দাড়ি রাখার সঠিক নিয়ম কি?

বহু মুসলিম ভাই আছেন, যারা ইসলামকে ভালভাবে উপলব্ধি করার বাস্তব জীবনে ইসলাম মেনে চলা শুরু করেছেন। পাঁচ ওয়াক্ত সালাত দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছেন। দাড়ি রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি করে দাড়ি রাখাও শুরু করেছেন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনেক মুসলিম ভাই-ই দাড়ি রাখার সঠিক পদ্ধতিটি জানেন না। ফলে তারা দাড়ি রাখতে গিয়ে অনেক ভুল পদ্ধতিতে জড়িয়ে পরেন। সেগুলো হচ্ছে- দাড়ি ছাটাই করে রাখা, দাড়ি সমান করে রাখা, গালের উপরে ক্ষুর চাঁছাই করা, গোঁফ ক্ষুর দিয়ে চাঁছাই করা ইত্যাদি। দাড়ির ব্যাপারে রাসূল (ছাঃ)-এর স্পষ্ট নির্দেশ হ’ল, তোমরা দাড়ি ছেড়ে দাও ও গোঁফ ছাটো এবং মুশরিকদের বিপরীত কর’ (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪২১)। আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) বলেছেন- তোমরা মুশরিকদের বিপরীত কর, দাড়ি বাড়াও এবং গোফ ছোট কর। [সহিহ বুখারী, ৯ম খন্ড, পোশাক অধ্যায়, হাদিস-৫৪৭৩] এরকম আরো বহু হাদিস রয়েছে যেখানে আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) বলেছেন দাড়ি ছেড়ে দাও, দাড়ি বাড়াও, দাড়ি লম্বা কর। পক্ষান্তরে দাড়ি ছাঁটাই করার কোন প্রমান নেই, একটি ছাড়া। সেটি হল- আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হজের মৌসুমে দাড়ি মুট করে ধরে নিচের অতিরিক্ত অংশটুকু কেটে ফেলতেন। [সহিহ বুখারী, ৯ম খন্ড, পোশাক অধ্যায়, হাদিস-৫৪৭২] এই হাদিস গুলো থেকে স্পস্টকরে প্রমানিত হয় যে দাড়ি বাড়াতে হবে অর্থাৎ বড় রাখতে হবে। উপরে-নিচে ছাঁটাই করা যাবে না। তাই কেউ যদি একান্তই দাড়ি ছোট করতে চায় তবে সেটা এক মুষ্টির পরে। তাই কেউ যদি দাড়ি রাখার পর কাট-ছাঁট করে রাখে তাহলে আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ)-এর অনুসরণ করল না। দাড়িকে কাট-ছাঁট করা সুন্নাত নয়। বরং এটি সুন্নাতের বিপরীত। *** দাড়িকে এভাবে কাট-ছাঁট করে রাখা বিদআত। **** চিন্তা করে দেখুন, কোন ভাই দাড়ি রাখছে নেকির জন্য। অথচ সে কোন নেকিই পাবে না। কেউ যদি দাড়িকে কাট-ছাঁট করে বলে যে, আমি সুন্নাত পালন করছি, তাহলে সেটা হবে মিথ্যা কথা, কারন আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) এমন দাড়ি রাখেন নি, সাহাবাগনও এমন ছাঁটাই করা দাড়ি রাখেন নি। তাই সে ধরণের ছাঁটাই করা রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত নয়, রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত নয় সেটাকে জোর করে সুন্নাত বলা মহা অন্যায়। আমি সকলকে আহ্বান করব, আসুন আমরা সবাই আল্লাহ্র রাসুল (সাঃ) এর আসল সুন্নাতের অনুসরণ করি। দাড়ি সম্পর্কে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা দরকারঃ দাড়ি অথবা চুল পেকে সাদা হয়ে গেলে সেটাকে সাদা রাখা নিষেধ। সেটাকে সাদা না রেখে কালো রং ব্যতীত অন্য যে কোন রং দ্বারা রাঙিয়ে ফেলতে হবে। রাসুল (সাঃ) বলেনঃ ইয়াহুদ ও নাসারারা (চুল ও দাড়িতে) রং লাগায় না। সুতরাং তোমরা তাদের বিপরীত করবে। (সহিহ বুখারী, ৯ম খন্ড, পোশাক অধ্যায়, হাদিস নং ৫৪৭৮) তাই এটা খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ। দাড়ি অথবা চুল পেকে সাদা হয়ে গেলে সেটাকে সাদা না রেখে কালো রং ব্যতীত অন্য যে কোন রং দ্বারা রাঙিয়ে ফেলতে হবে। উল্লেখ্য যে কালো রং কোনমতেই লাগানো যাবে না। কেননা কালো রং লাগানো কিয়ামতের আলামত। নাবী (সাঃ) বলেছেন-শেষ যামানায় একদল লোকের আবির্ভাব হবে যারা সাদা চুল-দাড়ি কালো রঙ দিয়ে রাঙাবে। তারা জান্নাতের গন্ধও পাবে না। (আবু দাউদ, পৃষ্ঠা-৮৪) এইক্ষেত্রে বর্তমান মুসলিমরা কোন পরোয়া করে না। তারা হয় চুল- দাড়ি সাদাই রেখে দেয় নতুবা কালো রঙ দিয়ে কলপ করে। অথচ দুটোই হারাম। তাই আমরা দাড়ি সাদা হয়ে গেলে মেহেদী বা অন্য কোন রং দিয়ে রাঙিয়ে ফেলব এবং সুন্নাতের উপর আমল করব ইন-শা- আল্লাহ। আর মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাব গুলো সকলের জেনে রাখা উচিৎ, যাতে সে এগুলোর উপরেও আমল করতে পারেঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম - কে বলতে শুনেছি মানুষের ফিদরাদ (প্রকৃতিগত স্বভাব) পাঁচটি: ১. খাতনা করা। ২. (নাভিড় নীচে লোমে) ক্ষুর ব্যবহার করা, ৩. গোঁফ ছোট করা। ৪. নখ কাটা। ৫. বোগলের পশম কেটে ফেলা। (সহিহ বুখারী, ৯ম খন্ড, পোশাক অধ্যায়, হাদিস নং ৫৪৭১)

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ