বেরলভী সম্প্রদায় পরিচিতি Introduction Berilavi community
বেরলভী সম্প্রদায় পরিচিতি!!
আবুবকর সিদ্দিক।
সুন্নিদের মধ্যে অসংখ্য দল বা ফিরকা রয়েছে। যেমন, হানাফি, সাফেঈ, মালেকি, হাম্বলি, আহলে হাদিস, সালাফি, কাদিয়ানি ও বেরলভী।
তার মধ্যে শিয়াদের খুব কাছাকাছি অবস্থানে আছে বেরলভী সম্প্রদায়। এই দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান আহমেদ রেজা খান বেরলভী (১৮৫৬-১৯২১)। যিনি ইমাম আহমদ রেজা খান, ইমাম আহমদ রেজা খান কাদেরী, বা আ'লা হযরত নামেও পরিচিত।
আহমেদ রেজা খান বেরলভী |
তিনি ভারতের উত্তর প্রদেশের বেরেলি জেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। আহমেদ রেজা খান "কানযুল ঈমান" নামক দীর্ঘ একটি কোরানের তাফসীর লিখেন। যে তাফসীর থেকেই মূলত তার অনুসারীরা নিজেদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের দলিল দিয়ে থাকেন।
বেরলভী সম্প্রদায় সুন্নিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুসংস্কার ও বিদাতে ভরপুর একটি দল। যে দলটি অন্যান্য সুন্নি দল গুলো দ্বারা সমালোচিত। এই দলটি মূলত পীর, দরগাহ ও মাজার কেন্দ্রিক। বেরলভী সম্প্রদায় নবীজি (সাঃ) সহ তার পরিবার পরিজন ও বিভিন্ন আলেম উলামাদের প্রতি অতিরিক্ত ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা প্রকাশ করতে গিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কার ও বিদাতে জড়িয়ে পড়ে।
হযরত খান জাহান আলীর সমাধিস্থলে বেরলভী সম্প্রদায়ের কর্মকাণ্ডের দৃশ্য।
এই সম্প্রদায় নিজেদের একমাত্র নবী প্রেমিক সুন্নি দল বলে দাবি করে এবং অন্যান্য সুন্নি দল গুলোকে ওহাবি ও নবী বিদ্ধেষী বলে প্রচার করে। যেমনটি শিয়া সম্প্রদায় সুন্নিদের আহলে বাইত বিদ্ধেষী বলে প্রচার করে থাকে।সুন্নিদের মধ্যে এরাই একমাত্র দল যারা শিয়া সম্প্রদায়ের মতো "ঈদে মিলাদুন্নবী" উদযাপন করে থাকে।
বেরলভী সম্প্রদায়ের ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন। |
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে এদের বেশি দেখা যায়। আমাদের বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায় এদের লক্ষণীয় ভাবে দেখা যায়। নবীজি (সাঃ) সাথী সঙ্গীদের গালি দেওয়ার বিষয়টি বাদ দিলে, বাকি সব ক্ষেত্রেই এই দলটি শিয়া মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত। যদিও নিজেদের হানাফি সুন্নি পরিচয় দিতে পছন্দ করে।
তাদের উদ্ভাবিত মতবাদ গুলি হচ্ছে,
1/ নবীজি (সাঃ) নূরের সৃষ্টি ছিলেন।
2/ নবীজি (সাঃ) গায়েব জানতেন।
3/ নবীজি (সাঃ) হাযের নাযের।
4/ নবীজি (সাঃ)কে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছে।
5/ নবীজি (সাঃ)কে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি হতোনা।
6/ এরা মাজারের মৃত মানুষ জীবিত মানুষদের সাহায্য করতে পারেন এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে।
7/ আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করতে পীর বা মাজারের উসীলা বাধ্যতামূলকও মনে করেন।
8/ মাজার মান্নত ও মাজারে সিসদাহ দেওয়া সহ অনেক মাজার কেন্দ্রিক অপকর্মে লিপ্ত।
এছাড়াও এই সম্প্রদায় "ঈদে মিলাদুন্নবী" নামক নতুন এক ঈদ উদযাপন করে, যেটাকে এরা সকল ঈদের সেরা ঈদ বলে প্রচার করে থাকে। Click
শবেমিরাজ ও শবেবরাত নামক দুটি রাতে বিশেষ ইবাদত করে থাকে।
নবীজি (সাঃ)এর উপর দরূদ পাঠের সময় এরা দাঁড়িয়ে যায় এবং বেশিরভাগ সময় দরূদ হিসেবে কবি ও শায়েরদের বানানো কিছু উর্দু, ফারসি কবিতা পড়ে। যেমন, ইয়া নবী সালামু আলাইকা....( তালিবউদ্দিন আহমদ) বালাগুল ওলা বেগুমালিহি...(ফারসি কবি রুমি) মুস্তফা জানে রহমত পেঁ লাখো সালাম.... (আহমেদ রেজা খান বেরলভী)।
এই দলটি নিজেদের উদ্ভাবিত বিশ্বাস ও আমলের দলিল কোরান হাদিস থেকেও দিয়ে থাকে, যেমনটি কিছু লোক "মাইক হারামের" দলিল দিয়ে থাকে।
তাদের মাহফিল গুলোতে ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস ও আমল নিয়ে আলোচনা করার চেয়ে নিজেদের উদ্ভাবিত বিশ্বাস ও আমলে গুলি প্রচার ও প্রমাণে ব্যস্ত থাকে বেশি। তাদের প্রতিটিি মাহফিলে প্রতিটি বক্তা এইসব অমৈলিক, মনগড়া বিশ্বাস ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করে। তারা মনিবের চেয়ে গোলামের গুণাগুণ বর্ণনা করে বেশি। অর্থাৎ বেলরভীরা নবীজি (সাঃ) ও কথিত অলি- বুজুরগু, পীর-মাশায়াকদের আজগুবি গল্পই যেন বেশি বলে বেড়ায়।
এরা মক্কা, মদিনা, ও বাইতুল মুকাদ্দাস ছাড়াও বিভিন্ন মাজার গুলিকে পবিত্র স্থান মনে করে এবং সওয়াবের উদ্দেশে যায়। এছাড়াও টাকা-পয়সা, গরু-ছাগল ইত্যাদি দেয়।
বেরলভী সম্প্রদায়ের মাজার কেন্দ্রিক শিরক ও বিদাতী কর্মকাণ্ড।
পীর, দরগাহ ও মাজার ভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে এই দলটি প্রচার প্রসারের কাজ চালায়।
দুর্বল ঈমান ও আবেগ মিশ্রিত ভালবাসাকে পুঁজি করে বেলরভীরা যখন গ্রাম বাংলার মানুষদের মাজার দিয়ে ধোঁকা দিচ্ছিল। তখন একজন বাঙালি লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ "লালসালু" নামের একটি উপন্যাস রচনা করেন। যা শিক্ষিত সমাজে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এছাড়াও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামও তার লেখনীতে এদের সমালোচনা করে লিখেছেন,
"তাওহিদের এই চির সেবক,
ভুলিয়ে গেছে সে তাকবির।
দূর্গা নামের কাছাকাছি প্রায়,
দরগায় গিয়ে লুঠায় শির।
ওদের যেমন রাম নারায়ণ,
এদের তেমনই মানিক পীর।
ওদের চারু ও কলার সাথে,
মিশিয়ে গেছে এদের ক্ষীর"
আরবের ধর্মীয় সংস্কারক শেখ আব্দুল ওহাব (রহঃ) সুফি ও শিয়া মতবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। বেরলভী সম্প্রদায় যেহেতু সুফি ও শিয়া মতবাদ দ্বারা প্রভাবিত। তাই আব্দুল ওহাবের সংস্কার আন্দোলন বেরলভী সম্প্রদায়ের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। মূলত অন্যান্য সুন্নি দল গুলোকে বেলরভীরা "ওহাবি" বলে গালি দেওয়ার পিছনের কারণ এই যে, তারা "শেখ আবদুল ওহাব (রহঃ)" এর শিরিক,বিদাতের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রতি একমত পোষণ করেন। এবং তাদের (বেরলভী সম্প্রদায়ের) শিরিক ও বিদাতি কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা করেন।
এইভাবেই অনেকেই তাদের কর্মকান্ডের সমালোচনা করে লেখালেখি করেন।
বি দ্রঃ উপরোক্ত সকল তথ্য ও ছবি উইকিপিডিয়া এবং অন্যান্য ইন্টারনেট সোর্স থেকে নেওয়া।
সুন্দর
ReplyDelete