উম্মি নবী / Nabi al-Ummi / النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ
উম্মি নবী (Nabi al-Ummi / النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ)
উম্মি নবী / Nabi al-Ummi / النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ |
নিরক্ষর ও মূর্খ শব্দ দুটি অর্থের দিকে একই বা সমার্থক হলেও ব্যবহাররে দিকে সব ভাষায় সম্পূর্ণ ভিন্ন।
'নিরক্ষর' শব্দটি ব্যবহার হয় সম্মানের সাথে কারও বাস্তব সত্য নেতিবাচক এই গুণ প্রকাশ করতে, যে সে লিখতে ও পড়তে জানেনা। অন্যদিকে 'মূর্খ' শব্দটি ব্যবহার হয় তিরোস্কার অর্থে কিংবা কাউকে গালি দেওয়ার সময়।
'Ummi' an online dictionary |
কোরানেও এর ব্যবহার আলাদা ভাবে উল্লেখ আছে।
যেমন, আমাদের নবীজি (সাঃ) লিখতে বা পড়তে জানতেন না। তাই যখন তার নিরক্ষরতার এই নেতিবাচক বিশেষণ তুলে ধরেছেন তখন উম্মি বা নিরক্ষর শব্দ ব্যবহার করেছেন।
Translated Araf-157 |
اَلَّذِیۡنَ یَتَّبِعُوۡنَ الرَّسُوۡلَ النَّبِیَّ الۡاُمِّیَّ الَّذِیۡ یَجِدُوۡنَہٗ
مَکۡتُوۡبًا عِنۡدَہُمۡ فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ ........
যারা অনুসরণ করে রাসূলের , উম্মী নবীর , যার উল্লেখ তারা তাদের কাছে তাওরাত ও ইঞ্জীলে লিপিবদ্ধ পায় ..... (Surah al Araf: 157)
.... فَاٰمِنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہِ النَّبِیِّ الۡاُمِّیِّ الَّذِیۡ یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَ کَلِمٰتِہٖ وَ اتَّبِعُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تَہۡتَدُوۡنَ ﴿۱۵۸﴾
..... কাজেই তোমারা ঈমান আন আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর রাসূল উম্মী নবীর প্রতি যিনি আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহে ঈমান রাখেন। আর তোমারা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমারা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও। (Surah al Araf: 158)
নবীজি (সাঃ) এর নিরক্ষর হওয়াকে অনেকেই নেতিবাচক ভাবে দেখেন। তাই তারা الۡاُمِّیِّ শব্দের ভিন্ন অর্থে গ্রহণ করেন। বাস্তব সত্য হলো, সে সময়ে নবীজি (সাঃ) কোথাও শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়না। এমনিতেই আরবরা ছিল নিরক্ষর ধরনের জাতি। খুব কম আরব লোক লেখা পড়া জানতেন। তাদের বিষয়ে কুরানে বলা হয়েছে,
ہُوَ الَّذِیۡ بَعَثَ فِی الۡاُمِّیّٖنَ رَسُوۡلًا مِّنۡہُمۡ یَتۡلُوۡا عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتِہٖ وَ یُزَکِّیۡہِمۡ وَ یُعَلِّمُہُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحِکۡمَۃَ ٭ وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلُ لَفِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ ۙ﴿۲﴾
তিনিই উম্মীদের (আরবদের) মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে, যিনি তাদের কাছে তেলাওয়াত করেন তাঁর আয়াতসমূহঃ তাদেরকে পবিত্র করেন এবং তাদেরকে শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত; যদিও ইতোপূর্বে তারা ছিল ঘোর বিভ্ৰান্তিতে।
(Surah al Zumah-62:2)
নবীজি (সাঃ) লিখতে পড়তে জানতেন কিন্তু কোরান নাযিলের পূর্বে কোন কিতাব পড়েননি এমন কথা অবান্তর।
এই অবান্তর কথার জবাব দিয়ে আল্লাহ্ বলেন,
وَ مَا کُنۡتَ تَتۡلُوۡا مِنۡ قَبۡلِہٖ مِنۡ کِتٰبٍ وَّ لَا تَخُطُّہٗ بِیَمِیۡنِکَ اِذًا لَّارۡتَابَ الۡمُبۡطِلُوۡنَ ﴿۴۸﴾
"আর তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব তিলাওয়াত করনি এবং তোমার নিজের হাতে তা লিখনি যে, বাতিলপন্থীরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে" (Surah al Ankabut:48)
অধিকাংশ কোরানের তাফসীরকারক 'নিরক্ষর' অর্থে গ্রহণ করেছে।
বর্তমান সময়ের তথাকথিত কিছু নবী প্রেমিক এই অর্থের বিরোধিতা করে বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে থাকে। তারা এইটা বুঝতে চেষ্টা করেনা যে, কোরানে যতবার ব্যবহার হয়েছে ততবারই 'নিরক্ষর' অর্থে এসেছে। নিচে আরও কিছু আয়াত উল্লেখ করলাম।
وَ مِنۡہُمۡ اُمِّیُّوۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ الۡکِتٰبَ اِلَّاۤ اَمَانِیَّ وَ اِنۡ ہُمۡ اِلَّا یَظُنُّوۡنَ ﴿۷۸﴾
"আর তাদের মধ্যে আছে নিরক্ষর, তারা মিথ্যা আকাঙ্খা ছাড়া কিতাবের কোন জ্ঞান রাখে না এবং তারা শুধুই ধারণা করে থাকে"
(Al Quran- 2:78)
فَاِنۡ حَآجُّوۡکَ فَقُلۡ اَسۡلَمۡتُ وَجۡہِیَ لِلّٰہِ وَ مَنِ اتَّبَعَنِ ؕ وَ قُلۡ لِّلَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ وَ الۡاُمِّیّٖنَ ءَاَسۡلَمۡتُمۡ ؕ فَاِنۡ اَسۡلَمُوۡا فَقَدِ اہۡتَدَوۡا ۚ وَ اِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنَّمَا عَلَیۡکَ الۡبَلٰغُ ؕ وَ اللّٰہُ بَصِیۡرٌۢ بِالۡعِبَادِ {۲۰ ﴾
যদি তারা তোমার সাথে বিতর্ক করে, তবে তুমি বল, ‘আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করলাম এবং আমার অনুসারীরাও’। আর যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (ইহুদি-খ্রিস্টান) তাদেরকে এবং নিরক্ষরদেরকে (আরবদের) বল, ‘তোমরা কি ইসলাম গ্রহণ করেছ’? তখন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তারা অবশ্যই হিদায়াতপ্রাপ্ত হবে। আর যদি ফিরে যায়, তাহলে তোমার দায়িত্ব শুধু পৌঁছিয়ে দেয়া। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। (Al Quran-3:20)
ইহার বাইরে যে শব্দটি কোরানে পাওয়া যায় তা হচ্ছে 'উম্মাহ' বা জাতি (Nation)। উপরোক্ত আয়াত গুলো যে জাতি অর্থে আসেনি তা পাঠক বুঝতে পেরেছেন। কেননা উম্মি ও উম্মাহ শব্দ দুটি মূল ধাতু এক হলেও অর্থ, শব্দ ও উচ্চারণ ভিন্ন।
নাবিয়্যুন আল উম্মিয়্যুনের ব্যখ্যা তাফসীরে জালালাইনে খুব সুন্দর ভাবেই আলোচনা করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুনঃ
Comments
Post a Comment