইসলামে নিষিদ্ধ উসীলা। ইসলামে বৈধ উসীলা এই যে, আল্লাহর গুণবাচক নাম, তার প্রসংশা, নিজের নেক আমল এবং নেক বান্দার উসীলা ধরা। কিন্তু এগুলাে বাদ দিয়ে মানুষ মৃত ব্যক্তির কবর স্মৃতি বিজড়িত স্থান তার ব্যবহারকৃত জিনিস পত্র ও তার ছবি ইত্যাদিকে উসীলা হিসেবে গ্রহন করছে। কিছুদিন পর হয়তো তার মূর্তি বানিয়ে! ঘরে যেখে তার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করবে। আর এভাবে আজকের কবর পূজারিরা ভবিষ্যতে মূর্তি পূজাবীতে রূপ নেবে। আর কবল মুর্তি পূজাদের মধ্যে পার্থক্য হবে এই যে, কবর পূজারীরা কবরের নিকট গিয়ে কবর বাসীকে দোয়া প্রার্থনার উসীলা বানাবে, এবং মূর্তি পূজারিরা ঘরে বসেই মূর্তিকে (মৃত ব্যক্তি) দোয়া প্রার্থনার উসীলা বানাবে। আর এই হল আমার চিন্তা ও দর্শনের পূর্বের ও বর্তমান কবর পূজারী এবং পূর্বের ও ভবিষ্যতের মূর্তি পূজারীদের যৌক্তিক দৃষ্টান্ত।, আর হিন্দুরা তো আছেই। তারা মূর্তি বা কবরবাসীর উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে যা চাই তা সত্যিই পাই। আর এ পাওয়াটা দিয়েই আল্লাহ তাদের গোমরাহির পথ প্রশস্ত করে দেয়। জেনে রাখ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা গোমরাহীর পথে টেলে দেন। আর যাকে ইচ্ছা আলাের পথে নিয়ে আসে। আমি একজন সাধারণ দায়ী। যা জানি তা অন্যকে শুনিয়ে দেওয়াই আমার কাজ। কেউ ইচ্ছে করলে তা গ্রহণ করুক এবং ইচ্ছে করলে পরিত্যাগ করুক। এ ব্যাপারে আমাকে আখিরাতে প্রশ্ন করা হবে না। আর এটা আমার কর্তব্য।
আল্লাহ সকলকে বুঝার তৌফিক দান করুক- আমিন।

kobor puja, abubakar siddiq, majar, Dorga
কবর পূজারিদের সেইকাল আর এইকাল

চিন্তা ও গবেষনায় - আবুবকর সিদ্দিক।
প্রচারেঃ প.চ, ইসলামী দওয়াহ কমিটি।
সময় ২০০৯ ইংরেজি।

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ