মুসলিম সমাজে প্রচলিত কিছু সুস্পষ্ট শির্কী আক্বিদাহ, কথা ও কাজ!


اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ لَمۡ یَلۡبِسُوۡۤا اِیۡمَانَہُمۡ بِظُلۡمٍ  اُولٰٓئِکَ لَہُمُ الۡاَمۡنُ وَ ہُمۡ مُّہۡتَدُوۡنَ
যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের (শিরকের)  সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা
"এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত
6/82-Alquran

যেসব বিশ্বাস, কথা ও কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য এমনসব বিশ্বাস, কথা ও কাজ কোন সৃষ্টির শানে প্রয়োগ করা, আল্লাহর সাথে কোন সৃষ্টির তুলনা করা এবং কোন সৃষ্টিকে আল্লাহর সত্ত্বার অংশ মনে করা শিরক। নিম্নে মুসলিম সমাজে প্রচলিত কিছু শির্কী কথা, কাজ ও বিশ্বাসের তালিকা দেওয়া হল।
 
1/ নবীজি (সাঃ) আল্লাহর নূর হতে সৃষ্ট অর্থাৎ আল্লাহর জাতে কাদিমের অংশ! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ কোন কিছুই আল্লাহর সত্ত্বার অংশ নয়। সবকিছুই আল্লাহর সৃষ্টির অংশ। এভাবে আল্লাহর অংশীদার সাব্যস্ত করা স্পষ্ট শিরক।
2/ নবীজি (সাঃ) গায়েব জানতেন! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ কোরআনে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানেনা। মুসলিমদের বিশ্বাস হলো, যে বিষয় আল্লাহ তার দিকে ন্যস্ত করেন, সে বিষয় অন্য কোন সৃষ্টির দিকে ন্যস্ত করা শিরক।
3/ নবীজি (সাঃ) হাজির নাযির! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ মুসলিমদের বিশ্বাস হচ্ছে, দুনিয়ার সবকিছুই শোনেন ও দেখেন একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহু ছামিউন বাছির। নবীজি (সাঃ) হাজির নাযির মানে তিনিও সবকিছুই শোনেন ও দেখেন! আল্লাহর এই ক্ষমতা নবীজি (সাঃ) বা অন্যকোন সৃষ্টির দিকে ন্যস্ত করা স্পষ্ট শিরক।
4/ আল্লাহর নেককার বান্দাদের শানে গাউসুল আজম (মহান সাহায্যকারী) মুশকিলে কুশা (বিপদ আপদ দূরীভূতকারী) হাজতে রওয়া (প্রয়োজন পূরণকারী) শব্দ সমূহ ব্যবহার করা! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ মুসলিমদের বিশ্বাস হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা বড় সাহায্যকারী, বিপদ আপদ দূরীভূতকারী, প্রয়োজন পূরণকারী। সুতারাং এই শব্দ ও বিশ্বাস কোন সৃষ্টির দিকে ন্যস্ত করা স্পষ্ট শিরক।
5/ আল্লাহর নেককার বান্দাদের কবরকে মাজার বানিয়ে শির্কী কাজ তথা সিজদাহ করা! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ যেকোন সচেতন মুসলিমই জানে, আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে সিজদাহ করা শিরক। অথচ কবরকে মাজার বানিয়ে সাধারণ মুসলিমদের মাঝে কবরে সিজদাহর আয়োজন করে যাচ্ছে।
6/ গাইরুল্লাহ বা মাজারের নামে মান্নত করা! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ নামাজ রোজার মতো মান্নতও একটি ইবাদত। মুসলিমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করা শিরক জানলেও এই ইবাদত মাজারের নামে করে থাকে। মাজার ব্যবসায়ী এক শ্রেণীর দুনিয়া লোভী মানুষ মাজারের নামে মান্নত করতে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। অথচ এটা স্পষ্ট শিরক।
7/ হাজত পূরণের নিয়তে গাছে সুতা বাধা! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ হাজত পূরণের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা মুসলিমদের সুন্দর একটি কর্ম। কিন্ত গাছে সুতা বাঁধা মুসলিমদের বিশ্বাস ও কর্মের পরিপন্থী। এবং এইটা একটি কুবিশ্বাস। যা হিন্দুদের থেকে আমাদের মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়েছে।
8/ তাবিজ ঝুলানো! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ হাদিসে কোন কিছু শরীরে ঝুলানোকে শিরক বলা হয়েছে। তাছাড়া ইহা আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাসের পরিপন্থী কাজ।
9/ কবরবাসির কাছে সরাসরি বা উসীলা দিয়ে দোয়া করা। (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ ইসলামে নামাজ রোজার মতো দোয়াও ইবাদত। এই দোয়া কোনরকম মাধ্যম ছাড়াই আল্লাহর নিকট করতে হবে।
10/ আল্লাহর নেককার বান্দাদের সুপারিশকারী ও রক্ষাকারী মনে করা! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ এই জাতীয় বিশ্বাস মানুষদের শিরকের দিকে ধাবিত করে। অর্থাৎ মানুষ আল্লাহকে ছাড়া যাদের সুপারিশকারী ও রক্ষাকারী মনে করে তাদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য তাদের বন্দেগী শুরু করে দেয়।
11/ ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইয়া হাবিবাল্লাহ বলে নবীজি সাঃ কে সম্বোধন করা! (নাউযুবিল্লাহ)
সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ মুসলিমদের বিশ্বাস যদি হয়, যে কাজ কোন মানুষের দ্বারা সম্ভব নয় কেবল আল্লাহর দ্বারা সম্ভব। তাহলে তাদের উচিত সে কাজের জন্য  কেবল আল্লাহকে স্বরণ করা আর কাউকে নয়। 
বিঃদ্রঃ শিয়া ও বেরলভী বা সুফি মতবাদের কথিত সুন্নীদের অধিকাংশ লোকই কোননা কোন ভাবে উপরোক্ত শির্কী আক্বিদাহ, আমল ও কথাই লিপ্ত। যেহেতু ইসলামে শিরক একটি জগন্যতম অপরাধ বা পাপ হিসেবে বিবেচিত, সেহেতু শিরকে লিপ্ত ইমামের ইমামতিতে জামাতে সালাত আদায় ইসলামে বৈধ নয়। তাদের মৃত্যুর পর তাদের জানাযাও বৈধ নয়।

=> শির্ক ক্ষমার অযোগ্য একটি অপরাধ। এই বিষয়ে কোরআনে বর্ণিত কিছু আয়াত নিচে উল্লেখ করা হলঃ
"নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে অবশ্যই মহাপাপ রচনা করে। ৪/৪৮ "নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন। আর যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে তো ঘোর পথভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হল"। ৪/১১৬ "নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে এবং যুলম (শিরক) করেছে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না এবং তাদেরকে কোন পথ দেখাবেন না"। ৪/১৬৮

Shirk, শিরক, শির্ক, Share with God, aqida, বিশ্বাস,  ঈমান।
মুসলিম সমাজে প্রচলিত কিছু সুস্পষ্ট শিরক।

লেখকঃ আবুবকর সিদ্দিক। ধর্মীয় লেখক ও ব্লগার। 09/01/2022

Tag: শিরক, ঈমান, তাওহিদ, আল্লাহ, মহাপাপ। 

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ