ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা জবাব!!

   





ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্নের দাঁত ভাঙ্গা জবাব!!
প্রশ্নঃ ইবাদতে মাইক ব্যবহার করলে কি শিরিখ হয়? যদি না হয়,তবে যারা বলে ইবাদতে মাইক ব্যবহার করলে শিরিখ হয়,তাদের নিম্নক্ত দলিলের সঠিক ব্যখ্যা কি?
আল্লাহ বলেন,( ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﺗﺸﺮ ﻛﻮﺍﺑﻪ ﺷﻴﺌﺎ ( ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ ﻭﺍﻋﺒﺪﻭ "আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, আর তার সাথে কোনো বস্তুকে শরীক করোনা" (আলকোরান, সুরা নিসা, আয়াত :০৪/৩৬)। ( ﺍﻟﻜﻬﻒ ) ﻭﻻ ﻳﺸﺮﻙ ﺑﻌﺒﺎﺩﺕ ﺭﺑﻪ ﺍﺣﺪﺍ"এবং সে যেন আপন প্রতিপালকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে"(আলকোরান, সূরা আহকাফ, আয়াতঃ ১১০)। পবিত্র কোরআনের এই আয়াত গুলোতে যেহেতু আল্লাহর ইবাদতে অন্য কোনো বস্তুকে শরীক করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেহেতু আমরা কিছুতেই মাইক নামক বস্তুটি ইবাদতে শরীক করতে পারবোনা। ........আল্লাহর ইবাদতে মাইক ব্যবহার করা কোন ক্রমেই জায়িয নহে বরং ইহা জগন্যতম শিরকের আকবর। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ঢাকা, বাংলদেশ কর্তৃক প্রকাশিত, ২০০৫ শিক্ষাবর্ষের নবম -দশম শ্রেণীর 'ইসলাম- শিক্ষা' গ্রন্থের চতুর্থ পৃষ্ঠার শিরক অনুচ্ছেদে উল্লেখ করা হয়েছে : আল্লাহর ইবাদতে অন্য কোনো শক্তি বা বস্তু শামিল করাও শিরক।" যেহেতু বিদ্যুৎ এক প্রকার শক্তি এবং মাইক বস্তু তাই বর্ণিত দলিল মুত্বাবিক এটা স্পষ্ট শিরক হচ্ছে। নাউযুবিল্লাহ! (ফাতহুল মুবীন, পৃষ্ঠা ১৮-১৯)।
উত্তরঃ ইসলাম সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তি খুব সহজেই বুঝতে পেরেছেন উপরোক্ত দলিলের সাথে তার ব্যখ্যা কত হাস্যকর। সাধারণ মুসলিম ভাইদের এভাবেই কোরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যা করে ধোঁকা দিচ্ছে কথিত এই আলেম নামের জাহেলরা। এদের শিরক সম্পর্কে যে সুস্পষ্ট কোনো জ্ঞান নাই তা আমার আলোচনার মাধ্যমে বুঝতে পারবেন ইন্সাআল্লাহ। আল্লাহর ইবাদতে কোনো বস্তুর শরীক বলতে ইবাদতের তিনটি অবস্থাকে বুঝায়।
(১) আল্লাহর পাশাপাশি বা আল্লাহকে বাদদিয়ে অন্য কোন বস্তুর ইবাদত করা।
(২) কোন বস্তুর সাহায্যে বা মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা। এবং
(৩) মানুষকে দেখানোর জন্য ইবাদত করা। এই তিনটি পয়েন্ট আমি পর্যায়ক্রমে বিস্তারিত আলোচনা করতেছি,
(১) আল্লাহর পাশাপাশি বা আল্লাহকে বাদদিয়ে অন্য কোন বস্তুর ইবাদত করা শিরিখ। এটা নিয়ে বুঝাবুঝির কিছুই নেই। আশা করি যারা ইবাদতে মাইকের ব্যবহার শিরিখ ফতোয়া দিচ্ছেন তাঁরাও বিষয়টি জানেন যে, যারা ইবাদতে মাইক ব্যবহার করতেছে তারা আল্লাহকে বাদদিয়ে বা পাশাপাশি ইবাদত করতেছে না। বরং (২) কোন বস্তুর সাহায্যে বা মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা " এই পয়েন্টা ইবাদতে মাইকের ব্যবহার শিরিখ বলে ফতোয়া দেয়ার মূল কারণ। তাই আমি এই পয়েন্টটি বিস্তারিত আলোচনা করতেছি, "কোনো বস্তুর সাহায্যে বা মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করা শিরিখ " এই পয়েন্টটিতে বস্তুর সাহায্যে এবং বস্তুর মাধ্যম মাধ্যম অর্থ : বস্তুর সাহায্য নিয়ে ইবাদতে মাধ্যম সৃষ্টি করা। বস্তুর সাহায্যঃ যদি একটু ভেবে দেখ তবে দেখবেন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইবাদতের সময় আমরা অনেক বস্তুর সাহায্য গ্রহণ করি।
যেমনঃ ১/ ঘড়ির সাহায্যঃ ইহা পরোক্ষ সাহায্য। কোরানে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, ﺍﻟﻦﺳﺎﺀ)  )ﺍﻥ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻛﺎﻧﺖ   ﻋﻠﻲ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻛﺘﺎﺑﺎﻣﻮﻗﻮﺗﺎ নিশ্চয়ই মূমেনদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে সালাত ফরজ করা হয়েছে। (আলকোরান, সূরা আল নিসা,আয়াত ০৪/১০৩)। অতএব, বলা যায় নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় করা ফরজ। কিন্তু আমরা সালাতের এই গুরুত্বপূর্ণ ফরজ আদায়ের জন্য সূর্যের সাহায্য নিচ্ছি। বর্তমানে ঘড়ির সাহায্য।
২/ আগুনের সাহায্যঃ ইহা প্রত্যক্ষ সাহায্য, দিন শেষে যখন রাত আসে তখন আগুন বা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালিয়ে ইবাদত করতে হয়। অন্ধকারে ইবাদত করা ইসলামে অপছন্দনীয়। এভাবে আমরা ইবাদতে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অনেক কিছুর সাহায্য গ্রহণ করি। আর আমরা বিশ্বাস করি, এগুলো ইবাদতের উপকরণ। ইবাদতের মাধ্যম নয়। মাইকও তার ব্যতিক্রম কিছু নয়। তবে আমি একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, তা হলো কিভাবে বস্তুর সাহায্যে ইবাদত করলে শিরিখ হয় অথবা কোরানের উপরোক্ত আয়াত গুলো বস্তুর সাহায্যে ইবাদত করা বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা। এই সাহায্যের ধরণ অন্যরকম। যেমন মক্কার মুশরিকরা যখন আল্লাহর ইবাদত করত তখন তারা আল্লাহর ভিবিন্ন নেক্কার বান্দাদের কবর, ছবি, মূর্তি অথবা আল্লাহর কল্পিত ছবি বা মূর্তির সাহায্য গ্রহণ করত। এখানে তারা যাদের বা যেসব বস্তুর উসীলা বা সাহায্য গ্রহণ করত তা ছিল প্রথমত অপ্রয়োজনীয় দ্বিতীয়ত তারা এসব বস্তুকে কেন্দ্র করে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করত। এই মুশরিকরা বিশ্বাস করত যে, আল্লাহর নেক্কার বান্দাদের এসব কবর, ছবি, মূর্তি র সাহায্যে বা উসীলায় ইবাদত করলে তারা (নেক্কার বান্দাহগণ) তাদের (মুশরিকদের) কবুলের জন্য সুপারিশ করবে এবং আল্লাহও তা কবুল করে নিবে। কোরানে এভাবেই তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস তুলে ধরা হয়।
( ﻭﻳﻌﺒﺪﻭﻥ ﻣﻦ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﺎﻻﻳﻀﺮ ﻫﻢ ﻭﻻﻳﻨﻔﻬﻢﻭﻳﻘﻮﻟﻮﻥ ﻫﺆﻻﺀ ﺷﻔﻌﺎ ﻭﺀﻧﺎﻋﻨﺪﺍﻟﻠﻪ ﻗﻞ ﺍﺗﻨﺒﻮﻥ ﺍﻟﻠﻪﺑﻤﺎﻻﻳﻌﻠﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺴﻤﻮﺕ ﻭﻻﻓﻲ ﺍﻻﺭﺽ ﺳﺒﺤﻨﻪ ﻭﺗﻌﻠﻲﻋﻤﺎ ﻳﺸﺮﻛﻮﻥ  ﻳﻮﻧﺲ ) "তারা আল্লাহকে বাদদিয়ে যে সবের ইবাদত করে, সেগুলো না তাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে, আর না উপকার করতে পারে। তখন তারা বলে, এরা আল্লাহর কাছে আমাদের সাফায়াত কারী। বলুন, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয় অবহিত করতে চাও, মহাকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে যে বিষয়ে তিনি জানেন না? তিনি ত্রুটিমুক্ত পবিত্র এবং সেসব থেকে উর্ধ্বে যাদেরকে তোমরা শরীক করতেছে " (আলকোরান, সূরা ইউনূস, আয়াত :১০/১৮) ﺍﻟﺰﻣﺮ))..... ﻓﺎﻋﺒﺪﺍﻟﻠﻪ ﻣﺨﻠﺼﺎﻟﻪ ﺍﻟﺪﻳﻦ - ﺍﻻﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺨﺎﻟﺺﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺗﺨﺬﻭﺍﻣﻨﺪﻭﻧﻪ ﺃﻭﻟﻴﺎﺀ ﻣﺎﻧﻌﺒﺪ ﻫﻢ ﺍﻻﻟﻴﻘﺮ ﺑﻮﻧﺎﺍﻟﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺯﺍﻓﻲসুতরাং আল্লাহর ইবাদত কর বিশুদ্ধচিত্তে, জেনে রাখ, অবিমিশ্রিত আনুগত্য আল্লাহর প্রাপ্য। যাহারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অবিভাবক রূপে গ্রহণ করে (তাহারা বলে), আমরা এদের পূজা এজন্যই করি, এরা আমাদের আল্লাহর সান্নিধ্যে আনিয়া দিবে" (আলকোরান, সূরা যুমারঃ আয়াত ৩৯/২-৩)। এখন কেউ যদি এরকম ভ্রান্ত আক্বিদা ধারণ করে মাইকের সাহায্যে ইবাদত করে ইবাদতে মাধ্যম বানায়, যে ইবাদতে মাইক ব্যবহার করলে আল্লাহ ভাল শোনতে পাবেন এবং আল্লাহ ইবাদত কবুল করবেন। তবে ইবাদতে মাইক ব্যবহার অবশ্যই শিরিখ হবে। আর এভাবে কোনো বস্তুর সাহায্য নিয়ে আল্লাহর ইবাদতে মাধ্যম সৃষ্টি করে শিরিখ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,( ﻭﺍﻋﺒﺪﻭﺍﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻﺗﺸﺮﻛﻮﺍﺑﻪ ﺷﻴﺌﺎ ..... ( ﺍﻟﻨﺴﺎ "আর তোমরা আল্লাহর ইবাদতে কোনো বস্তুকে শরীক করোনা" (আলকোরান, সূরা নিসা, আয়াত ৪/৩৬)। বস্তুতঃ এরূপ কোনো ভ্রান্ত নিয়ত বা উদ্দেশ্য নিয়ে ইবাদতে মাইক ব্যবহার করা হয়না। বরং অন্যান্য উপকরণের মতোই কেবল মাত্র শব্দের মাধ্যম হিসেবে ইবাদতে মাইক ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া এখানে নিয়ত হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবীজি (সা) বলেছেন, "সকল কাজই নিয়তের উপর নির্ভরশীল, প্রত্যেকেই তাই পায় যা সে নিয়ত করে " (সহীহ্ আল বোখারি খন্ড নং ০১ হাদিস নং ০১)। উত্ত হাদিস দ্বারা একথা সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, ইবাদতের সময় সামনে যা কিছুই থাকুক (নিষিদ্ধ জিনিস ব্যতীত, যেমনঃ কবর, মূর্তি, ছবি) কেউ যদি কোনো রকম ভ্রান্ত বিশ্বাস ছাড়া আল্লাহর উদ্দেশ্যে ইবাদত করে, অবশ্যই তার ইবাদত অন্য কোনো কারণে কবুল না হলে শিরিখ হবেনা। এরপরও যদি এমন কথা আমাকে বলা হয় যে, রাসূল (সা) ইবাদতে মাইক ব্যবহার করেননি তাই ইবাদতে মাইক ব্যবহার নাজায়েজ। তবে উত্তরে আমি বলব রাসূল (সা) তো ঘড়ি দেখে নামাজ আদায় করেনি। তবে ঘড়ি দেখে নামাজ পড়া কিভাবে জায়েজ?
০৩/ রিয়া অর্থাৎ মানুষকে খুশি করা বা দেখানোর জন্য আল্লাহর ইবাদত করলে তা শিরিখ হবে। কিন্তু আমরা ইবাদতে মাইক ব্যবহার করি মানুষকে খুশি বা দেখানোর জন্য নয় বরং শোনানোর জন্য। যেমন বক্তা যখন খুতবা দেয় তা সামনের মানুষদের শোনানোর উদ্দেশ্য করে দেয়। ইমাম যখন তাকবীর বলে উচ্চস্বরে তখন মুসল্লীদের শোনানোর উদ্দেশ্য করে বলে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, বক্তা বা ইমাম ঐ মানুষদের ইবাদত করতেছে। মনে রাখতে হবে যে, রিয়ার ব্যপারটা মানুষের মনের ব্যপার। মানুষ যদি মনে মনে কাউকে দেখানোর জন্য কোনো ইবাদত করে ভেড়ায়, তা হোক মাইক ছাড়া কিংবা মাইক দিয়ে। তা অবশ্যই শিরিখ হবে। কিন্তু এই অদৃশ্য বিষয় নিয়ে কাউকে তাকফির করার অধিকার আমাদের নেই। যেহেতু, কারও মনের খবর আমাদের জানা নেই। অতএব, বুঝা গেল, ইবাদতে মাইকের ব্যবহারের উপর নয় বরং ইবাদতে মাইক ব্যবহার কারীর নিয়তের উপর 'রিয়া' নির্ভর করে। আশা রাখি উপরোক্ত আলোচনা থেকে ইবাদত কেন্দ্রিক শিরিখ এবং এই সম্পর্কে নাযিল হওয়া কোরআনের আয়াত গুলোর সঠিক ব্যাখ্যা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছেন।
বিনীতঃ ইবনে আব্দুল মালেক।

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার কি শিরক?

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ