সৌদি আলেমদের মানহাজ ও মতবিরোধ দূর করার সহজ উপায়।


সৌদি আলেমদের মানহাজ ও মতবিরোধ কমানোর সহজ উপায়!

মতবিরোধ, মতবাদ, Saudi Arabia, Islam salafi

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

সৌদি আরব! পৃথিবীর মুসলিম দাবিদার সকল মানুষের জন্য এই দেশটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ এই দেশেই মুসলিমদের দুটি পবিত্র স্থান মক্কা ও মদিনা অবস্থিত। নবীজি ﷺ এর ইন্তাকালের দীর্ঘ সময় পরও যে দেশটিতে এখনও ইসলামী অনুশাসন চলে। এই দেশের সব নিয়ম কানুন যে পুরোপুরিই ইসলাম ধর্মের আইন অনুসারে চলে সেটা বলবনা। যেটা বলব তা হল, পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশের তুলনায় এই দেশে এখনও রক্ষণশীল ও ইসলামি ভাবধারা বিদ্যমান। মাঝে মধ্যে ফেসবুক, ইউটিউব তথা সোসাইল মিডিয়ায় এই দেশ সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা দেখতে ও শোনতে পাই। তা দিয়ে সৌদি আরবকে বিবেচনা করলে সেটা হবে ভুল। এর কিছু সত্য হলেও বলব, পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশের তুলনায় এই দেশ এখনও ইসলামিক হুকুমত অনুসারে চলে। এই হলো সৌদি আরবের শাষণকার্যের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। এবার আসি সৌদি আলেমদের মানহাজ সম্পর্কে জানি। মানহাজ আরবি শব্দ যার অর্থ দৃষ্টিভঙ্গি।
ইসলামি বিশ্বাস ও ইবাদত পদ্ধতির ক্ষেত্রে বর্তমান সৌদি আলেমরা সালফে সালেহীনদের অনুসরণ করে থাকেন। সালফে সালেহীন বলতে নবীজি ﷺ এর পরবর্তি তিন যুগের আলেমগণদের বুঝানো হয়। সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈ। এই তিন যুগের মানুষ গুলোই সালফে সালেহীন। এই তিন যুগের মানুষদের বিষয়ে  ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ يَجِيءُ أَقْوَامٌ تَسْبِقُ شَهَادَةُ أَحَدِهِمْ يَمِينَهُ، وَيَمِينُهُ شَهَادَتَهُ
“সর্বোত্তম যুগ হল আমার (সাহাবীদের) শতাব্দী। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেয়ীদের) শতাব্দী। অতঃপর তৎপরবর্তী (তাবেতাবেয়ীনদের) শতাব্দী। অতঃপর এমন সম্প্রদায়ের আগমন ঘটবে, যাদের একজনের কসমের আগে সাক্ষি হবে, আবার সাক্ষির আগে কসম হবে।” (শব্দাবলী বুখারীর) (বুখারী ২৯৫২, মুসলিম ২৫৩৩)
এ আয়েশা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা) কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী ﷺ-কে জিজ্ঞাসা করল, কোন লোকেরা সর্বশ্রেষ্ঠ? উত্তরে তিনি বললেন, “আমি যে শতাব্দীতে আছি (তার লোকেরা)। অতঃপর দ্বিতীয়, অতঃপর তৃতীয়।” (সহীহ মুসলিম ২৫৩৬নং)। এই হাদিস গুলো সৌদি আলেমদের সালফে সালেহীনদের থেকে কোরআন ও হাদিসের বুঝ গ্রহণ করতে উৎসাহিত করে।  সাহাবীদের মধ্য কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখতে ফেলে তারা কোরআন ও হাদিসের দিকে ফিরে যায় এবং তাবেঈ ও তাবে তাবেঈদের মধ্য কোন বিষয়ে মতবিরোধ দেখতে ফেলে তারা (সৌদি আলেমগণ) সাহাবীদের দিকে ফিরে যায়। অর্থাত তারা কোরআন ও হাদিসকে সাহাবীদের বুঝ অনুসারে গ্রহণের চেষ্টা করেন। এইভাবেই তারা কোরআন হাদিস বুঝার ও মানার জন্য সালফে সালেহীনদের অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। এই কারণেই দেখা যায়, হাদিসে তারাবীর সালাত 8 রাকাতের উল্লেখ থাকলেও তারা (সৌদি আলেমগণ) 20 রাকাত আদায় করাকে পছন্দ করেন।
আমাদের উপমহাদেশ তথা পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মুসলিমদের ধর্মীয় মানহাজ সালাফি না হওয়ায় সৌদি আলেমদের সাথে তাদের মতবিরোধ দেখা যায়। যার কারণ আমরা এমন অনেক আমলই করি যা সাহাবীদের যুগে প্রচলন ছিলনা। কিন্তু তাবেঈ বা তাবে তাবেঈ বা ইমামদের কেউ করেছে, অথবা কোন আলেম বা পীর করেছে সেটা থেকেই আমরা দলিল গ্রহণ করি। কিন্তু সৌদি আলেমগণ সেটা সাহাবীদের মধ্য প্রচলন ছিল কিনা তা দেখেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেমনঃ শবে বরাত উদযাপন সাহাবীদের কেউ করিনি তাই তারা শবে বরাত উদযাপন করাকে বিদআত বলে। অন্যদিকে যারা শবে বরাত  উদযাপন করে তারা তাবেঈ বা তাবে তাবেঈদের বা ইমামদের থেকে দলিল গ্রহণ করেন যেটা নিয়ে তাদের মাঝেও মতবিরোধ ছিল। অতঃপর আমার মনে হয়, আমাদের সকল মুসলিমদের উচিত সাহাবী, তাবেঈ ও তাবে তাবেঈদের মতো করেই কোরআন হাদিসের বুঝ গ্রহণ করা। এতে যেমন পথভ্রষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে ঠিক তেমনি মুসলিমদের মাঝে মতবিরোধও কমে আসবে।
পরিশেষে কোরআনের একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াত দিয়েই সংক্ষিপ্ত লেখা শেষ করলাম।
মহান আল্লাহ বলেছেন,
وَمَن يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِن بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَىٰ وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّىٰ وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ ۖ وَسَاءَتْ مَصِيرًا
“আর যে ব্যক্তি তার নিকট সৎপথ প্রকাশ হওয়ার পর রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করবে এবং মুমিনদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরণ করবে, তাকে আমি সেদিকেই ফিরিয়ে দেব, যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় এবং জাহান্নামে তাকে দগ্ধ করব। আর তা কত মন্দ আবাস!” (আলকোরান, সূরা নিসা, আয়াত ১১৫) (20/03/2022)
=> আমার সকল ভাল কাজই আল্লাহর জন্য।
আমার আরও লেখা পড়তে ব্লগে ভিজিট করুন: www.abubakarnetwork.blogspot.com

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ