সাফায়াত নিয়ে প্রচলিত বিভ্রান্তির সমাধান! شفاعة

সাফায়াত (شفاعة) একটি আরবি শব্দ যার বাংলা অর্থ হচ্ছে সুপারিশ বা সুপারিশ করা এবং ইংরেজীতে Intercession or Recommend. ইসলাম অনুসারে আল্লাহর অনুমতিক্রমে মৃত্যুর পরে বিচার দিবসে পুণ্যবান কর্তৃক কিছু কিছু পাপি বা গুণাহগারদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা বা সুপারিশ করাকে বুঝায়। এই সাফায়াত নিয়ে মুসলিম সমাজে অনেক বিভ্রান্তি প্রচলিত আছে। যেমন খ্রিস্টানদের মাঝে বিদ্যমান আছে। খ্রিস্টানদের মতে যীশু খ্রীষ্ট তথা হযরত ঈসা (আ:) ক্রুস বিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে তার অনুসারীর সকল পাপের বোঝা তিনি নিজেই বহন করে নিয়েছে। এই বিশ্বাসের কারণে অনেক নিয়ম মানা খ্রিষ্টানও বিভিন্ন পাপে লিপ্ত হয়। একই ভাবে অনেক মুসলিমও বিশ্বাস করে যে, যতোই পাপ করিনা কেন, কিয়ামতের মাঠে নবীজি (সা:) তাদের রক্ষা করবে, তাদের জন্য সাফায়াত করবে!! মূলত এই কুবিশ্বাস তাদের অনেক পাপে লিপ্ত করে। যেমন, কিছু দিন আগে আমি আমার এক মামার সাথে কথা বলতেছি। তখন সে নিজেকে অনেক পাপ থেকে মুক্ত থাকার কথা বলে। যেমন, অন্যের হক নষ্ট করা, আত্বসাৎ করা। কিন্তু তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি, নামাজ পড়েন না কেন? উত্তরে সে আমাকে বলল, "নামাজ পড়া ভাল, কিন্তু না পড়লেও সমস্যা নাই, কারণ নবীজি (সা:) আমাদের জন্য সুপারিশ করবে। তিনি তার উম্মতদের ছেড়ে জান্নাতে যাবেনা" এই রকম কথা আমার এক বন্ধু প্রায় বলত। দেখুন সাফায়াত বিষয়ে তাদের কি আজিব ধারণা! কেউ কেউ এটাও বিশ্বাস করে যে, শুধু নবীজি (সা:) নয়, তাদের পীর বুজুর্গরাও হাশরের ময়দানে বিপদের সময়ে তাদের জন্য সাফায়াত করবে। এই জন্য তারা ভাল কাজ করুক বা না করুক। সপ্তাহ বা মাসে মাজারে ঠিকই হাজিরা দেয়। মূলত তাদের মধ্যে এমন কুবিশ্বাসের মূল কারণ সাফায়াত নিয়ে কুরান কি বলে সে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান না থাকা। তাদের যারা শিক্ষা দেয় তারাও এই বিষয়ে সঠিক ধারণা না রাখা। যদি রাখত, তবে এই সাধারণ মুসলিমদের মাঝে এমন ধারণা কিছুতেই জন্মাত না। আসুন জেনে নিই, সাফায়াত নিয়ে কুরানের শিক্ষা কি বা কুরান কি বলে!! ইসলাম এমন একটি ধর্ম যে ধর্মে কারও পাপের বোঝা অন্য কেউ বহন করবেনা এমন সুস্পষ্ট বিশ্বাসের শিক্ষা দেয়। যে পাপ করবে কেবল সেই তার ফল ভোগ করবে। এটাই ইসলামের শিক্ষা। এতে করে মানুষ যেমন পাপ থেকে নিভৃত হবে, ঠিক তেমনি পরনির্ভরতা বাদ দিয়ে মানুষ নিজেই ভাল কাজ করবে। আমি পাপ করে বাবার উসীলায় মাফ পাবো, নবীর উসীলায় মাফ পাবো, অমুক তমুকে আমাকে সাহায্য করবে, সুপারিশ করবে। ইসলামে এমন বিশ্বাস বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়। আল্লাহ বলেন, وَٱتَّقُواْ يَوۡمٗا لَّا تَجۡزِي نَفۡسٌ عَن نَّفۡسٖ شَيۡـٔٗا وَلَا يُقۡبَلُ مِنۡهَا شَفَٰعَةٞ وَلَا يُؤۡخَذُ مِنۡهَا عَدۡلٞ وَلَا هُمۡ يُنصَرُونَ "আর সে দিনের ভয় কর, যখন কেউ কারও সামান্য উপকারে আসবে না এবং তার পক্ষে কোন সুপারিশও কবুল হবে না; কারও কাছ থেকে ক্ষতিপূরণও নেয়া হবে না এবং তারা কোন রকম সাহায্যও পাবে না" (Al-Baqarah, Ayah 48) وَٱتَّقُواْ يَوۡمٗا لَّا تَجۡزِي نَفۡسٌ عَن نَّفۡسٖ شَيۡـٔٗا وَلَا يُقۡبَلُ مِنۡهَا عَدۡلٞ وَلَا تَنفَعُهَا شَفَٰعَةٞ وَلَا هُمۡ يُنصَرُونَ "তোমরা ভয় কর সেদিনকে, যে দিন এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি বিন্দুমাত্র উপকৃত হবে না, কারও কাছ থেকে বিনিময় গৃহীত হবে না, কার ও সুপারিশ ফলপ্রদ হবে না এবং তারা সাহায্য প্রাপ্ত ও হবে না" (Al-Baqarah, Ayah 123) يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَنفِقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰكُم مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خُلَّةٞ وَلَا شَفَٰعَةٞۗ وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ "হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদেরকে যে রুযী দিয়েছি, সেদিন আসার পূর্বেই তোমরা তা থেকে ব্যয় কর, যাতে না আছে বেচা-কেনা, না আছে সুপারিশ কিংবা বন্ধুত্ব। আর কাফেররাই হলো প্রকৃত যালেম" (Al-Baqarah, Ayah 254) وَأَنذِرۡهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡأٓزِفَةِ إِذِ ٱلۡقُلُوبُ لَدَى ٱلۡحَنَاجِرِ كَٰظِمِينَۚ مَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ حَمِيمٖ وَلَا شَفِيعٖ يُطَاعُ "আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পাপিষ্ঠদের জন্যে কোন বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে" (Ghafir, Ayah 18) উপরোক্ত আয়াত গুলো এটাই বলছে যে, সেদিন কারও (বন্ধু, মা-বাবা, পীর, নবী) সুপারিশ পাবে এ আশায় বসে থাকলে চলবেনা, বরং নিজেকে সেদিন আসার আগেই প্রস্তুত করে নিতে হবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেদিন যদি কেউ কারও কাজে কেউ না আসে। এবং সবাইকে যদি নিজ নিজ নেক আমল দিয়ে জান্নাতে যেতে হয়, তবে ইসলামে সাফায়াতের বিষয়টি আসল কেন? হ্যা এই প্রশ্নের যুক্তি আছে, কিন্তু ইসলাম এমন একটি ধর্ম যেখানে সবার সকল কর্মের হিসাব দিতে হবে এবং এর ফলও ভোগ করতে হবে। আবার আল্লাহ তার দয়া ও অনুগ্রহের পথও উন্মুক্ত রেখেছে। যাতে তিনি তাদের সাহায্য করতে পারেন তাদের, যারা ছোট গুনাহে লিপ্ত থাকলেও বড গুনাহ থেকে মুক্ত ছিল অথবা এমন কোন সওয়াবের কাজ করেছিল যা দ্বারা আল্লাহ খুব বেশি খুশি হয়েছেন। তারপরও অন্যান্য গুনাহের ধরুন জাহান্নাম নিশ্চিত হয়ে গেছে। হয়তো এরূপ জাহান্নামিদের জন্য সাফায়াতের পথ উন্মুক্ত রেখেছে। (প্রকৃত ব্যপার আল্লাহু আলাম) আবার যারা পূন্যবান আল্লাহ তাদের মধ্যে হতে যাদের উপর ইচ্ছা হবে তাদের সুপারিশের অধিকার দিবে। সেটার কোন নিশ্চয়তা নেই। কেননা, আল্লাহ কাউকে এটাতে নিশ্চয়তা দেয়নি। এখানে আল্লাহ তার বান্দার প্রতি দয়া প্রাকাশ স্বরূপ এই বিধানটি রেখেছে। তিনি চাইলেই সাফায়াতের অনুমতি দিতে পারেন। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহর এখতিয়ারেই আছে। আল্লাহ বলেন, أَمِ ٱتَّخَذُواْ مِن دُونِ ٱللَّهِ شُفَعَآءَۚ قُلۡ أَوَلَوۡ كَانُواْ لَا يَمۡلِكُونَ شَيۡـٔٗا وَلَا يَعۡقِلُونَ "তারা কি আল্লাহ ব্যতীত সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? বলুন, তাদের কোন এখতিয়ার না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও?" (Az-Zumar, Ayah 43) قُل لِّلَّهِ ٱلشَّفَٰعَةُ جَمِيعٗاۖ لَّهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ ثُمَّ إِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ "বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে" (Az-Zumar, Ayah 44) নবী, অলী, পীর বুজুর্গরা কিয়ামতের মাঠে সুপারিশ বা সাহায্য করবে এমনটা নিশ্চিত মনে করা আসলেই ঠিক না। কেননা কুরানে এরূপ নিশ্চিত কথা বলা হয়নি, কুরান যেটা বলে সেটা হচ্ছে, إِنَّ رَبَّكُمُ ٱللَّهُ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ ثُمَّ ٱسۡتَوَىٰ عَلَى ٱلۡعَرۡشِۖ يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَۖ مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ إِذۡنِهِۦۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ فَٱعۡبُدُوهُۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ "নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরী করেছেন আসমান ও যমীনকে ছয় দিনে, অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পাবে না তবে তাঁর অনুমতি ছাড়া ইনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তাঁরই এবাদত কর। তোমরা কি কিছুই চিন্তা কর না ?" (Yunus, Ayah 3) وَلَا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ عِندَهُۥٓ إِلَّا لِمَنۡ أَذِنَ لَهُۥۚ حَتَّىٰٓ إِذَا فُزِّعَ عَن قُلُوبِهِمۡ قَالُواْ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمۡۖ قَالُواْ ٱلۡحَقَّۖ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡكَبِيرُ "যার জন্যে অনুমতি দেয়া হয়, তার জন্যে ব্যতীত আল্লাহর কাছে কারও সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না। যখন তাদের মন থেকে ভয়-ভীতি দূর হয়ে যাবে, তখন তারা পরস্পরে বলবে, তোমাদের পালনকর্তা কি বললেন? তারা বলবে, তিনি সত্য বলেছেন এবং তিনিই সবার উপরে মহান" (Saba', Ayah 23) يَوۡمَئِذٖ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُۥ قَوۡلٗا "দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না" (Ta-Ha, Ayah 109) কোরান কাউকে নিশ্চিত সুপারিশ লাভ করার বা সুপারিশ করার কথা উল্লেখ করেনি। শুধুমাত্র কথিত কিছু হাদিসের দোহায় দিয়ে কোরানের শিক্ষার বাহিরে কথা প্রচলিত আছে আমাদের মুসলিম সমাজে। কোরান হচ্ছে নির্ভুল গ্রন্থ। যাতে কোন সন্দেহ নাই। ذَٰلِكَ ٱلۡكِتَٰبُ لَا رَيۡبَۛ "এ সেই কিতাব যাতে কোনই সন্দেহ নেই" (Al-Baqarah, Ayah 2) সুপারিশের আশা করা দোষের কিছুই নয়, যেহেতু কোরানে সুপারিশের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কাউকে নিশ্চিত সুপারিশের জন্য নির্ধারণ করে নেয়া এটা অবশ্যই ঠিক না। এবার আসি দুনিয়াবী বিষয়ে মানুষের উসীলা ধরার রীতি নিয়ে কিছু আলোচনা করি, দুনিয়াতেও কিছু মানুষ উসীলা ধরে দোয়া করে এই উদ্দেশ্যে যে, যাদের উসীলা ধরা হয় তারা আল্লাহর নিকট সুপারিশ করবে যেন তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। মূলত এইটা একটি ভ্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস। এই ধরনের ধারণা ও বিশ্বাস মক্কার মুশরিকরা পোষন করত। আল্লাহ বলেন, وَيَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمۡ وَلَا يَنفَعُهُمۡ وَيَقُولُونَ هَٰٓؤُلَآءِ شُفَعَٰٓؤُنَا عِندَ ٱللَّهِۚ قُلۡ أَتُنَبِّـُٔونَ ٱللَّهَ بِمَا لَا يَعۡلَمُ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَلَا فِي ٱلۡأَرۡضِۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ "আর উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে, না লাভ এবং (মুশরিকরা) বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ে অবহিত করছ, যে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে ? তিনি পুতঃপবিত্র ও মহান সে সমস্ত থেকে যাকে তোমরা শরীক করছ" (Yunus, Ayah 18) আজকে যাদের সুপারিশের আশায় বসে আছে হয়তো কিয়ামতের মাঠে তারা কেউ সাথে থাকবেনা। তারা সবাই উদাও হয়ে যাবে। সেদিন মহান বলবে, وَلَقَدۡ جِئۡتُمُونَا فُرَٰدَىٰ كَمَا خَلَقۡنَٰكُمۡ أَوَّلَ مَرَّةٖ وَتَرَكۡتُم مَّا خَوَّلۡنَٰكُمۡ وَرَآءَ ظُهُورِكُمۡۖ وَمَا نَرَىٰ مَعَكُمۡ شُفَعَآءَكُمُ ٱلَّذِينَ زَعَمۡتُمۡ أَنَّهُمۡ فِيكُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْۚ لَقَد تَّقَطَّعَ بَيۡنَكُمۡ وَضَلَّ عَنكُم مَّا كُنتُمۡ تَزۡعُمُونَ "তোমরা আমার কাছে নিঃসঙ্গ হয়ে এসেছ, আমি প্রথমবার তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলাম। আমি তোদেরকে যা দিয়েছিলাম, তা পশ্চাতেই রেখে এসেছ। আমি তো তোমাদের সাথে তোমাদের সুপারিশকারীদের কে দেখছি না। যাদের সম্পর্কে তোমাদের দাবী ছিল যে, তারা তোমাদের ব্যাপারে অংশীদার। বাস্তুবিকই তোমাদের পরস্পরের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে এবং তোমাদের দাবী উধাও হয়ে গেছে" (Al-An'am, Ayah 94) আজ যাদের সুপারিশের আশায় মাজারে গিয়ে গরু জবাই করেন। অনুষ্টান করেন সেদিন তারা নিজেরাই অস্বীকার করবে। আল্লাহ বলেন, وَيَوۡمَ تَقُومُ ٱلسَّاعَةُ يُبۡلِسُ ٱلۡمُجۡرِمُونَ وَلَمۡ يَكُن لَّهُم مِّن شُرَكَآئِهِمۡ شُفَعَٰٓؤُاْ وَكَانُواْ بِشُرَكَآئِهِمۡ كَٰفِرِينَ "যে দিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে যাবে। তাদের দেবতা গুলোর মধ্যে কেউ তাদের সুপারিশ করবে না। এবং তারা তাদের দেবতাকে অস্বীকার করবে" (Ar-Rum, Ayah 12-13) আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করবেনা। করতে পারবেও না। এমনকি ফেরেস্থাদের মধ্য থেকেও কেউ সুপারিশ করতে পারবেনা যদিনা আল্লাহ পাক অনুমতি দেন। আল্লাহ বলেন, ۞وَكَم مِّن مَّلَكٖ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ لَا تُغۡنِي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡـًٔا إِلَّا مِنۢ بَعۡدِ أَن يَأۡذَنَ ٱللَّهُ لِمَن يَشَآءُ وَيَرۡضَىٰٓ "আকাশে অনেক ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হয় না যতক্ষণ আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা ও যাকে পছন্দ করেন, অনুমতি না দেন" (An-Najm, Ayah 26) যারা পাপিষ্ঠ (কবিরাহ গুনাহে লিপ্ত) তাদের কোন বন্ধু থাকবেনা। থাকবেনা কোন সুপারিশকারী। আল্লাহ বলেন, وَأَنذِرۡهُمۡ يَوۡمَ ٱلۡأٓزِفَةِ إِذِ ٱلۡقُلُوبُ لَدَى ٱلۡحَنَاجِرِ كَٰظِمِينَۚ مَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ حَمِيمٖ وَلَا شَفِيعٖ يُطَاعُ "আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন, যখন প্রাণ কন্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পাপিষ্ঠদের জন্যে কোন বন্ধু নেই এবং সুপারিশকারীও নেই; যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে" (Ghafir, Ayah 18) আল্লাহ যাকে চান তাকে না কেউ জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারবে না জান্নাতে। সুতারাং সুপারিশ কোন কাজে আসবেনা। যেটা মানুষ মনে ধারন করে আছে। আল্লাহ বলেন, ءَأَتَّخِذُ مِن دُونِهِۦٓ ءَالِهَةً إِن يُرِدۡنِ ٱلرَّحۡمَٰنُ بِضُرّٖ لَّا تُغۡنِ عَنِّي شَفَٰعَتُهُمۡ شَيۡـٔٗا وَلَا يُنقِذُونِ "আমি কি তাঁর পরিবর্তে অন্যান্যদেরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করব? করুণাময় যদি আমাকে কষ্টে নিপতিত করতে চান, তবে তাদের সুপারিশ আমার কোনই কাজে আসবে না এবং তারা আমাকে রক্ষাও করতে পারবে না" (Ya-Seen, Ayah 23) যাদের উপর আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত। কেবল তাদের সুপারিশ কাজে আসবে। যদি আল্লাহ তাদের অনুমতি দেন। আল্লাহ বলেন, يَوۡمَئِذٖ لَّا تَنفَعُ ٱلشَّفَٰعَةُ إِلَّا مَنۡ أَذِنَ لَهُ ٱلرَّحۡمَٰنُ وَرَضِيَ لَهُۥ قَوۡلٗا "দয়াময় আল্লাহ যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথায় সন্তুষ্ট হবেন সে ছাড়া কারও সুপারিশ সেদিন কোন উপকারে আসবে না" (Ta-Ha, Ayah 109) يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡ وَلَا يَشۡفَعُونَ إِلَّا لِمَنِ ٱرۡتَضَىٰ وَهُم مِّنۡ خَشۡيَتِهِۦ مُشۡفِقُونَ "তাদের সম্মুখে ও পশ্চাতে যা আছে, তা তিনি জানেন। তারা শুধু তাদের জন্যে সুপারিশ করে, যাদের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট এবং তারা তাঁর ভয়ে ভীত" (Al-Anbiya', Ayah 28) সেদিন অপরাধীরা নিজে থেকেই বলে উঠবে, فَمَا لَنَا مِن شَٰفِعِينَ "অতএব আমাদের কোন সুপারিশকারী নেই" (Ash-Shu'ara, Ayah 100)
পরিশেষে সারকথা হচ্ছে, => প্রত্যেক মানুষকে আমলে সালেহ করতে হবে। কেউ কারও পাপের বুঝা করবেনা। কেউ কারও সুপারিশের আশায় বসে থাকা চলবেনা। => সাফায়াত কেবল আল্লাহর এখতিয়ার ভুক্ত। আল্লাহ পাক যাকে যার জন্য সাফায়াতের অনুমতি দিবে কেবল সেই তার জন্য সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখবে। => কার জন্য কাকে অনুমতি দিবে সেটা আল্লাহই ভাল জানেন। => নির্দিষ্ট কাউকে সুপারিশের এখতিয়ারভোক্ত মনে করা ঠিক না। => সুপারিশের আশা করা যাবে কিন্তু নির্দিষ্ট কাউকে নির্ধারণ করা যাবেনা। আশা করি সাফায়াত নিয়ে সকল ধরনের মিথ্যা আশা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসের অবসান ঘটবে। এবং সবাই আমলে সালেহ করে জান্নাত পাওয়ার আশায় এগিয়ে চলবে। লেখক: আবুবকর সিদ্দিক (২০:০৮:২০২০)

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ