প্রশ্নঃ কবর উচু করে বাঁধানো, পাঁকা করা, গম্বুজ করা ইত্যাদি কর্মগুলো কি জায়েজ?

প্রশ্নঃ কবর উচু করে বাঁধানো, পাঁকা করা, গম্বুজ করা ইত্যাদি কর্মগুলো কি জায়েজ? 
_________________

 
পাকা কবর যা ইসলামে নিষিদ্ধ 
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য! সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সর্বশ্রেষ্ট মহামানব,সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ), তাঁর পরিবার এবং তাঁর সকল সাহাবীর উপর। . বর্তমানে অনেক মুসলিম কবর পাকা করেন। বিশেষত আলেম উলামা ও বুজুর্গগণের কবর পাকা করাকে বিশেষ সাওয়াবের কাজ মনে করেন। এসকল বিষয়ে ইসলামের হুকুম কি এবিষয়ে পর্যালোচনার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ্! 
______ 
.
 ❑ কবর পাকা করা, চুনকাম, কবরে লেখা নিষিদ্ধ। . কারো কবর পাকা বা বাঁধালে কোনোরূপ ফযীলাত হবে, বা তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন হবে, অথবা নূন্যতম পক্ষে তাঁর কবরকে হেফাজত করা হবে এই মর্মে একটি কথাও হাদীসে বলা হয় নি। উপরন্তু হাদীসে কবর পাকা করতে নিষেধ করা হয়েছে: যাবির ইবনু আব্দুল্লাহ রা. বলেন : “রাসুলুল্লাহ সা. কবর চুনকাম করতে, কবরের উপর বসতে এবং কবরের উপর ইমারত বা ঘর বানাতে নিষেধ করেছেন।” [ সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানাইয, হা/১৬১০] . অন্য হাদীসে আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেছেন : নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কবরের উপর কিছু নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন।” [সুনানে ইবনু মাজাহ, কিতাবুল জানাইয,নং ১৫৬৪। একই অর্থে উম্মে সালামা রা. থেকেও হাদীস বর্ণিত হয়েছে। দেখুন : মুসনাদে আহমাদ, নং ২৫৩৪৪। . . বিভিন্ন হাদীস থেকে জানা যায় মোট ৫টি বিষয় রাসুলুল্লাহ সা. নিষেধ করেছেন : কবর চুনকাম করা, কবরের উপরে বসা, কবর বাঁধানো বা কবরের উপরে ঘর জাতীয় কিছু তৈরি করা, কবরের উপরে লেখা এবং অতিরিক্ত মাটি এনে কবর উঁচু করা। [ আবু দাউদ, নং ৩২৩৫, ৩২২৬, তিরমিযী, ১০৫২, ইবনু মাজাহ, ১৫৬২, ১৫৬৩, ১৫৬৪; ইবনুল আসীর, জামিউল উসূল ১১/১৪৫-১৪৬। ] 
_________ 
(১) উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে বুঝা যায় রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাহাবীগণ কখনো কোনো কবর পাকা করেন নি - এ সকল হাদীস থেকে আমরা আরো স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে, কবর পাকা করা,কবরের উপর ইমারত তৈরী করা, চুনকাম করা, লেখা ইত্যাদি রীতিনীতি পূর্ব থেকেই আরব দেশেও অন্যান্য দেশে প্রচলিত ছিল। রাসুলুল্লাহ সা. তা বর্জন করেছেন এবং নিষেধ করেছেন। তিনি কখনো কারো কবর পাঁকা করেননি, চুনকাম করেননি বা কবরের উপরের উপরে গেলাফ বা আবরণী লাগাননি। বরং রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর ২৩ বৎসরের নবুয়তী জীবনে বিপুল সংখ্যক মানুষকে দাফন করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর প্রিয়তম সন্তানগণ,আত্মীয়গণ, উম্মতের শ্রেষ্ঠ ওলী তাঁর প্রাণপ্রিয় সাহাবায়ে কেরামের অনেকে। তিনি কারো কবরে কখনো কোনো গম্বুজ তৈরি করেননি, পাকা করেননি, কোনো প্রকারের চুনকাম বা সৌন্দর্যবর্ধন করে সযত্নে সংরক্ষণ করেননি। সর্বদা তাঁদেরকে গোরস্তানে দাফন করতেন। কখনো কখনো বিশেষ আপনজন ও বিশেষ মহব্বতের মানুষের জন্য গোরস্তানের অগণিত কবরের মধ্য থেকে তাঁদের কবর চিনতে পারার জন্য তার পাশে পাথর রেখে দিতেন (এই সুন্নাতটি এখনও মদিনায় অবস্থিত‘বাকী গোরস্থানে’ দৃশ্যমান)। . এধরনের একজন মানুষ ছিলেন উসমান ইবনু মাযঊন রা. তিনি রাসুলুল্লাহ সা. এর দুধ ভাই ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্ব থেকেই ধার্মিক জীবনযাপন করতেন এবং মদপান করতেন না। সর্বপ্রথম যাঁরা ইসলাম গ্রহন করেন তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এরপর তিনি মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুর সংবাদে রাসুলুল্লাহ সা. এসে তাঁর মৃতদেহের গালে চুমু খেতে থাকেন। তাঁর চোখের অশ্রুতে মৃতদেহের মুখমন্ডল ভিজে যেতে থাকে। বাকী গোরস্তানে রাসুলুল্লাহ সা. তাঁকে দাফন করেন। তাবিয়ী মুত্তালিব ইবনু আব্দুল্লাহ বলেন : যখন উসমান ইবনু মাযঊন রা. ইন্তেকাল করলেন তখন তাঁর লাশ গোরস্তানে নিয়ে যাওয়া হলো এবং দাফন করা হলো। নবীয়ে আকরাম সা. এক ব্যক্তিকে একটি পাথর আনতে বললেন। কিন্তু ঐ ব্যক্তি পাথরটি বহন করতে সক্ষম হলো না। তখন রাসুলুল্লাহ সা.স্বয়ং পাথরটির কাছে গেলেন এবং নিজের জামার হাতা গুটিয়ে পাথরটি বহন করে নিয়ে তাঁর (উসমানের) মাথার কাছে রাখলেন এবং বললেন : এই পাথরটি দিয়ে আমার ভাইয়ের কবর চিনতে পারব এবং আমার পরিবার পরিজনের কেউ মৃত্যুবরণ করলে তাকে তার পাশে দাফন করব। [ সুনানে আবীর দাউদ, কিতাবুল জানায়েজ, নং ৩২০৬। দেখুন ইবনু আসীর, জামিউল উসূল ১১/১৪৬-১৪৭, নং ৮৬৫৩, মাজমাউন যাওয়ায়িদ ৩/২০ ] 
.
 রাসুলুল্লাহ সা. ইচ্ছা করলে তাঁর প্রিয়তম ভাই, এতবড় বুজুর্গ সাহাবী ও আল্লাহর অন্যতম ওলীর কবরটি বাঁধাতে বা কবরের উপরে একটি বড় ঘর, একটি গেলাফ ও পাশে যিয়ারতের সুবিধার জন্য একটি যিয়ারত ছাউনি তৈরি করতে পারতেন। তিনি তা করলে সাহাবীগণ সর্বান্তকরণে তাঁকে সাহায্য করতেন এবং নিজেরাও তাঁর এই সুন্নাত অনুসরণ করতেন। হাদিস শরীফ আমরা একটি বিশেষ অধ্যায় পেতাম : কিভাবে পাথর দিয়ে কবরের উপরে ঘর,ইমারাত বা ঢিপি তৈরি করতে হয়। কিভাবে যিয়ারতের ছাউনি তৈরি করতে হয়। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সা. তাঁর উম্মতকে বুজুর্গগণের সম্মানের এসকল পথের কোনো পথই শেখালেন না। তিনি শুধুমাত্র একটি পাথর দিয়ে চিহ্ন রেখেই শেষ করলেন। পাথর রাখার উদ্দেশ্যও তিনি বলে দিলেন : যেন তাঁর ভাইয়ের কবরটি চিনতে পারেন, পরিবারের অন্য কেউ ইন্তেকাল করলে তাঁর পাশে দাফন করতে পারেন। ইমাম বুখারী রাহ. উল্লেখ করেছেন, তাবেরী খারিজা ইবনু যাইদ ইবনু সাবেত বলেছেনঃ উসমানের রা. যামানায় আমরা যুবক একলাফে উসমান ইবনু মাযঊনের রা. কবর পার হয়ে যেতে পারত। [সহীহ বুখারী, কিতাবুল জানাইয। ইবনু হাজার আল আসকালানী,ফাতহুল বারী ৩/২২২] . এথেকে আমরা দেখতে পাই যে, রাসুলুল্লাহ সা. এর ইন্তেকালের পরেও সাহাবাগণ তাঁর প্রিয়তম ভাই ও সাহাবী উসমান ইবনু মাযঊন রা. কবরে উপর কোনো ঘর, গম্বুজ বা ইমারত তৈরি করেননি। তখনো কবরটি স্বাভাবিক প্রশস্ততার ও উচ্চতার ছিল, যার ফলে একজন যুবক একলাফে তা পার হতে পারত। সম্ভবত ৩/৪ হাত চওড়া ও আধা হাত বা একহাত উঁচু ও চার হাত বা পাঁচ হাত লম্বা। সকল সাহাবীর কবরই এইরূপ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। 
.
(২) রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবীগণ পাকা বা উঁচু কবর ভেঙ্গে দিয়েছেন। . এভাবে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ সা. কবর পাকা করতে নিষেধ করেছেন। আজীবন তিনি কবর পাকা করা বর্জন করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর কর্মের সুন্নাতের আরেকটি দিক হলো -শুধু পাকা কবরই নয়, স্বাভাবিক কবরের পরিচয় প্রদানের জন্য কবরের মাটি দিয়ে যেটুকু ঢিবি করা হয় তার চেয়ে উঁচু সকল কবর ভেঙ্গে সমান করে দিয়েছেন। আবু হাইয়াজ আসাদী বলেন, আলী রা. আমাকে বলেনঃ আমি তোমাকে সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করছি, যে দায়িত্ব দিয়ে রাসুলুল্লাহ সা. আমাকে প্রেরণ করেছিলেন। যত মূুুর্তি -প্রতিকৃতি দেখবে সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেবে, (স্বাভাবিক কবরের পরিচিতি জ্ঞাপক সামান্য উচ্চতা বেশি) কোনো উঁচু কবর দেখলে তা সব সমান করে দেবে এবং যত ছবি দেখবে সব মুছে ফেলবে। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানায়েজ, নং ৯৬৯) 
.
অন্য বর্ণনায় আলী রা. বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সা. এক জানাযায় (মদীনার বাইরে) বের হলেন। তিনি বললেন : তোমাদের মধ্যে কে আছ মদীনার অভ্যন্তরে গিয়ে যত মূর্তি পাবে সব বিচূর্ণ করবে, যত কবর দেখবে সব সমান করে দেবে, এবং যত ছবি পাবে সব মুছে বা নষ্ট করে দেবে। তখন একজন সাহাবী বললেন : ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি যাব। কিন্তু তিনি মদীনাবাসীকে ভয় পেয়ে ফিরে আসলেন। তখন আলী রা. বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি যাব। রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, যাও। তখন আলী চলে গেলেন। পরে ফিরে এসে বললেন, আমি সকল মূর্তি ভেঙ্গে দিয়েছি, সকল কবর ভেঙ্গে সমান করে দিয়েছি এবং সকল ছবি মুছে নষ্ট দিয়েছি। এরপর রাসুলুল্লাহ সা. বললেন যদি কেউ পুনরায় এসকল কাজের কোনো একটি করে তাহলে সে মুহাম্মাদের উপর অবতীর্ণ ধর্মের সাথে কুফরী করল। [ মুসনাদে আহমদ, নং ৬২২ ] 
.
এ হাদীস থেকে আমরা অত্যন্ত স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি যে, রাসুলুল্লাহ সা. কবরকেও মূর্তি ও ছবির ন্যায় শিরক প্রসারের মাধ্যম হিসাবে দেখেছেন এবং এগুলো তৈরি করার শুধু নিষেধ করেননি, উপরন্তু কেউ কোনো কবর উঁচু বা পাকা করলে তা ভেঙ্গে সমান করার নির্দেশ দিয়েছেন, যেভাবে মূর্তি ভাঙ্গতে ও ছবি নষ্ট করতে নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ ধরনের কাজকে, মূর্তি তৈরি করা, ছবি তৈরি করা বা কবর উঁচু করাকে তিনি কুফরী বলে গণ্য করেছেন। কারণ, তা কুফর ও শিরকের প্রসারের কারণ। পূর্ববর্তী উম্মতের মানুষেরা কবরকে তাযীম (সম্মান) করতে যেয়ে তাকে ইবাদতের স্থান বানিয়ে নিয়েছে এবং এভাবে শিরকে নিপতিত হয়েছে। তাঁর পরে সাহাবীগণও এই দায়িত্ব পালন করেছেন। রাসুলুল্লাহ সা. এর ইন্তেকালের ২৫/৩০ বৎসর পরেও আলী রা. মুসলিম সাম্রাজ্যের মধ্যে এ সকল শিরকের ওসীলা থাকলে তা ভাঙ্গতে তাঁর পুলিশ বাহিনী প্রধানকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। 
 .
(৩) তাবেয়ী তাবে তাবেয়ীগণের যুগেও পাকা কবর ভেঙ্গে ফেলা হতো। . ইমাম শাফেয়ী রহঃ একজন তাবে-তাবেয়ী ছিলেন। তিনি ১৫০ হিজরীতে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের অধিকাংশ সময় মক্কা, মদীনা ও ইরাকে কাটিয়ে শেষে ২০৪ হিজরীতে মিশরে ইন্তিকাল করেন। তিনি তাঁর গ্রন্থে বলেছেন,"আমি কোনো মুহাজির বা আনসার সাহাবীর কবর চুনকাম করা বা পাকা করা দেখতে পাইনি। আমি দেখেছি যে, মক্কায় অনেক প্রশাসক কবর পাকা করা হলে বা কবরের উপরে ঘর বানানো হলে তা ভেঙ্গে দিতেন। কোনো আলিম বা ফকীহকে এই কাজে নিন্দা করতে দেখিনি। [ইমাম শাফেয়ী, আল উম্ম ১/৪৬৩-৪৬৪]
.

 ইমাম শাফেয়ী যে সকল শাসকের কথা বলেছেন তারা তাবেয়ী পর্যায়ের মানুষ। তিনি যে সকল ফকীহের কথা বলছেন তাঁরা তৎকালীন যুগের অন্যতম তাবেয়ীশ্রেষ্ঠ আলেম, মুহাদ্দিস ও ফকীহ। সাহাবীগণ থেকেই তাঁরা শিক্ষাগ্রহণ করেছেন এবং তাঁদের মতোই চলতে চেষ্টা করেছেন। তাঁদের যুগের এই বর্ণনায় আমরা তিনটি বিষয় জানতে পারি : প্রথমত, রাসুলুল্লাহ সা. ও সাহাবীগণের বিরোধিতা সত্ত্বেও যুগ যুগ ধরে চলে আসা রীতি ও প্রচলন অনুযায়ী কবর পাকা করার প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে তাবেয়ীদের যুগ থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে থাকে। দ্বিতীয়, আলেমগণ এই প্রবণতা সমর্থন করতেন না। এজন্য শাসকগণ পাকা কবর বা কবরের উপরে তৈরি ঘর ভেঙ্গে দিলে তাঁরা কোনো আপত্তি করেননি। তাঁরা কখনোই এতে মৃতব্যক্তিদের অবমাননা করা হবে বলে মনে করেননি। তৃতীয়ত, ওলীগণের কবর পাকা করার নামে সাহাবীগণের কবর পাকা করার ধারা তখনো সৃষ্টি হয়নি। আল্লাহর শ্রেষ্ঠ ওলীগণ বা মুহাজির ও অানসার সাহাবীগণের কোনো কবর পাকা করা, কবরের উপরে ঘর বানানো, গম্বুজ বানানো বা যিয়ারত ছাওনি তৈরি করে তাঁদের তাযীমের চেষ্টা তারা কেউকরেন নি।
 ― 
.
(৪) পরবর্তী যুগেও অনেক আলেমগণ ও শাসকগণ পাকা কবর ভেঙ্গে ফেলা সমর্থনকরেছেন! . ইমাম নববী রাহ. বলেন, কবর যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় হয়, তাহলে কবর বাঁধানো বা কবরের উপরে ঘর জাতীয় কিছু তৈরি করা মাকরুহ হবে। আর যদি গোরস্থানে হয় তাহলে তা হারাম হবে। এরপর তিনি উল্লেখ করেন যে, আলীর হাদীসে যে বাক্য রয়েছে : সকল উঁচু কবর ভেঙ্গে সমান করে দেব -এ কথা পাকা কবর ভেঙ্গে ফেলার সমর্থন করে। ইমাম নববী,শারহু সহীহ মুসলিম ৭/৩৭-৩৯। . ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে বর্তমান সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠাতা নজদের বাদশাহ আব্দুল্লাহ্ আযীয ইবনু আব্দুর রাহমান মক্কা মুকাররামা ও মদীনা মুনাওয়ারাহ সহ পুরো হেজাজের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন। তাঁর নজদী বাহিনী হেজাজের সকল মাজার ও কবরের উপর তৈরি ইমারত, গম্বুজ ইত্যাদি ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দেয়। তৎকালীন সৌদি বাহিনীর এই কাজকে বিশ্বের অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমানও খুবই ন্যক্কারজনক, নিন্দনীয় ও ওলীগণের অসম্মান এমনকি কুফরী পর্যায়ের বলে গণ্য করেন। . অপরদিকে অনেকে তা হাদীসের অনুসরণ হিসাবে মেনে নেন বা সমর্থন করেন। যারা কবর, গম্বুজ ইত্যাদি ভাঙ্গাতে বুজুর্গগণের কোনো অবমাননা বা গোনাহ হয়েছে বলে মনে করেননি, এবং হাদিসের অনুসরণ হিসাবে তা মেনে নিয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে ভারতের সুবিখ্যাত সংস্কারক ও বুজুর্গ ফুরফুরার পীর আবু বকর সিদ্দিকী, রাহিমাহুল্লাহ (১৮৪৬-১০৩৯ খ্রি.)। তিনি বাদশাহ আব্দুল আযীযকে লিখেন, স্মৃতিচিহ্ন, মাজারের গম্বুজ ইত্যাদি ভেঙ্গে ফেলা একদিক থেকে ঠিক হয়েছে, কারণ এতে হাদিসের অনুসরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ, হাদিস শরীফে উঁচু কবর ভেঙ্গে সমান করে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, কোনো মুসলমানের কবরই উঁচু করা যাবে না, আর কোনো কবর উঁচু করা হলে বা পাকা করা হলে তা ভেঙ্গে ফেলা যাবে। একে অন্যায় বা গোনাহের কাজ বলা যায় না। তাঁর ভাষায় : "আমরা শুনে আসছি যে, আপনার রাজত্বে হেজাজের প্রচীন স্মৃতিচিহ্নসমূহ ও পবিত্র মাযার সমূহের গম্বুজ আপনার নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এবং সেসব নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। নিঃসন্দেহে হাদীসের অনুসরণ হিসাবে এই কাজ এক দিক থেকে অন্যায় নয়। তবে আশ্চর্য হই যে, আপনার দেশের অধিকাংশ অধিবাসী দাড়ি কাটেন অথবা খেলাফে সুন্নাত ভাবে ছাটেন। তাদের দেখাদেখি অন্যান্য দেশের মানুষেরাও ক্রমান্বয়ে এই কঠিন অন্যায় কাজটি করতে শুরু করেছে। আপনার উজ্জল চরিত্র ও অনাবিল স্বভাবের উপর নির্ভর করে এ অধম আশা করছে যে, আপনি আপনার দেশে যেসকল ঘৃণিত বিদআত ও শরীয়ত বিরোধী কাজ সংঘঠিত হয় তা রোধ করবেন। [ মুবারক আলী রহমানী, ফুরফুরা শরীফের ইতিবৃত্ত. পৃ. ১২০-১২২]
 ― 
.
(৫) কবর কেন্দ্র করে মসজিদ তৈরি নিষিদ্ধ! . আমরা প্রচীন মুমিন ও কাফির বিভিন্ন জাতির ইতিহাস পড়লে দেখতে পাই যে, তাদের মধ্যকার কোনো নবী, ওলী বা বীর মৃত্যুবরণ করলে তারা তার মধ্য বিশেষ ঐশ্বরিক শক্তির কল্পনা করত। তারা মনে করতো যে, মৃত্যুর পরে তিনি বিশেষ ঐশ্বরিক ক্ষমতা অর্জন করেছেন। এজন্য কখনো বা তাদেরকে বিশেষ ভাবে পূজা করত, তাদের নামে মানত করত, তাদের কবরে নতুন ফল, ফসল উৎসর্গ করত বা তাদের কাছে বিশেষ ভাবে অলৌকিক সাহায্য প্রার্থনা করত, পথেঘাটে, সমুদ্রে, বনে জঙ্গলে বিপদে আপদে তাদের সাহায্য প্রার্থনা করত। কখনো বা তাদের কবরকে কেন্দ্র করে বিশেষ যিয়ারত, অনুষ্ঠান, প্রার্থনা, পূজা -আর্চনা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। . পূর্ববর্তী নবী -রাসূলগণের মুসলিম উম্মতগণও এই শিরকী বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হতেন। তাঁরা সমাধিস্থ ব্যক্তির পূজা উপাসনা না করলেও তাদের কবরের নিকট আল্লাহর ইবাদত উপাসনা করতে ভালবাসতেন। তাঁরা ভাবতেন, আল্লাহর প্রিয় নবী -ওলীদের কবর বা স্মৃতি বিজড়িত স্থানে নামায, দোয়া ইত্যাদি ইবাদত করলে আল্লাহ খুশি হবেন এবং তাড়াতাড়ি কবুল করবেন। এজন্য তাঁরা তাঁদের কবর গুলিকে উপাসনালয় বানিয়ে নিতেন।
পাকা কবর
. প্রাচীন গ্রিক, মিশরীয়, ব্যাবিলোনীয়, ইহুদী, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা এগুলি দেখতে পাই। কুরআন কারীমে সূরা কাহাফে এবিষয়ে উল্লেখ দেখতে পাই। আমরা দেখি যে, তৎকালীন মানুষের আসহাবে কাহাফের দীর্ঘকাল ঘুমিয়ে থাকার স্থানের সন্ধান পাওয়ার পর সে সমাজের কাফির বা মুসলিমগণ প্রাচীন যুগের উপরোল্লেখিত রীতি অনুসারে সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করতে চান। 
[ কাহাফ : ২১ আয়াত, তাবারী, তাফসীর ১৫/২২৫, ইবনু কাসীর, তাফসীর ৩/৭৬ ] ▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

 : - লিখাঃ সংগৃহীত

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ