কওমী ও চরমোনাই ভাইদের সাথে আহলে হাদিসের দূরত্ব বেশী নয়!



কওমী ও চরমোনাই ভাইদের সাথে আহলে হাদিসের দূরত্ব বেশী নয়। তবুও চরমোনাই ভাইয়েরা তাদের ওয়াজ মাহফিলে ডাঃ জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়।
তাদের প্রথম অভিযোগ, ডাঃ জাকির নায়েক ইহুদি খ্রিস্টানদের দালাল।
কারণ তিনি কোর্ট ও টাই পড়েন।
আসুন তাদের অভিযোগ কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
প্রথমে বলে রাখি, কোর্ট ও টাই ইহুদি খ্রিস্টানদের কোন ধর্মীয় প্রতিক জাতীয় কিছুই নয় বরং এগুলো তাদের দেশের (ইউরোপ আমেরিকা) সাংস্কৃতিক পোশাক। যেমন, ধুতি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি এইগুলা আমাদের উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক পোশাক। এগুলো হিন্দু, বৌদ্ধ কিংবা মুসলমানদের ধর্মীয় পোশাক নয়। তাছাড়া, ইসলাম ধর্মে নির্দিষ্ট কোন ধর্মীয় পোশাক নেই যা শুধুমাত্র ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পরিধান করা হয়। বরং ইসলাম ধর্মে পোশাকের জায়েজ বা সুন্নত হওয়ার ছয়টি শর্ত আছে।
শর্তগুলো হচ্ছে,
১/ পুরুষের জন্য নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের জন্য পায়ের তালু, হাতের কব্জিতে ও মুখমন্ডল ব্যতীত পুরো শরীর ঢাকে এমন পোশাক।
২/ পোশাক এমন আঁটু সাটূ বা টাইট পিট হতে পারবেনা, যাতে শরীরের গঠন বুঝা যায়।
৩/ পোশাক এমন স্বচ্ছ হতে পারবেনা, যা দ্বারা শরীরের ভিতরের অংশ দেখা যায়।
৪/ পুরুষের পোশাক অবশ্যই মহিলাদের পোশাকের মতো হতে পারবেনা এবং মহিলাদের পোশাক পুরুষের পোশাকের মতো হতে পারবেনা।
৫/ পোশাক অবশ্যই অন্যকোন ধর্মের ধর্মীয় পোশাকের মতো হতে পারবেনা।
৬/ এমন পোশাক পড়া যাবেনা যা বিপরীত লিংগের আকর্ষণ সৃষ্টি হয়।
তাছাড়া পুরুষরা এমন পোশাক পড়বেনা যা রেশমি সুতা দ্বারা তৈরি এবং যে পোশাকে স্বর্ণ খচিত আছে।
কোন মুসলমান যদি পোশাকের এই শর্তাবলী মেনে পোশাক পরিধান করে, তবে তা সুন্নত বা জায়েজ পোশাক বলে গণ্য হবে। এই পোশাক পরিধান করে সে যেকোন ইবাদত করতে পারবে। তা হৌক সালাত আদায় করা কিংবা দ্বীন প্রচার করা। অবশ্য হজ্জের জন্য বিশেষ পোশাক নির্ধারিত আছে, যা কেবল তাদের জন্য যারা হজ্ব করতে যায়।
উপরোক্ত কথা গুলো যদি আমরা মেনে নিই, তবে জাকির নায়েকের পোশাকের ব্যপারে আর প্রশ্ন থাকেনা।
জাকির নায়েকের সাথে শরীয়তের কিছু মাসালা নিয়ে মতভেদ থাকতে পারে। এইটা স্বাভাবিক ব্যপার। কারণ দুনিয়ার সকল মানুষের চিন্তা দ্বারা এক রকম নয়। যদি এক রকম হতো, তবে পৃথিবীর মধ্যে হানাফি, শাফেয়ী, মালেকী কিংবা হাম্বলী মাযহাব বলতে কিছুই থাকতোনা।

দ্বিতীয় অভিযোগ : ডাঃ জাকির নায়েক তার পোগ্রামে পর্দা রক্ষা করেনা।
এই অভিযোগ একেবারেই ভুল। জাকির নায়েক তার পোগ্রাম গুলোতে তার সাধ্যমতো পর্দা রক্ষা করার চেষ্টা করে। তার পোগ্রাম গুলোতে মেয়েরা বসে হয়তো একেবারেই পিছনে নইলে এক পাশে পর্দার ভিতরে। যদিও ভিডিও দেখলে মনে জাকির নায়েক ও মেয়েগুলোর মধ্যে সামনাসামনি "প্রশ্নোত্তর" পর্ব চলছে। তার হাজারো পোগ্রাম গুলোর মধ্যে মাত্র একবার মেয়েরা সামনে বসেছে। তাও আয়োজকদের ভুলের কারণে। তা ছিল ডুবাই মহিলাদের জন্য করা একটি পোগ্রামে। এই পোগ্রামের ব্যপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, "এইটা আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন লেকচারের সময় গিয়েছিল যেখানে আমি পর্দা রক্ষার জন্য হয়তো উপরের দিকে তাকিয়ে লেকচার দিয়েছিলাম নতুবা নিচের দিকে তাকিয়ে "
এর পরও যারা তার পর্দার ব্যপারে প্রশ্ন তুলে তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন হচ্ছে তাবলিক জামায়াত কি ইউরোপ আমেরিকা দীনের দাওয়াত দিচ্ছেনা, যেখানে ঘর থেকে বের হলেই উলংগ মেয়ে পুরুষের হাটাহাটি।
নাকি এই ফতোয়া তারা দেয় যে, ইউরোপ আমেরিকা যারা দীনের দাওয়াত দিচ্ছে তাদের পর্দা রক্ষা হচ্ছেনা, তাই ঐসব দেশে মুসলমানদের যাওয়া হারাম।

চরমোনাই বা কওমী ভাইদের মুখে ডাঃ জাকির নায়েকের বিরোধিতা মানায়না।
যাদের মূখে মানায় তারা হলো,
১/ অমুসলিমদের মুখে। কারণ তাদের ধর্মের সকল গোবর জাকির নায়েক ফাসঁ করে দিচ্ছে।
২/ নাস্তিক : যাদের মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে জাকির নায়েক কথা বলে যাচ্ছে।
৩/ শিয়া ও কাদিয়ানী : কারণ জাকির নায়েক তাদের সেসব মৌলিক আক্বিদার সাথে একমত নয়, যেগুলোর কারণে তারা সুন্নিদের কাফের বলে।
৫/ সুন্নি নামধারী বিদাতি : যাদের নিজস্ব শিরিক বিদাতেপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সাথে মিল না থাকায় তারা কওমী, চরমোনাই, জামাতী কিংবা আহলে হাদিসদের ওহাবি বলে গালি দেয়।
উল্লেখ্য : চরমোনাই পীরের এক ভক্তের ওয়াজ শোনে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, শুধুমাত্র জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে  অজ্ঞতা বশত কিছু কথা বলার কারণে এই পোস্টটি কষ্ট করে লিখেছি। আশা করি নিজেদের সংশোধন করবেন। কারও প্রতি বিদ্ধেস রেখে দীনের ঐক্য ধংস করবেন না।
✍️ আবুবকর সিদ্দিক (২৭ মারচ ২০১৭ ইংরেজি)

কওমী ও চরমোনাই ভাইদের সাথে আহলে হাদিসের দূরত্ব বেশী নয়। 
জাকির নায়েক মালেশিয়া লেকচারের দৃশ্য


কওমী ও চরমোনাই ভাইদের সাথে আহলে হাদিসের দূরত্ব বেশী নয়। 
জাকির নায়েক মালেশিয়া লেকচারের দৃশ্য


Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ