কূল ইন্নামা আনা বাশারুম মিসলুকূম : অপব্যাখ্যা ও জবাব!


মাজার পূজারী বেরলভিদের কুরআনের অপব্যাখ্যা ও জবাব! (প্রথম অংশ)- আবুবকর সিদ্দিক।

কূল ইন্নামা আনা বাশারুম মিছলুকূম এর অপব্যাখ্যার জবাব!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

সূরা আল কাহাফ🎷
❎ ১১০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা
قل انما انا بشر مشلكم يوحي الي
অর্থ : হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ! আঁপনি বলুন আঁমি তোমাদের মেছাল একজন বাশার বা মানুষ,তবে আঁমার প্রতি ওহী নাযিল হয় !”
[সূরা কাহাফ,আয়াত নং ১১০]
😍😍 ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন😍😍
*(ক.) এখানে আরবী শব্দ بَشَرٌ (বাশার) দ্বারা তারা শুধুমাত্র মানুষ বুঝাতে চায়। অথচ সূরা মরিয়মের ১৭ নং আয়াতে بَشَرً (বাশার) দ্বারা ফেরেস্তাকে বুঝানো হয়েছে।আপনারাই দেখুন সূরা মরিয়মে কি বলা হয়েছে
فَاتَّخَذَتْ مِن دُونِهِمْ حِجَابًا فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا
অর্থঃ আঁমি আঁমার রুহ (হযরত জিব্রাইল আঃ) কে তাঁর (হযরত মরিয়ম) প্রতি প্রেরণ করেছি, অতঃপর সে (জিব্রাঈল আঃ) তাঁর সামনে একজন পূনাঙ্গ সুঠোম \”বাশার\” বা মানুষ এর আকৃতিতে আত্ম প্রকাশ করেছেন।
✌তাহলে এখন কি বলা যাবে ফেরেস্তারা (হযরত জীব্রাইল আলাইহিস সালাম) আমাদের মত মানুষ?কখনও নয়।
সুতরাং, এর দ্বারা বুঝা গেল بَشَرٌ (বাশার) শব্দ দ্বারা মানুষ বুঝায় না বরং মনুষ্য আকৃতি বুঝায়।

✅#জবাবঃ প্রথম, আপনি সূরা কাহাফের ১১০ নং আয়াতের অনুবাদে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। "বলুন, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ" এর অনুবাদে আপনি লিখেছেন, "বলুন, আমি তোমাদের মেছাল একজন বাশার"। অনুবাদের ক্ষেত্রে আপনার অনুবাদের চেয়ে আমার অনুবাদটি বাংলাভাষী মানুষের জন্য অধিক বোধগম্য। কেননা আপনি অনুবাদে "মতোই" শব্দের জায়গায় মেছাল লিখে দিয়েছেন। অথচ আমাদের বাংলাভাষী মানুষ মেছাল শব্দের অর্থ হিসেবে উদাহরণ বা যুক্তিকে বুঝে। অথচ আপনি প্রতারণার উদ্দেশ্যে অনুবাদে জটিলতার আশ্রয় নিয়েছেন।
দ্বিতীয়ত, এখানে সূরা মরিয়মের  ১৯/১৭ নং আয়াতে ফেরেশতা জিব্রাইল মানুষের রূপ ধারণ করে এসেছে তা স্পষ্ট করেই বলা আছে, কিন্তু নবীজি সাঃ মানুষের রূপ ধারণ করে এসেছে এমন আয়াত কোথাও নেই। অতঃপর  এই ব্যখ্যা সম্পূর্ণ মন গড়া।
একটু সূরা মরিয়মের ১৯/ ২০ নং আয়াতের দিকে যান, সেখানেও বাশার শব্দটির উল্লেখ পাবেন,
قَالَتۡ اَنّٰی یَکُوۡنُ لِیۡ غُلٰمٌ وَّ لَمۡ یَمۡسَسۡنِیۡ  بَشَرٌ  وَّ  لَمۡ   اَکُ  بَغِیًّا
মারইয়াম বলল, ‘কিভাবে আমার পুত্র সন্তান হবে? অথচ কোন মানুষ আমাকে স্পর্শ করেনি। আর আমি তো ব্যভিচারিণীও নই’।
এখানে বাশার দ্বারা এমন কোন মানুষের কথা বলা হয়নি যে, যারা মানুষের রূপ ধারণ করে এসেছে। বলা হয়েছে কোন মানুষ (বাশার) আমাকে স্পর্শ করেনি।
অথচ, আপনি বলেছেন, বাশার শব্দ দ্বারা কোন মানুষ বুঝায়না।
আরবি ডিকশনারি দেখুন বাশার (بَشَرٌ ) শব্দের অর্থ মানুষ বা মানব ইংরেজিতে Human.

❎ অপব্যাখ্যাঃ তার সপক্ষে আরেকখানা আয়াত লক্ষ্য করুন:
وَلَوْ جَعَلْنَاهُ مَلَكًا لَجَعَلْنَاهُ رَجُلًا وَلَلَبَسْنَا عَلَيْهِمْ مَا يَلْبِسُونَ
অর্থঃ যদি আঁমি কোন ফেরেশতাকে রসূল করে পাঠাতাম,তবে সে মানুষের আকারেই হত। এতেও ঐ সন্দেহই করত, যা এখন করছে।
[সূরা আল আনআম,আয়াত নং ৯]

✅ জবাবঃ এই আয়াটি এখানে "যদি আমি কোন ফেরেশতাকে রসুল করে পাঠাতাম" অংশটির অর্থই হচ্ছে আল্লাহ আল্লাহ কোন ফেরেস্থাকে মানুষের কাছে রাসূল হিসেবে পাঠাইনি যাকে আমরা নবী বা রাসূল হিসেবে বিশ্বাস করব। অথচ যে আয়াত উপস্থাপন করেছেন তা আপনার ব্যখ্যার সম্পূর্ণ বিপরীত। হয়তো অতি সাধারণ মানুষ এইভাবে চিন্তা করবেনা, তাই তাদের ধোকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এই আয়াত এখানে উপস্থাপন করেছেন।

❎*(খ.) بشر مثلكم শব্দটা উল্লেখ করা হয়েছে। উক্ত ” মেছাল” শব্দটা দৃষ্টান্তের জন্য ব্যাবহার হয়।

এ প্রসঙ্গে আক্বায়িদের কিতাবে উল্লেখ আছে:
الرسول انسان بعثه الله تعالي الي الخلق لتبليغ الاحكام
অর্থ: শরীয়তের পরিভাষায় রাসূল এমন একজন বাশার কে বলা হয়, যাকে আল্লাহ তায়ালা মানব জাতির জন্য পাঠিয়েছেন !”
[শরহে আক্বাইদে নসফী ]
*(খ) প্রকৃতপক্ষে হাক্বীক্বী অর্থ করলে হয় “হে আঁমার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আঁপনি ওই মুশরিকদের বলে দিন যে,আঁমি তোমাদের মেছাল (ছূরতান) একজন মানুষ,(হাক্বীক্বতান আঁমি শ্রেষ্ঠতম রাসূল) আঁমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে।

✅ জবাবঃ এখানে مِّثۡلُکُمۡ এর অনুবাদ করা হয়েছে "মেছাল" পাশে লিখে দিয়েছেন (ছুরতান) যার মানে দাড়ায় আমি তোমাদের মতো দেখতে। আমরা সাধারণ বাংলাভাষী মানুষেরা জানি 'মেছাল' মানে উদাহরণ /  Example.  অথচ مِّثۡلُکُمۡ শব্দের অর্থ "তোমাদের মতো"। কুরআনের আরবি-ইংরেজি ডিকশানারিতে এর অর্থ  like you. বলা যায় মানুষের মোড পরিবর্তন করতেই অযথা এর অনুবাদ জটিল করে দিয়েছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সহ বাংলা ও ইংরেজি ভাষার সব অনুবাদেই مِّثۡلُکُمۡ এর অনুবাদ করা হয়েছে তোমাদের মতো বা like you. পৃথিবীর কোন অনুবাদেই মেছাল বা Example দিয়ে অনুবাদ করেছে বলে আমার জানা নাই, শুধুমাত্র বিভ্রান্ত বেরলভী সম্প্রদায়ের কোন অনুবাদ ছাড়া।

❎*(গ)কুল- বলুন, ইন্না-নিশ্চয়ই,মা -(কি,না), আনা বাশারুম- আঁমি বাশার(মানুষ),মিস্ লুকুম-তোমাদের মতো, ইউহা – ওহি করা হয়, ইলাইয়া-আঁমার দিকে, আন্নামা-যে, ইলাইকুম-তোমাদের ইলাহা, ইলাহুন-ইলাহা, ওয়াহিদুন -এক।
সম্পৃর্ণ অর্থ দাঁড়ায়- বলুন,নিশ্চয়ই আঁমি কি বাশার(মানুষ) তোমাদের মতো ? আঁমার দিকে ওহি করা হয় যে তোমাদের ইলাহাই একই ইলাহা। আদম সন্তান যে উপাদানে সৃষ্টি , তিঁনি ও সে উপাদানে সৃষ্টি এরকম কথা এখানে বলা হয়নি।
প্রথম অংশ- নিশ্চয়ই আঁমি কি বাশার(মানুষ) তোমাদের মতো ? যেহেতু বাক্যংশটুকু “হ্যাঁ বোধক” তাই এর অর্থ হবে “নাবোধক”অর্থাৎ এ অংশই বলে দিচ্ছে তিঁনি আমাদের মতো নন ।
এর পরের অংশে বলা হচ্ছে- আঁমার দিকে ওহি করা হয় বা আঁমার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়। এ অংশই বলে দিচ্ছে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এঁর কাছে ওহি আসত।

✅ উত্তরঃ এখানে আবারও সে আয়াতের অনুবাদ করেছেন নিজেদের মনগড়া আরও ব্যখ্যা উপস্থাপনের জন্য। বলা যায়, ধোকাবাজরা সাধারণ মানুষদের ধোকা দিতে গুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলে।
যেভাবে আপনারা করতেছেন। পাবলিক যদি একটু চিন্তা করে তবেই আপনাদের ধোকাবাজি থেকে রক্ষা পাবে। অন্যতায় আপনাদের সাথেই জাহান্নামে যাবে। আপনারা যেভাবে শব্দ ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করেছেন অর্থাৎ ইন্নামা শব্দটিকে দুই ভাগে ভাগ করে না বাচক প্রশ্ন বানিয়ে ফেলেছেন। তা কিন্তু আরবি শব্দার্থ জানে এমন কোন মানুষ গ্রহণ করবেনা। কেননা, বাস্তবে এই আয়াতে না প্রশ্ন করা বুঝায় আর না এখানে না বাচক কোন শব্দ আছে। আরবি ডিকশনারি যারা দেখবে তারাই সাক্ষী দিবে ইন্নামা শব্দটা দুটি আলাদা শব্দ নয়। বরং একটা শব্দ। ডিকশনারিতে আরবি #ইন্নামা শব্দের অর্থঃ নিশ্চয়ই (Indeed) কিন্তু (But) শুধুমাত্র (Only)  অন্যথায় (Rather)।
ইন্নামা শব্দ ব্যবহারিত কুরআনের আরো কয়েকটি আয়াতঃ
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمۡ لَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ ۙ  قَالُوۡۤا اِنَّمَا نَحۡنُ مُصۡلِحُوۡنَ
আর যখন তাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা যমীনে ফাসাদ করো না’, তারা বলে, ‘আমরা তো #কেবল সংশোধনকারী’ (আলকোরানঃ ২/১১)
وَ  اِذَا لَقُوا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قَالُوۡۤا اٰمَنَّا ۚۖ وَ  اِذَا خَلَوۡا اِلٰی شَیٰطِیۡنِہِمۡ ۙ قَالُوۡۤا اِنَّا مَعَکُمۡ ۙ اِنَّمَا نَحۡنُ مُسۡتَہۡزِءُوۡنَ
আর যখন তারা মুমিনদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এবং যখন তাদের শয়তানদের সাথে একান্তে মিলিত হয়, তখন বলে, ‘নিশ্চয় আমরা তোমাদের সাথে আছি। আমরা তো #কেবল উপহাসকারী’ (আলকোরানঃ ২/১৪)
উল্লেখ্যঃ اِنَّمَا শব্দটি কুরআনে ১৩৭ + এসেছে। সব অর্থই হচ্ছে, নিশ্চয়ই, কেবল, কিন্তু অর্থে এসেছে।

ইন্নামা اِنَّمَا শব্দটা দিয়ে দুটি আরবি বাক্য দেয়া হলো,
لأنكِ لستِ متفاهمة فحسب #إنما كريمة أيضًا
Because not only are you understanding, #but you're also gracious.
سكّان النهر الآخرون ليسوا بطعام #إنما الهاء فحسب
The river's other residents aren't food...  #just a distraction.
অর্থাৎ এই আয়াতের অর্থ হবে, ক্বূল - বলুন, ইন্নামা - নিশ্চয়ই, আনা - আমি, বাশারুন - মানুষ, মিসলুকুম - তোমাদের মতো, ইউহা – ওহি করা হয়, ইলাইয়া-আঁমার দিকে, আন্নামা-যে, ইলাইকুম-তোমাদের ইলাহা, ইলাহুন-ইলাহা, ওয়াহিদুন -এক।
সম্পৃর্ণ অর্থ দাঁড়ায়- বলুন,নিশ্চয়ই আঁমি বাশার (মানুষ) তোমাদের মতো, আঁমার নিকট ওহি করা হয় যে তোমাদের ইলাহাই একই ইলাহা। অর্থাৎ তোমাদের মতো মানুষ দিয়ে, আদম সন্তান যে উপাদানে সৃষ্টি , তিঁনি ও সে উপাদানে সৃষ্টি এরকম কথা এখানে বলা হয়েছে।
অন্যভাবে বল্লে, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ, আমার ও তোমাদের মাঝে পার্থক্য হলো, আমার নিকট ওহী আসে তোমাদের নিকট আসেনা।
আমার এই আলোচনা বিভিন্ন ঐতিহাসিক তাফসীর গ্রন্থের সার সংক্ষেপ। কারও যদি ইচ্ছে হয়, তবে তাফসীরে ইবনে কাসীর ও তাফসীরে জালালাইন দেখতে পারেন। অযথা বিভ্রান্ত এই বেরলভী গোষ্ঠীর মনগড়া ব্যখ্যা পড়ে বিভ্রান্ত হবেন না।

❎ *(ঘ)এখানে কুল -আমরে হাজর ওয়াহেদ ,ইন্নামা হা যা কালিমায়ে হসর । এখানে কালিমায়ে হসর এসেছে একমাত্র অর্থ দেওয়ার জন্য। “কুল ইন্নামা” এর অর্থ হে নবী দরূদ ও সালাম একমাত্র আঁপনার জবানে আপনি বলুন ,আনা -আমি , বাশারুম-মানে জিন্দুন।
জিন্দুন মানে চামড়া/নমুনা/সুরুত অর্থাৎ আমি নকশায় নমুনায় দেখতে, উপরের কভারের দিক দিয়ে, মিছলুকুম -তোমাদের মতই মানুষ ।
এখানে কথাটি শুধু রাসুলের ক্ষেত্রে খাছ। দুনিয়ার অন্য কারোও জবানে একথা বলা নিষিদ্ধ। কোন কারনে, কাদের উদ্দেশ্য নাযিল করা হল। আবার এখানে একদিকে “বাশার” শব্দ,আরেক দিকে “ওহী “শব্দ কেন লাগানো হল? তা বুঝতে হবে।

✅ উত্তরঃ এখানে জাস্ট অর্থ নিয়ে খেলা করা হয়েছে। নিজেদের ইচ্ছা মতো একটি স্পষ্ট অর্থের বিকৃতি করা হয়েছে। আগেই বলা হয়েছে (بَشَرٌ)  বাশারুন মানে মানুষ। কিন্তু অহেতুক এর অর্থ বানানো হয়েছে জিন্দুন। আশার কথা হলো, এবার কিন্তু مِّثۡلُکُمۡ এর অর্থ পরিবর্তন করা হয়নি। অর্থাৎ  মিছলুকুম দিয়ে "তোমাদের মতো" অনুবাদটি সঠিক করেছে। অথচ পাঠক দেখুন এর আগে কিন্তু সে ভিন্ন ভাবে অনুবাদ করেছেন। তিনি শেষে প্রশ্ন করেছে, একদিকে “বাশার” শব্দ,আরেক দিকে “ওহী “শব্দ কেন লাগানো হল? উত্তর হলো, বাশার দিয়ে আল্লাহ মুহাম্মদ সাঃ যে একজন মানুষ সেটা প্রকাশ করেছে। আর ওহী দিয়ে প্রকাশ করেছে, তিনি যে একজন আল্লাহর রাসূল সেটা। অতএব, এখানে না বুঝার কিছুই নেই।

❎ *(ঙ) হে নবী আঁপনি বলুন! আঁমি তোমাদের মত। উক্ত আয়াতে আল্লাহ রাসূল (দঃ) কে জনসম্মুখে বাশার বলার উদ্দেশ্য হল বিনম্রতা প্রকাশ করার জন্য।
যেমনঃ কোন রাজা তার প্রজাদের উদ্দেশ্য যদি বলেন “আমি তো আপনাদের গোলাম,আপনাদের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছি।” তাহলে এখন প্রজারা যদি রাজাকে গোলাম বলে ডাকে, তাহলে অবস্থা কি দাঁড়াব? একবার ভাবুন।
[তাফসীরে কবির,৫ম খণ্ড,৫১৬পৃঃ]
👏বিশ্ববিখ্যাত তাফসির রুহুল বয়ান ও জালালাইন শরীফ এ আর ও বলা হয়েছে,”আল্লাহ নিঁজে এই কথা বলে রাসুল কে উদারতা শিক্ষা দিয়েছেন।

✅ উত্তরঃ রাসূল সাঃ ফেরেস্তা বা জ্বিন জাতির অংশ নয়। তিনি মানুষ এবং আদম সন্তান অর্থাৎ মানব জাতির অংশ। সুতরাং তার দিয়ে কুরআনে এই স্বীকৃতি প্রদানের উন্নতম কারণ হচ্ছে, মানুষ যাতে তার বিষয়ে বাড়াবাড়ি না করে। কেউ যেন এটা মনে না করে, তিনি মানুষ নন বরং মানুষ জাতির উরধের কিছু বা দেবতা। তাফসীরে কবির আমার হাতে আসেনি৷ তবে অন্যান্য তাফসীর যেমন ইবনে কাসীর ও জালালাইন এই দুটি স্পষ্ট এই বিষয়ে উল্লেখ আছে যা আমি ইতি পূরবেই উল্লেখ করেছিলাম।

*(চ) এটি আয়াতে মুতাশাবিহাত!?! আল্লামা আব্দুল হক মোহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) বলেন
قل انماانابشرمثلكم
“কুল ইন্নামা আনা…….. ” এরকম যত আয়াত আছে এগুলো হল মুতাশাবিহাত।
[মাদারেজুন নবুয়্যত,১ম খণ্ড,অধ্যায়, ওয়াচলে ইজলাতুস শুবাহাত]
*(ছ).আল্লামা জালালউদ্দীন সূয়তী (রহঃ) বলেন “আল কোরআনে যে সমস্ত আয়াতে مثلكم শব্দটি এসেছে, এইগুলি আয়াতে মুতাসাবিহাতের আওতাভুক্ত।মুতাসাবিহাত এর অর্থ আল্লাহ এবং রাসুল ছাড়া কেও জানেনা,তাই সর্বসম্মতিক্রমে এই আয়াত দ্বারা কোনো দলিল হতে পারেনা।
[আল ইতকান ফি উলুমিল কুরআন,২য় খণ্ড,৩ পৃঃ]

*(জ)আয়াতে মুতাশাবিহাতের ব্যপারে কোরআনের সতর্কবানী দেখুনঃ তিঁনি আঁপনার প্রতি এই কিতাব অবতীর্ণ করিয়াছেন যাহার কিছু আয়াত “মুহকাম”এই গুলো কিতাবের মূল; আর অন্যগুলো “মুতাশাবিহ্” যাহাদের অন্তরে সত্য লংঘন করার প্রবনতা রয়েছে,শুধু তাহারাই ফিতনা ও ভুল ব্যখ্যার উদ্দেশ্য মুতাশাবিহাতের অনুসরন করে।
*আল্লাহ ব্যতীত ইহার ব্যখ্যা অন্য কেহ জানে না।আর যাহারা জ্ঞানে সুগভীর তাহারা বলে” আমরা ইহা বিশ্বাস করি,সমস্তই আমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আগত; এবং বোধশক্তি সম্পূর্নরা ব্যতীত অপর কেহ ইহার শিক্ষা গ্রহন করে না।”
[সূরা আল ইমরান,আয়াত নং ৭, তাফসীরে ইবনে কাসীর]
সুতরাং কুল ইন্নামা আনা……..কোন দলিল গ্রহন করা যাবে না।
✅ জবাবঃ এই শব্দ মুতাশাবিহাতের অন্তর্ভুক্ত শব্দ নয়। এইটা স্পষ্ট শব্দ। এইটা দিয়ে আল্লাহ কাফের মুশরিকদের ঐ ভ্রান্ত ধারণার জবাব দিয়েছেন যা তারা করত। তাদের ধারণা ছিল মানুষ কখনোই নবী হতে পারেনা, নিশ্চয়ই ইনি ফেরেস্তাই হবেন। অত:পর আল্লাহ বলেন, "قُلۡ لَّوۡ کَانَ فِی الۡاَرۡضِ مَلٰٓئِکَۃٌ یَّمۡشُوۡنَ مُطۡمَئِنِّیۡنَ لَنَزَّلۡنَا عَلَیۡہِمۡ مِّنَ  السَّمَآءِ  مَلَکًا  رَّسُوۡلًا
বল, ‘ফেরেশ্তারা যদি যমীনে চলাচল করত নিশ্চিন্তভাবে তাহলে আমি অবশ্যই আসমান হতে তাদের কাছে ফেরেশতা পাঠাতাম রাসূল হিসেবে’। (আলকোরানঃ ১৭/৯৫)
যদি এই ধরনের আয়াত ও শব্দ মুতাশাবিহার অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে ১৭/৯৪ ও ১৭/৯৫ আয়াত দুটির মধ্যে যেকোনো একটি অর্থহীন হয়ে যাবে।
مَاۤ  اَنۡتَ اِلَّا بَشَرٌ مِّثۡلُنَا ۚۖ فَاۡتِ بِاٰیَۃٍ  اِنۡ  کُنۡتَ مِنَ  الصّٰدِقِیۡنَ
‘তুমি তো কেবল আমাদের মত মানুষ, সুতরাং তুমি যদি সত্যবাদী হও তবে কোন নিদর্শন নিয়ে এসো’।
(আলকোরানঃ ২৬/১৫৪) এবার বলুন এই আয়াতে মিশলুনা শব্দটা কি সেই মুতাশাবিহা অরথে নিয়েছেন?
কেননা এখানে কিন্তু কাফেরদের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে তারা তাদের রাসূলদের তাদের মতো মানুষ বলে অস্বীকার করত। এবং এটাও তারা বলত, যদি তুমি রাসূল হও তাহলে নিরদশন নিয়ে এসো।
যখন রাসূল সাঃ বলেছেন "আমি তোমাদের মতো মানুষ " তখন রূপক অর্থে নিয়েছেন। এখন কাফেররা যখন বলছে তখন কি অর্থে নিবেন? 😃😃

❌*(ঝ.) মাওলানা জালালউদ্দিন রুমী মসনবী শরীফে বলেন- কাফিররাই হজরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বশর বলেছিল, কিন্তু তারা দেখে না যে,তিঁনি চন্দ্র কে দিখন্ডিত করেছিলেন,তারা বলেছিল “আমরা যেমন বশর নবীও আমাদের মত বশর” যেমন-ঘুমাই,পানাহার করে,তারা অজ্ঞাত ছিল যে,আমাদের এবং নবীদের মধ্য বেশুরম পার্তক্য রয়েছে।
মূল কথা হল: ঈসা(আ:) এঁর কিছু মোজেযা ছিল কিন্তু তাই দেখে উঁনাকে ইশ্বরের পুত্র বলা শুরু করল সবাই। রাসূল (ﷺ) কে যেন এমনকিছু না মনে করেন সেজন্য কিছু হাদিসে নবী এবং মানুষ এর বেশি না ভাবার জন্য সতর্কও করেছেন। এর মানে এটাই সীমার বাইরে গিয়ে কেউ যেন কুফরি না করেন। রাসূল (ﷺ) এঁর সারাটা জিন্দেগি ছিল অসীম মোজেযার সাগর তাই দেখে কাফিররা ফতোয়া দিল জাদুকর, রহমতের নবীকে সাধারন মানুষ ভয় পেয়ে দূরে সরতে থাকে তখন সেই পরিস্থিতিতে আল্লাহ কি ওঁনাকে শিখিয়ে দিয়ে এই আয়াত নাযিল করলেন যে: বলুন ”হে রাসূল ! আঁমিও তোমাদের মত মানুষ “। কেননা এই কথার দ্বারা রাসূলের বিনম্রতা তথা উদারতা প্রকাশ পেয়েছে। তার মানে এই নয় যে,তিঁনি আমাদের মত। (নাউযুবিল্লাহ)। কারন তিঁনি বেমেসাল মাখলুক।
✅ জবাবঃ এখানে প্রথম অংশে যা বলেছেন তা সত্যি কিন্তু  দ্বিতীয় অংশে যা বলেছেন তা কুরআনের আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক। ইতিমধ্যে ১৭/৯৫ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।
❎ *(ঞ.) এবার কোরআন শরীফের দুটি ভিন্ন আয়াতে কি বলা হয়েছে দেখুন:
ينساء النبى لستن كاحد من النساء
অর্থ: হে নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার আহলিয়া আলাইহিন্নাস সালাম! অর্থাৎ উম্মাহাতুল মু’মিনীন আলাইহিন্নাস সালাম আঁপনারা অন্য কোন মহিলাদের মতো নন।
[সূরা আহযাব,আয়াত নং ৩২]

এখানে রাসূল (ﷺ) এঁর স্ত্রীগনকে সরাসরি বলা হয়েছে” আঁপনারা জগতের অন্য কোন মহিলার মত নন।”সেখানে উম্মতের কাণ্ডারী, রাহমাতুল্লীল আলামীন নবীজি কি করে আমাদের মত হন?? কেনই বা উঁনার সাথে তুলুনা হবে??

✅ জবাবঃ নবীজি সাঃ এর স্ত্রী অন্যান্য নারীদের মতো না। যদি মতো বলা হতো তাহলে হয়তো অন্য আয়াত গুলোর অর্থ নিয়ে যেভাবে খেলেছেন সেভাবেই খেলতেন। যাক আর কষ্ট করতে হয়নি অর্থ পরিবর্তনের জন্য। দুনিয়ার কোনো মুসলিম এই কথা বলবেনা যে, নবী ও তার স্ত্রীগণ অন্যান্য সাধারণ মানুষদের মতো মানুষ। বরং তারা মর‍যাদা ও পূন্যবানের দিক দিয়ে সবার থেকে আলাদা। এই আয়াত দিয়ে রাসূল সাঃ এর স্ত্রীদের মান মরযাদার পারথক্য করেছে সাথে সতর্ক করেছেন। কেননা তারা যদি পাপাচারে লিপ্ত হয়, কিংবা অন্যান্য নারীদের মতো আচরণ করে, তবে তাতে তার রাসূল কষ্ট পাবে তাছাড়া এই কাজ তাদের জন্য শোভনীয় নয়। অতএব, আল্লাহ তাদের পৃথক করে দিয়ে এইভাবেই সতর্ক করেছেন।

❎ আবার ও লক্ষ্য করুনঃ
من اتخذ الهه هواه واضله الله على علم وختم على سمعه وقلبه وجعل على بصره غشاوة
অর্থ: “যে ব্যক্তি তার খেয়াল-খুশিকে স্বীয় উপাস্য স্থির করে নেয়, মহান আল্লাহ পাক তিঁনি জেনে শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট করেন,তার কান ও অন্তরে মোহর মেরে দেন এবং তার চোখের উপর আবরণ বা পর্দা রেখে দেন।”
[সূরা আল-জাসিয়াহ,আয়াত নং ২৩]
কেননা
يوحى الى
অর্থাৎ “আঁমার নিকট ওহী মুবারক এসে থাকে” এ বাক্যটি নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনাকে অন্য মানুষ থেকে আলাদা করে দিয়েছে। কেননা অন্য মানুষের নিকট ওহী মুবারক আসে না।
👌এখন জেনে শুনে, ইচ্ছা করে যদি কেউ রাসূলকে আমাদের মত মানুষকে রাসূলের সাথে তুলনা করে,তাহলে তার পরিনতি কি হবে? যা আল্লাহ তায়ালা তা সূরা জাসিয়াহর ২৩ নং আয়াতে বলে দিয়েছেন।

✅ জবাবঃ রাসূল সাঃ অন্যান্য মানুষের মতো একজন মানুষ আল্লাহ তাকে ওহী দিয়ে রিসালাতের মরযাদা দিয়েছেন।  কুরআনের এই ধরনের আয়াত গুলো সবাই পূর্ণ ভাবে মানে ও বিশ্বাস করে। কিন্তু বেরলভি ও শিয়ারা পরেরটাকে যথাযথ বিশ্বাস করলেও অর্থাৎ রাসূল হিসেবে মানলেও তিনি যে একজন মানুষ ও আদম সন্তান তা অস্বীকার করা হচ্ছে। যা কুরআনের এই আয়াত অংশকে অস্বীকার করার শামিল। আর ব্যাখ্যার মাধ্যমে তাই করা হয়েছে। (নাউজুবিল্লাহ)
চলবে....

✍️ Abubakkar Siddiq / 24 May 2022 

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ