যার পীর নাই তার হেদায়েত নাই!

#প্রশ্নঃ কুরআন মাজিদের সূরা কাহাফের ১৭ নং আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলেন,
وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَلَنۡ تَجِدَ لَہٗ وَلِیًّا مُّرۡشِدًا
আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, সে হেদায়াতপ্রাপ্ত। আর যাকে ভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য পথনির্দেশকারী কোন অভিভাবক পাবে না।
অতঃপর এই আয়াত থেকে কিছু লোক বলেঃ "যার পীর নেই তার হেদায়েত নেই " এই কথাটি কতটুকু সঠিক তা জানালে উপকৃত হবো।?

#উত্তরঃ আগেই বলে রাখি, হেদায়েতের একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালা। যারা এই বিশ্বাসে সুদৃঢ় তাদের জন্যই আমার উত্তর ফলপ্রসূ হতে পারে। অতঃপর আপনি যদি এই দলের অন্তর্ভুক্ত হন তবে ইন্সাল্লাহ! আপনি অবশ্যই সহজেই বুঝতে সক্ষম হবেন।
এবার উত্তরে আসা যাক। কোরানে পথপ্রদর্শক শব্দটি দুটি আরবি শব্দে ব্যবহার হয়েছে। একটি হলো 'হাদি' (ہَادِ) ২২/৫৪ অপরটি হচ্ছে 'মুর্শিদ' (مُّرۡشِدًا) ১৮/১৭। দুটির অর্থই পথপ্রদর্শক বা পথপ্রদর্শনকারী। আবার পথপ্রাপ্তদের ব্যাপারে দুটি শব্দ ব্যবহার হয়েছে একটি 'মুহতাদুন' (الۡمُہۡتَدُوۡنَ) ২/১৫৭ অপরটি 'রাশেদুন' (الرّٰشِدُوۡنَ) ৪৯/৭
আপনার উল্লেখিত এই আয়াত ছাড়াও কোরানের আরও বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তিনি ছাড়া কোন পথনির্দেশকারী নেই বলে দাবি করেছেন। এবং এটাও বলেছেন তিনি একমাত্র পথপ্রদর্শনকারী। কুরআনের আয়াত গুলো অনুধাবনের চেষ্টা করবেনঃ
قُلۡ اِنَّ ہُدَی اللّٰہِ ہُوَ الۡہُدٰی ؕ وَ لَئِنِ اتَّبَعۡتَ اَہۡوَآءَہُمۡ بَعۡدَ الَّذِیۡ جَآءَکَ مِنَ الۡعِلۡمِ ۙ مَا لَکَ مِنَ اللّٰہِ مِنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ
বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহর হিদায়াতই হিদায়াত’ আর যদি তুমি তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ কর তোমার কাছে যে জ্ঞান এসেছে তার পর, তাহলে আল্লাহর বিপরীতে তোমার কোন অভিভাবক ও সাহায্যকারী থাকবে না। (সূরাঃ আল বাক্বারাহ - ২/১২০)
قُلۡ ہَلۡ مِنۡ شُرَکَآئِکُمۡ مَّنۡ یَّہۡدِیۡۤ اِلَی الۡحَقِّ ؕ قُلِ اللّٰہُ یَہۡدِیۡ لِلۡحَقِّ ؕ اَفَمَنۡ یَّہۡدِیۡۤ اِلَی الۡحَقِّ اَحَقُّ اَنۡ یُّتَّبَعَ اَمَّنۡ لَّا یَہِدِّیۡۤ اِلَّاۤ اَنۡ یُّہۡدٰی ۚ فَمَا لَکُمۡ ۟ کَیۡفَ تَحۡکُمُوۡنَ
বল, ‘তোমাদের শরীকদের কেউ কি আছে, যে সত্যের পথ দেখাবে’? বল, ‘আল্লাহই সত্যের পথ দেখান। যিনি সত্যের পথ দেখান, তিনিই কি অনুসরণ করার অধিক হকদার, নাকি সে, যে পথ দেখানো ছাড়া পথ পায় না। সুতরাং তোমাদের কী হল? তোমরা কেমন বিচার করছ’।
(সূরা ইউনুসঃ ১০/৩৫)
قُلۡ اِنَّ اللّٰہَ یُضِلُّ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَہۡدِیۡۤ اِلَیۡہِ مَنۡ اَنَابَ
বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যে তাঁর অভিমুখী হয়, তাকে তিনি তাঁর দিকে পথ দেখান’। (সূরা আর রাদঃ ১৩/২৭)
وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ ہَادٍ

আর আল্লাহ যাকে পথহারা করেন, তার কোন হিদায়াতকারী নেই (সূরাঃ আর রাদ - ১৩/৩৩)
وَ کَفٰی بِرَبِّکَ ہَادِیًا وَّ نَصِیۡرًا
আর পথপ্রদর্শক ও সাহায্যকারী হিসেবে তোমার রবই যথেষ্ট। (সূরা ফুরকান - ২৫/৩১)
ذٰلِکَ ہُدَی اللّٰہِ یَہۡدِیۡ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ ہَادٍ
এটা আল্লাহর হিদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হিদায়াত করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হিদায়াতকারী নেই। (সূরাঃ আয যুমার - ৩৯/২৩,৩৬)
اِنَّ عَلَیۡنَا لَلۡہُدٰی

নিশ্চয় পথ প্রদর্শন করাই আমার দায়িত্ব। (সূরাঃ আল লাইল - ৯২/১২)

উপরোক্ত সবগুলি আয়াতই এই নির্দেশনা দিচ্ছে যে আল্লাহ ছাড়া আর কোন পথনির্দেশকারী নেই।
প্রশ্ন থেকে যায় কিছু মানুষ সূরা কাহাফের ১৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় পথপ্রদর্শনকারী বলতে পীরকে টেনে আনে কেন?
কারণ হচ্ছে পীর ও মুর্শিদ শব্দ দুটিকে তারা এক করে ফেলেছেন। তারা হয়তো এইভাবে চিন্তা করেছেনঃ কোরানে অন্যান্য আয়াতে পথপ্রদর্শক 'হাদি' দিয়েই উল্লেখ করা হয়েছে। যেহেতু এখানে মুর্শিদ বলা হয়েছে, তাই তাদের মধ্যে প্রচলিত পীর, মুর্শিদকেই বুঝানো হয়েছে। অথচ পীর মানে শিক্ষক আর মুর্শিদ মানে পথপ্রদর্শক। অর্থের দিকে থাকালে সহজেই বুঝা যায় হাদি যিনি মুর্শিদও তিনি।
নিচে আয়াতটি উল্লেখপূর্বক আরও বিস্তারিত আলোচনা করলাম,
وَ مَنۡ یُّضۡلِلۡ فَلَنۡ تَجِدَ لَہٗ وَلِیًّا مُّرۡشِدًا
আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, সে হেদায়াতপ্রাপ্ত। আর যাকে ভ্রষ্ট করেন, তুমি তার জন্য পথনির্দেশকারী কোন অভিভাবক পাবে না। (সূরাঃ আল ক্বাহাফ - ১৮/১৭)
কোরানের এই আয়াত গুহাবাসীদের প্রসংগে নবীজি সাঃ কে বলা হয়েছে।
অর্থাৎ হে রাসূল! আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার জন্য আল্লাহ ছাড়া পথনির্দেশ দিবে এমন কাউকে অভিবাবক হিসেবে পাবেনা। এখানে মূলত আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে বলেছেন। তিনি স্পষ্টত যেটা বুঝিয়েছেন সেটা হলো, পথপ্রদর্শক হিসেবে এমন কেউ নেই তিনি ছাড়া যে পথনির্দেশ দিতে পারবে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ
আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন পথনির্দেশকারী নেই। (সূরাঃ আয যুমার - ৩৯/২৩,৩৬)।
পরিশেষে তাদের ধূম্রজাল থেকে মুক্তি পেতে কোরানের আরও একটি আয়াত উল্লেখ করলামঃ
اِنَّکَ لَا تَہۡدِیۡ مَنۡ اَحۡبَبۡتَ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِالۡمُہۡتَدِیۡنَ
নিশ্চয় তুমি যাকে ভালবাস তাকে তুমি হিদায়াত দিতে পারবে না; বরং আল্লাহই যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন। আর হিদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে তিনি ভাল জানেন। (সূরাঃ ক্বাসাস - ২৮/৫৬)
এখানে আল্লাহ তায়ালা নবীজি ﷺ কে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, নবীজি সাঃ চাইলেও কাউকে পথপ্রদর্শন করতে পারবেনা যদি আল্লাহ না চান। সুতরাং আল্লাহর রাসূল ﷺ যদি কাউকে হেদায়েত করতে না পারেন, তাহলে তথাকথিত এই পীর, মৌলভীরা কিভাবে হেদায়েত করতে পারবেন?
অতঃপর হেদায়েতের বিষয়টি আল্লাহর উপর নির্ভর করে। কোন নবী কিংবা প্রচলিত কোন অলি, পীর, মুর্শিদ ইত্যাদির উপর নির্ভর করেনা। যার পীর নেই তার হেদায়েত নেই এই কথাটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ঈমান বিদ্ধংষী কথা। হেদায়েতের মালিক যদি আল্লাহ না হয়ে পীর হতেন, তবেই কথাটি গ্রহণযোগ্য হতো। অথচ হেদায়েতের একমাত্র মালিক আল্লাহ।

উল্লেখ্য মুমিন যদি নেককার বান্দাহ বা পীরের সংস্পর্শ লাভ করে তার ঈমান ও আমল বৃদ্ধি হয়। কিন্তু এর মানে এই নয় যে নির্দিষ্ট কাউকে অন্ধ ভাবে অনুসরণ করবে এবং তাকেই পথপ্রদর্শক মনে করবে। (নাউযুবিল্লাহ) যা আমাদের সমাজে প্রচলিত। যদি এমনটা হয় তবে সে কোরানের আয়াতের বিরুদ্ধাচরণ করার মতো পাপে লিপ্ত হবে। যা মুমিনদের জন্য কিছুতেই শোভনীয় নয়।
আশাকরি উত্তর পেয়েছেন।
বিঃদ্রঃ বর্তমান সময়ে পীর নামধারী বেশিরভাগ মানুষই পথভ্রষ্ট। যারা দ্বীনকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

হাদি, মুর্শিদ, Guide, পীর, শিক্ষক, মুহতাদুন, রাশেদুন, হেদায়েত।
যার পীর নাই তার হেদায়েত নাই / যার পীর নাই তার পীর শয়তান!

❤ পরিশেষে সকল ভাল কাজই আল্লাহর জন্য।

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ