কোরআন স্পর্শ করতে ও পড়তে ওযুর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

কোরআন স্পর্শ করতে ও পড়তে ওযুর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?
Qur'an

কোরান স্পর্শ করতে ওযু লাগবে নাকি স্বাভাবিক পবিত্রতায় যতেষ্ট? এমন প্রশ্ন আজকাল অনেক সাধারণ মুসলিমদের। মূলত এই প্রশ্ন নতুন ভাবে ভাবিয়ে তুলেছে আধুনিক কিছু স্কলার। যারা এই প্রজেন্মর সকল প্রকার মুসলিমদের কোরান পড়তে উৎসাহিত করে যাচ্ছে। এই প্রকারের স্কলাররা সাধারণত এই দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে যে, "কোরান স্পর্শ করতে বা পড়তে আলাদা ভাবে ওযুর প্রয়োজন নেই, বরং সাধারণ পবিত্রতায় যতেষ্ট" মূলত এই দৃষ্টিভঙ্গির মুসলিমদের সাথে অধিকাংশ আলেম দ্বিমত পোষণ করতেছে। যারা দ্বিমত পোষণ করে তারা "সূরা 
ওয়াকিয়াহ, আয়াত ৫৬/৭৯" আয়াতটিকে দলিল হিসেবে উপস্থাপন করে। তাদের এই দলিল কতটুকু প্রাসঙ্গিক তা নিয়েই আজকের এই লেখা।

ইন্সাল্লাহ, এই পর্যায়ে আমি ওযুর বিধান ও উল্লিখিত আয়াতটির সঠিক তাৎপরয তুলে ধরা চেষ্টা করব।
যখন মুসলিমদের উপর আল্লার পাক সালাত ফরজ করেছিল ঠিক তখনই তিনি অযুর বিধান নাযিল করে বলেন,
يقول الله تعالى "يا أيها الذين آمنوا إذا قمتم إلى الصلاة فاغسلوا وجوهكم وأيديكم إلى المرافق وامسحوا برءوسكم وأرجلكم إلى الكعبين "
(المائدة :6)
অর্থাৎ-“হে মু’মিনগণ! যখন তোমরা সালাতের উদ্দেশ্যে দন্ডায়মান হও তখন (নামাযের পূর্বে)তোমাদের মুখমন্ডল ধৌত কর এবং হাতদ্বয় কে কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও,আর মাথা মাসেহ কর এবং পা দ্বয় কে টাখনু পর্যন্ত ধৌত কর” (সূরা মা’য়িদা :৬)
আমরা জানি সর্বপ্রথম যখন কোরান নাযিল হচ্ছিল  (609 খ্রিষ্টাব্দ) তখন ওযুর এই বিধান নাযিল হয়নি। বরং যখন (610 খ্রিষ্টাব্দ) থেকে সালাতের বিধান নাযিল হয়, ঠিক তখনই ওযুর বিধান নাযিল হয়। স্পষ্টত উপরোক্ত আয়াতে সরাসরি সালাতকেই মেনশন করা হয়েছে। ইহা এমন কোন আম আয়াত নয়, যেটা দিয়ে সকল ধরনের ইবাদত করার পূর্বে ওযুকে বাধ্যতামূলক করা যাবে।  তাই, এটা দিয়ে কোরান স্পর্শ করতে ও পড়তে ওযুকে বাধ্যতামূলক করা যাবেনা। অন্য ভাবে বলা যায়, ওযু হলো এক বিশেষ পবিত্রতা অর্জন করা, যা শরীর পাক পবিত্র থাকলেও সালাতে দাঁড়ানোর পূর্বে নির্দিষ্ট নিয়মে আপনাকে করতে হবেই।
যেটা কোরান স্পর্শ ও পড়া কিংবা অন্যকোন ইবাদতের ক্ষেত্রে আবশ্যিক নয়।

কোরআন স্পর্শ ও পড়ার ক্ষেত্রে ওযু করাকে শর্ত হিসেবে জুড়ে দেয়ার দলিল ও তার বিশ্লষণঃ
দলিলঃ আল্লাহ বলেন,  
ﻻﻳﻤﺴﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﻭﻥ
( ﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺔ)
"মুত্বাহিরগণ ছাড়া ওটা (কোরআন) কেউই স্পর্শ করতে পারবেনা" (আলকোরান, সূরা ওয়াকিয়াহ, আয়াত ৫৬/৭৯)।
উপমহাদেশের অধিকাংশ আলেমেদ্বীন উক্ত আয়াতের 'মুত্বাহিরগণ' শব্দ দ্বারা মানুষকে এবং 'উহা' শব্দ দ্বারা দুনিয়ায় নাযিলকৃত কোরআনকে বুঝিয়েছেন। অনেক তাফসিরগণও এরূপ অর্থ করেছেন। বস্তুত এটি একটি ভুল ব্যখ্যা। মূলত এই আয়াত বা শব্দ দুটির অর্থ বুঝার জন্য এর পূর্বের দুই আয়াত এবং আয়াতগুলু নাযিলের প্রেক্ষাপট সহ আলোচনা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এই আলেমেদ্বীনেরা তা করেইনি। বরং ঐ আয়াতটিকে বিচ্ছিন্ন ভাবে আলোচনা করে নিজেদের একটি মতের দলিল বানিয়েছে মাত্র। (আল্লাহ তাদের ভুলটাকে ক্ষমা করুক এবং শুদ্ধটি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুক)। ইন্সাল্লাহ! এই পর্যায়ে আমি উক্ত আয়াতের সঠিক মর্ম বুঝানোর চেষ্টা করব :
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,
ﺍﻧﻪ ﻟﻘﺮﺍﻥ ﻛﺮﻳﻢ - ﻓﻲ ﻛﺘﺐ ﻣﻜﻨﻮﻥ - ﻻﻳﻤﺴﻪ ﺍﻻ
ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﻭﻥ ‏( ﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺔ )
"নিশ্চয়ই ইহা একটি সম্মানিত কোরআন-যাহা আছে সুরক্ষিত কিতাবে-মুত্বাহিরগণ ছাড়া ওহা কেউ স্পর্শ করতে পারেনা "
(আলকোরান, সূরা ওয়াকিয়াহ, আয়াত: ৫৬/৭৭-৭৯)
উপরোক্ত আয়াত তিনটির শানেনযুল হলো, রাসূলুল্লাহ (সা) এর উপর যখন কোরআন নাযিল হচ্ছিল, তখন মক্কার কাফের মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সা) এর প্রতি এই অভিযোগ উত্তাপণ করত যে, মুহাম্মদের উপর যা নাযিল হচ্ছে তা শয়তানেরা নাযিল করেন। তাদের এই অভিযোগের জবাবে আল্লাহ তায়ালা আয়াত তিনটি একসাথে নাযিল করেন। এ আয়াতগুলু দ্বারা আল্লাহ তায়ালা বুঝাতে চাচ্ছেন, এ কোরআন তিনি এমন এক সুরক্ষিত কিতাবে অর্থাৎ লওহে মাহফুজে সংরক্ষণ করে রেখেছে, যেখানে মুত্বাহিরগণ অর্থাৎ ফেরেস্থাগণ ব্যতীত আর কেউ অর্থাৎ শয়তান রা কখনো এর ধারে কাছেও পৌছাতে পারবেনা। সুতরাং, এই কোরআন শয়তানেরা নাযিল করেন এই ধরনের কথা ডাহা মিথ্যা কথা। অতএব,
ﻻﻳﻤﺴﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻤﻄﻬﺮﻭﻥ ‏( ﺍﻟﻮﺍﻗﻌﺔ )
"মুত্বাহিরগণ ছাড়া কেউ উহা স্পর্শ করতে পারেনা " মানে, ফেরেস্থাগণ ছাড়া কেউ লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত কোরানটি স্পর্শ করতে পারেনা। এই আয়াতটির সঠিক মর্ম আরও স্পষ্টভাবে বুঝার জন্য আপনি ৪৩ নং সূরা আয যুখরুফের ৪ নং আয়াত এবং ৮৫ নং সূরা আল বুরুজের ২১ ও ২২ নং আয়াত পড়ুন।

পরিশেষে এই বিষয়ে আমার অভিমত হলো, যদি গোসল ফরজ না হয় এবং শরীরে নাপাক কিছু লেগে না থাকে,  এমন অবস্থায় ওযু ছাড়াও কোরআন স্পর্শ ও পড়া উভয় করা যাবে, অন্যথায় না।

বি দ্রঃ লেখার কিছু অংশ আমার অন্য লেখা থেকে কপি করেছি।

লেখকঃ আবুবকর সিদ্দিক।
8 July 2020

Comments

  1. কোরআন স্পর্শ করতে ও পড়তে ওযুর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ