নতুন দলই নতুন ফিৎনা, নতুন ফিৎনা থেকে সাবধান!

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
নতুন ফিৎনা থেকে সাবধান!
""""""""""""""'"''"''''''"""""""""""""""""""''''''''''''""
শরীয়তের বিধান প্রণয়নে ইসলামের মূলনীতি
হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য যত কিছু সৃষ্টি
করেছেন, তা সবই ভোগ ব্যবহার করা হালাল ও
মুবাহ। যদি আল্লাহ তায়ালা অকাট্য, সুস্পষ্ট ও
প্রমাণিত
ঘোষণায় তার মধ্যে কোনো কিছুকে হারাম
বলেন শুধু তাই হারাম। তা ব্যতীত অন্যসব
কিছুকে আল্লাহ মানুষের জন্য হালাল ও মুবাহ
করেছেন। অর্থাৎ যা ভোগ ব্যবহারের অনুমতি
দিয়েছেন তা কোনো অবস্থাতেই হারাম করা
যাবেনা। এমন কি কোনো যয়ীফ দূর্বল হাদিস
দিয়েও নয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যে সব
কিছুকে হালাল ও মুবাহ ঘোষণা করেছেন তা
আমার মুখের কথা নয়। বরং আল্লাহ নিজেই
বলেছেন,
ﻫﻮﺍﻟﺬﻱ ﺧﻠﻖ ﻟﻜﻢ ﻣﺎﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﺟﻤﻴﻌﺎ ‏(ﺍﻟﺒﻘﺮﺓ )
তিনিই সেই সত্তা যিনি বিশ্বজাহানের সব কিছু
তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন।
(আলকোরান, সূরা আল বাকারাহ, আয়াত ০২:২৯)
ﻭﺳﺨﺮ ﻟﻜﻢ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﻮ ﺕ ﻭﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﺟﻤﻴﻌﺎ
ﻣﻨﻪ ‏( ﺍﻟﺠﺎ ﺷﻴﺔ )
নভোমণ্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে সব
কিছুই তোমাদের আয়ত্ত্বাধীণ করে
দিয়েছেন।
(আলকোরান, সূরা জাসিয়া, আয়াত ৪৫:১৩)
ﺍﻟﻢ ﺗﺮﻭﺍﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺳﺨﺮ ﻟﻜﻢ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﺳﻤﻮ ﺕ ﻭﻣﺎ ﻓﻲ
ﺍﻻﺭﺽ ..... ‏( ﻟﻘﻤﺎﻥ )
তুমি কি লক্ষ্য করোনি, নভোমণ্ডল ও
ভূমন্ডলে যা কিছু আছে তা সবই আল্লাহ
মানুষের জন্য নিয়োজিত করেছেন?
(আলকোরান, সূরা লোকমান, আয়াত ৩১:২০)
ﺍﻟﻢ ﺗﺮ ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺳﺨﺮ ﻟﻜﻢ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ...... ‏( ﺍﻟﺤﺞ )
তুমি কি দেখনা, আল্লাহ তোমাদের কল্যাণে
নিয়োজিত করে রেখেছেন পৃথিবী তে যা
আছে সবকিছুকে।
(আলকোরান, সূরা হাজ্ব, আয়াত ২২:৬৫)
এসব ঘোষণা থেকে অকাট্য ও সুস্পষ্ট ভাবে
প্রমানিত হয় যে আকাশ মন্ডল ও পৃথিবীর সব
কিছুই আল্লাহ তায়ালা মানুষের কল্যাণের জন্য
সৃষ্টি করেছেন। মানুষের আয়ত্ত্বাধীণ
করেছেন যাতে মানুষ তা ভোগ ব্যবহার
করতে পারেন। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা মানুষের
প্রতি তার অপরিসীম অনুগ্রহের কথা জানিয়ে
দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে মাইক কি তার এ অপরিসীম অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত নয়? গোড়ামি পরিহার করে একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে একথা সুস্পষ্ট ভাবে অনুধাবন করা যাবে যে, মাইকও আল্লাহর অনুগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। এটা হারাম কিছু নয় বরং আল্লাহর অনুগ্রহ যদি এই মাইকের সুষ্ঠু ব্যবহার হয়। যেমন, লোহা দিয়ে ছুরি বানানোর পর ইহার যদি সুষ্ঠু ব্যবহার হয়, তা যেমন মানুষের জন্য কল্যাণকর। মাইকও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। মাইক শুধু গান বাজনায় অথবা অপ্রয়োজনে কুরআন খতম, ছবিনা খতম, গাউসিয়া খতম প্রভৃতিতে ব্যবহার করব এটা কখনো আল্লাহর এই নিয়ামতের সুষ্ঠু ব্যবহার নয়। বরং এই মাইক প্রয়োজনে ওয়াজ মাহফিলে, আযানে, নামাজে প্রভৃতি বৈধ কাজে ব্যবহার করব এটাই আল্লাহর এই নিয়ামতের সুষ্ঠু ব্যবহার। খুবই দুঃখের বিষয় এই যে, জ্ঞান সংক্ষীর্ণ গোড়ামিতে পরিপূর্ণ একশ্রেণীর লোক যেমন মাইকের অপব্যবহার করতেছে ঠিক তেমনি জ্ঞান সংক্ষীর্ণ গোড়ামিতে পরিপূর্ণ আরেক শ্রেণীর লোক মাইকের সুষ্ঠু ব্যবহারকেও হারাম বলে ফতোয়া দিচ্ছে। এ জন্য কুরআন হাদিসের অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে অসংখ্য অবান্তর কথার অবতারণা করতেছে। এভাবে এই দল সাধারণ মুসলিমদের বিভ্রান্ত পথে নিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মুসলিমদের জানা উচিত যে, মুসলিমগণ ইতিমধ্যে অনেক দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, আর প্রত্যেক দল নিজেদের মতের পক্ষে কুরআন হাদিসের দলিল দেখাচ্ছে। তাই বলে প্রত্যেক দলই যে সঠিক পথে আছে এমনটা কেউ বিশ্বাস করেনা। তেমনি "মাইক হারাম" স্লোগানের এই দলে যে সঠিক পথে এমনটা বিশ্বাস করা কঠিন। মনে রাখবেন, শরীয়তে অস্পষ্ট বিষয়কে আশ্রয় করে, অবান্তর কিছু কথা বলে অথবা ছোট বিষয়কে বড় করে, আলাদা দলে বিভক্ত হয়ে পীর সেজে, শুধু মাত্র নিজেদের জান্নাতী বলে দাবি করাটা ফিৎনাবাজদের লক্ষণ। অতিতেও যারা মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি করে ফিৎনা ছড়িয়েছে তারা এইরুপই করেছে।
তাই এখন আপনাদের জন্য পরামর্শ হলো, আপনারা "মাইক হারাম বা নাজায়িয" নামক এই ফিৎনা থেকে সাবধান থাকবেন। এবং বিভ্রান্ত এই দলের কথা শোনে আপনার মনে কোনরূপ প্রশ্ন জাগে, তবে বিজ্ঞ আলেমদের পরামর্শ নিন।
কার কত টাকা আছে, কে কত গরু জবাই করে সে বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কখনো সত্য মিথ্যা বুঝার চেষ্টা করবেন না। বরং নিজের বিবেককে স্বাধীন রেখে কোরআন হাদিসের সুস্পষ্ট বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে, সত্য মিথ্যা বুঝার চেষ্টা করুন।
আল্লাহ সকল মুসলিম ভাই বোনদের নতুন এই ফিৎনা সহ সকল ফিৎনা থেকে বেচেঁ থাকার তাওফিক দিক -- আমিন।
লেখক : ইবনে আব্দুল মালেক।

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ