প্রশ্ন: ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা, নফল, মুস্তাহাব, মাকরুহ ইত্যাদির শ্রেণী বিন্যাস কিভাবে হলো?
আবদুস শহীদ নাসিম
--------------------
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। দয়া করে আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাযাকাল্লাহু খাইরান। শরিয়তের আদেশ-নিষেধের শ্রেনীবিন্যাস রয়েছে,
যেমন: ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা, নফল, মুস্তাহাব, মাকরুহ ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো
১. এগুলো কি রসূলের সা. সময়েই এভাবে বিন্যাস করা হয়েছিল? যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার সপক্ষে কোনো দলিল আছে কি?
২. যদি রসূলুল্লাহ সা.-এর সময়ে না হয়ে পরে
হয়ে থাকে, তাহলে কার সময়ে, কোন অবস্থার
প্রেক্ষাপটে তা হয়েছিল?
৩.রসূলুল্লাহ সা.এর পরবর্তীতে হয়ে থাকলে তা কি কুরআন-হাদীসের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করা ঈমাণের দাবী? উত্তর হ্যাঁ হলে, কোন দলিলের ভিত্তিতে।
৪. এসব শ্রেনীবিন্যাসের মধ্যে কোনটি করলে বা না করলে কি পরিমাণ গুণাহ হবে এবং কোনটি করলে বা না
করলে গুণাহ হবে না, এসব কিসের ভিত্তিতে কে ঠিক করে দিয়েছেন? এর সপক্ষে দলিল কি?
@ Abdullahil Amman Azmi
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনার প্রশ্নের জবাব নিম্নে প্রদত্ত হলো:
০১. বিন্যাস কখন কিভাবে হয়েছে কি? রসূল সা. শরিয়তের বিধানসমূহ যে ধরনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
দিয়ে নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবীগণকে পালন করতে বলেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, তারই ভিত্তিতে
হাদিস থেকে শরিয়তের বিধানসমূহের কয়েকটি স্তর স্বতঃই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। সেগুলো হলো:
১. মুবাহ (উন্মুক্ত/ বৈধ)।
২. ওয়াজিব (ফরয)।
৩. মানদূব (নফল)।
৪. হারাম (নিষিদ্ধ)।
৫. মাকরূহ (অপছন্দনীয়)।
সাহাবায়ে কিরামের নিকট শরিয়তের বিধান এরকমই ছিল। হানাফি মযহাব ছাড়া বাকি সব মযহাবে
শরিয়তের বিধান এভাবেই আছে। তবে হানাফি মযহাবে মানদূব এবং মাকরূহকে ভাগ করা হয়েছে। সুতরাং হানাফি মযহাবে বিধান সমূহের বিভক্তি নিম্নরূপ:
১. মুবাহ।
২. ফরয।
৩. ওয়াজিব (এখানে ওয়াজিব মানদুবের অন্তরভুক্ত, ফরয নয়)।
৪. সুন্নতে মুয়াক্কাদা (মানদুবের অন্তরভুক্ত)।
৫. সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা (মানদুবের অন্তরভুক্ত। এর মধ্যে নফল মুস্তাহাবও রয়েছ)।
৬. হারাম
৭. মাকরূহ তাহরিমি (মূলত মাকরুহ)।
৮. মাকরূহ তানযিহি (মূলত মাকরুহ)।
০২. মুবাহর দলিলঃ স্বয়ং কুরআন মজিদ থেকে এবং রসূলুল্লাহ সা. -এর আমল থেকেই উপরোক্ত পাঁচ প্রকার বিন্যাস জানা যায়। কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, জমিনের সবকিছুই তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। হাদিসে উল্লেখ হয়েছে, আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূল যা কিছু হারাম করেছেন, তাছাড়া বাকি সব কিছুই মুবাহ বা হালাল।
০৩. ফরযের দলিলঃ ফরয (আবশ্যিক) বিষয়গুলোও কুরআনে এবং হাদিসে উল্লেখ হয়েছে। যেমন বলা
হয়েছে-সালাত কয়েম করো। অমুক অমুক সময় সালাত কায়েম করো। যাকাত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে
এবং যাকাত কারা পাবে তাও বলে দেয়া হয়েছে। রমযান মাস পেলেই রোযা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নামাযের জন্যে অযু করতে এবং অপবিত্র হলে গোসল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রসূল সা. কার্যত আবশ্যিকভাবে পালন করে এগুলো এবং অনুরূপ অন্যান্য নির্দেশনাবলি যে ফরয তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
০৪. ফরযের বাইরে বাকি সবই মানদূব। রসূলুল্লাহ সা. ফরযের অতিরিক্ত যেসব ইবাদত নিজে করেছেন এবং
সাহাবীগণকে করতে উৎসাহিত করেছেন, সেগুলোই মানদূব। যেমন: রসূল সা. ফরযের আগে পরে অতিরিক্ত
নামায পড়েছেন, অন্যান্য সময়ও পড়েছেন, সাহাবীগণকেও উৎসাহিত করেছেন। যাকাত ছাড়াও নিজে দান করেছেন, সাহাবীগণকেও দান করতে উৎসাহিত করেছেন। নিজে শাওয়াল মাসে ৬টি, প্রতিমাসের ১৩-১৫ তারিখে, আশুরায়, সোম ও বৃহস্পতিবারে রোযা রেখেছেন এবং সাহাবীগণকে উৎসাহিত করেছেন। অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও অনুরূপ করেছেন।
এভাবে, কুরআন এবং হাদিসে ব্যাপকভাবে ফরয ছাড়াও মানদূব বা নফল ইবাদতের নির্দেশনা এসেছে।
০৫. পরবর্তীতে হানাফি মযহাবে মানদূবকে ভাগ করা হয়েছে যৌক্তিক কারণে। এটা করা হয়েছে, যেহেতু সাধারণ মুসলিমগণের সবার পক্ষে সব হাদিস পড়ে প্রতিটি বিষয়ের গুরুত্ব আলাদা আলাদাভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব ছিলনা সে কারণে। এর ফলে রসূল (সা) মানদূব বা নফল ইবাদত সমূহের কোনটির প্রতি কতোটা গুরুত্বারোপ করেছিলেন, সাধারণ মুসলিমগণ তা সহজেই বুঝতে পারছেন। অবশ্য বাস্তবে এগুলো সবই মানদুবের অন্তরভুক্ত। আর রসূল সা আমল করেছেন বা অনুমোদন দিয়েছেন বলে সব মানদুব ইবাদতই সুন্নত।
০৬. সুতরাং ফরযকে ফরযের গুরুত্ব দিতে হবে, আর মানদূবকে মানদূবের গুরুত্ব দিতে হবে। হারামকে হারামের এবং মাকরূহকে মাকরূহের গুরুত্ব দিতে হবে। সাহাবীগণ এভাবেই আমল করেছেন। আমাদেরও এভাবেই আমল করা উচিত।
০৭. মানদুব ইবাদতগুলির কোনটি ছুটে গেলে গুনাহ হবে কিনা তা উল্লেখ হয়নি। তবেঃ
০ক. ফরয নয় এমন বিষয়গুলোকেও তাচ্ছিল্য করলে গুনাহ হবে।
০খ. মানদুব ইবাদতগুলি ফরযের ত্রুটিবিচ্যুতি মুছে দিয়ে ফরযের পূর্ণতা দান করে।
---------------------
২৮.০৬.২০১৬ খ্রি.
--------------------
প্রশ্ন: আসসালামু আলাইকুম। দয়া করে আমার প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে বাধিত করবেন।
জাযাকাল্লাহু খাইরান। শরিয়তের আদেশ-নিষেধের শ্রেনীবিন্যাস রয়েছে,
যেমন: ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা, নফল, মুস্তাহাব, মাকরুহ ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো
১. এগুলো কি রসূলের সা. সময়েই এভাবে বিন্যাস করা হয়েছিল? যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার সপক্ষে কোনো দলিল আছে কি?
২. যদি রসূলুল্লাহ সা.-এর সময়ে না হয়ে পরে
হয়ে থাকে, তাহলে কার সময়ে, কোন অবস্থার
প্রেক্ষাপটে তা হয়েছিল?
৩.রসূলুল্লাহ সা.এর পরবর্তীতে হয়ে থাকলে তা কি কুরআন-হাদীসের চেয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করা ঈমাণের দাবী? উত্তর হ্যাঁ হলে, কোন দলিলের ভিত্তিতে।
৪. এসব শ্রেনীবিন্যাসের মধ্যে কোনটি করলে বা না করলে কি পরিমাণ গুণাহ হবে এবং কোনটি করলে বা না
করলে গুণাহ হবে না, এসব কিসের ভিত্তিতে কে ঠিক করে দিয়েছেন? এর সপক্ষে দলিল কি?
@ Abdullahil Amman Azmi
জবাব: ওয়ালাইকুমুস সালাম। আপনার প্রশ্নের জবাব নিম্নে প্রদত্ত হলো:
০১. বিন্যাস কখন কিভাবে হয়েছে কি? রসূল সা. শরিয়তের বিধানসমূহ যে ধরনের গুরুত্ব ও মর্যাদা
দিয়ে নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবীগণকে পালন করতে বলেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, তারই ভিত্তিতে
হাদিস থেকে শরিয়তের বিধানসমূহের কয়েকটি স্তর স্বতঃই সুস্পষ্ট হয়ে যায়। সেগুলো হলো:
১. মুবাহ (উন্মুক্ত/ বৈধ)।
২. ওয়াজিব (ফরয)।
ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা, নফল, মুস্তাহাব, মাকরুহ ইত্যাদির শ্রেণী বিন্যাস |
৩. মানদূব (নফল)।
৪. হারাম (নিষিদ্ধ)।
৫. মাকরূহ (অপছন্দনীয়)।
সাহাবায়ে কিরামের নিকট শরিয়তের বিধান এরকমই ছিল। হানাফি মযহাব ছাড়া বাকি সব মযহাবে
শরিয়তের বিধান এভাবেই আছে। তবে হানাফি মযহাবে মানদূব এবং মাকরূহকে ভাগ করা হয়েছে। সুতরাং হানাফি মযহাবে বিধান সমূহের বিভক্তি নিম্নরূপ:
১. মুবাহ।
২. ফরয।
৩. ওয়াজিব (এখানে ওয়াজিব মানদুবের অন্তরভুক্ত, ফরয নয়)।
৪. সুন্নতে মুয়াক্কাদা (মানদুবের অন্তরভুক্ত)।
৫. সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা (মানদুবের অন্তরভুক্ত। এর মধ্যে নফল মুস্তাহাবও রয়েছ)।
৬. হারাম
৭. মাকরূহ তাহরিমি (মূলত মাকরুহ)।
৮. মাকরূহ তানযিহি (মূলত মাকরুহ)।
০২. মুবাহর দলিলঃ স্বয়ং কুরআন মজিদ থেকে এবং রসূলুল্লাহ সা. -এর আমল থেকেই উপরোক্ত পাঁচ প্রকার বিন্যাস জানা যায়। কুরআন মজিদে বলা হয়েছে, জমিনের সবকিছুই তোমাদের জন্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। হাদিসে উল্লেখ হয়েছে, আল্লাহ এবং আল্লাহর রসূল যা কিছু হারাম করেছেন, তাছাড়া বাকি সব কিছুই মুবাহ বা হালাল।
০৩. ফরযের দলিলঃ ফরয (আবশ্যিক) বিষয়গুলোও কুরআনে এবং হাদিসে উল্লেখ হয়েছে। যেমন বলা
হয়েছে-সালাত কয়েম করো। অমুক অমুক সময় সালাত কায়েম করো। যাকাত দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে
এবং যাকাত কারা পাবে তাও বলে দেয়া হয়েছে। রমযান মাস পেলেই রোযা রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নামাযের জন্যে অযু করতে এবং অপবিত্র হলে গোসল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রসূল সা. কার্যত আবশ্যিকভাবে পালন করে এগুলো এবং অনুরূপ অন্যান্য নির্দেশনাবলি যে ফরয তা দেখিয়ে দিয়ে গেছেন।
০৪. ফরযের বাইরে বাকি সবই মানদূব। রসূলুল্লাহ সা. ফরযের অতিরিক্ত যেসব ইবাদত নিজে করেছেন এবং
সাহাবীগণকে করতে উৎসাহিত করেছেন, সেগুলোই মানদূব। যেমন: রসূল সা. ফরযের আগে পরে অতিরিক্ত
নামায পড়েছেন, অন্যান্য সময়ও পড়েছেন, সাহাবীগণকেও উৎসাহিত করেছেন। যাকাত ছাড়াও নিজে দান করেছেন, সাহাবীগণকেও দান করতে উৎসাহিত করেছেন। নিজে শাওয়াল মাসে ৬টি, প্রতিমাসের ১৩-১৫ তারিখে, আশুরায়, সোম ও বৃহস্পতিবারে রোযা রেখেছেন এবং সাহাবীগণকে উৎসাহিত করেছেন। অন্যান্য ইবাদতের ক্ষেত্রেও অনুরূপ করেছেন।
এভাবে, কুরআন এবং হাদিসে ব্যাপকভাবে ফরয ছাড়াও মানদূব বা নফল ইবাদতের নির্দেশনা এসেছে।
০৫. পরবর্তীতে হানাফি মযহাবে মানদূবকে ভাগ করা হয়েছে যৌক্তিক কারণে। এটা করা হয়েছে, যেহেতু সাধারণ মুসলিমগণের সবার পক্ষে সব হাদিস পড়ে প্রতিটি বিষয়ের গুরুত্ব আলাদা আলাদাভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব ছিলনা সে কারণে। এর ফলে রসূল (সা) মানদূব বা নফল ইবাদত সমূহের কোনটির প্রতি কতোটা গুরুত্বারোপ করেছিলেন, সাধারণ মুসলিমগণ তা সহজেই বুঝতে পারছেন। অবশ্য বাস্তবে এগুলো সবই মানদুবের অন্তরভুক্ত। আর রসূল সা আমল করেছেন বা অনুমোদন দিয়েছেন বলে সব মানদুব ইবাদতই সুন্নত।
০৬. সুতরাং ফরযকে ফরযের গুরুত্ব দিতে হবে, আর মানদূবকে মানদূবের গুরুত্ব দিতে হবে। হারামকে হারামের এবং মাকরূহকে মাকরূহের গুরুত্ব দিতে হবে। সাহাবীগণ এভাবেই আমল করেছেন। আমাদেরও এভাবেই আমল করা উচিত।
০৭. মানদুব ইবাদতগুলির কোনটি ছুটে গেলে গুনাহ হবে কিনা তা উল্লেখ হয়নি। তবেঃ
০ক. ফরয নয় এমন বিষয়গুলোকেও তাচ্ছিল্য করলে গুনাহ হবে।
০খ. মানদুব ইবাদতগুলি ফরযের ত্রুটিবিচ্যুতি মুছে দিয়ে ফরযের পূর্ণতা দান করে।
---------------------
২৮.০৬.২০১৬ খ্রি.
Comments
Post a Comment