আল্লাহর নামে জিকির

জিকির শুধুমাত্র আল্লাহর নামেই হয়। জিকির আল্লাহর ইবাদত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নামে জিকির করা শিরক।

ذِکۡرًا
জিকির, যিকির, Jikir, zikir, ذِکۡرًا

কুরআনে আল্লাহ কেবল তার জিকির করতে বলেছেন। কারণ তার নামই সুন্দর ও বরকতময়।

اَللّٰہُ  لَاۤ  اِلٰہَ  اِلَّا ہُوَ ؕ لَہُ  الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ﴿۸﴾
আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। (সূরা ত্বাহা - ২০/৮)
ہُوَ اللّٰہُ  الۡخَالِقُ الۡبَارِئُ  الۡمُصَوِّرُ لَہُ الۡاَسۡمَآءُ  الۡحُسۡنٰی ؕ یُسَبِّحُ لَہٗ  مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ۚ وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۲۴﴾
তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারী; তাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ; আসমান ও যমীনে যা আছে সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। (সূরা হাশর - ৫৯/২৪)
وَ لِلّٰہِ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی فَادۡعُوۡہُ بِہَا ۪ وَ ذَرُوا الَّذِیۡنَ یُلۡحِدُوۡنَ فِیۡۤ  اَسۡمَآئِہٖ ؕ سَیُجۡزَوۡنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۸۰﴾
আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। (সূরা আরাফ - ০৭/১৮০)

تَبٰرَکَ اسۡمُ  رَبِّکَ ذِی الۡجَلٰلِ  وَ  الۡاِکۡرَامِ ﴿۷۸ ﴾
তোমার রবের নাম বরকতময়, যিনি মহামহিম ও মহানুভব। (সূরা আর রহমান - ৫৫/৭৮)
وَ اذۡکُرِ اسۡمَ رَبِّکَ وَ تَبَتَّلۡ  اِلَیۡہِ تَبۡتِیۡلًا ؕ﴿۸﴾
আর তুমি তোমার রবের নামে জিকির কর এবং একাগ্রচিত্তে তাঁর প্রতি নিমগ্ন হও। (সূরা মুজাম্মিল - ৭৩/৮)
وَ اذۡکُرِ اسۡمَ  رَبِّکَ بُکۡرَۃً  وَّ اَصِیۡلًا ﴿ۖۚ۲۵﴾
আর সকাল-সন্ধ্যায় তোমার রবের নামে জিকির কর, (সূরা ইনসান - ৭৬/২৫)

یٰۤاَیُّہَاالَّذِیۡنَ  اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰہَ  ذِکۡرًا کَثِیۡرًا﴿ۙ۴۱﴾
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। - সূরা আহযাব।

=> রাসূলুল্লাহ সাঃ আল্লাহর জিকির করতেন,

আয়িশাহ্ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাবস্থায় মহামহিয়ান আল্লাহর জিকির করতেন। (সহীহ: মুসলিম) 

=> নিম্নের হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ আল্লাহর জিকির করতে উৎসাহিত করেছেঃ

"আবূ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না, তোমাদের কাজ-কর্মের মধ্যে কোন্ কাজটি তোমাদের মালিকের কাছে অধিক পবিত্র এবং তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধির ব্যাপারে অধিক কার্যকর। তাছাড়া তোমাদের জন্য সোনা-রূপা দান করার চেয়েও শ্রেষ্ঠ এবং এ কথার চেয়েও শ্রেষ্ঠ যে, তোমরা শত্রুর মুকাবিলা করবে, তাদের গলা কাটবে, আর তারা তোমাদের গলা কাটবে (যুদ্ধ করবে)। তাঁরা উত্তরে বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তা হলো আল্লাহর জিকির করা। (মিশকাতুল মাসাবিহ - ২২৬৯)

=> নিম্নের হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ আল্লাহর জিকির করাকে সর্বোত্তম আমল বলেছেঃ

‘আবদুল্লাহ ইবনু বুসর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার এক বিদুঈন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, সর্বোত্তম ব্যক্তি কে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি, যে দীর্ঘ হায়াত পেয়েছে এবং যার ‘আমল নেক হয়েছে। সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রসূল! কোন ‘আমল সর্বোত্তম? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তুমি যখন দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবে তখন তোমার মুখে আল্লাহর জিকিররত থাকবে। (তিরমিযী; আহমদ) (মিশকাতুল মাসাবীহঃ 2270)

=> নিম্নের হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ আল্লাহর জিকির না করাকে ক্ষতির কারণ বলেছেঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন জায়গায় বসেছে, আর সেখানে আল্লাহর জিকির করেনি, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী সে বৈঠক তার জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি বিছানায় শুয়েছে অথচ আল্লাহর জিকির করেনি, আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী তা তার জন্য ক্ষতির কারণ হবে। (আবূ দাঊদ) (মিশকাতুল মাসাবীহ 2272)

=> নিম্নের হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ আল্লাহর জিকির ছাড়া বেশি কথা বলতে নিষেধ করেছেন। অর্থাৎ আল্লাহর জিকির ছাড়া অন্য কোন কথা বেশি বলতে নিষেধ করেছেন। সাথে এটাও বলেছেন, আল্লাহর জিকির ছাড়া অন্য কথা গুলো মানুষের অন্তর কঠিন করে দেয়।

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহর জিকির ছাড়া বেশি কথা বলো না। কেননা আল্লাহর জিকির ছাড়া অন্য কথা বেশি বলা হৃদয় কঠিন হয়ে যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর শক্ত হৃদয়সম্পন্ন ব্যক্তিই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলা হতে সবচেয়ে বেশি দূরে। (তিরমিযী,মিশকাতুল মাসাবীহঃ 2276)

=> নিম্নের হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ আল্লাহর জিকির কারী জিহবাকে শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলেছেঃ

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমাদের কারো শ্রেষ্ঠ সম্পদ হলো আল্লাহর জিকিরকারী জিহবা, কৃতজ্ঞতা স্বীকারকারী অন্তর ও মু’মিনাহ্ স্ত্রী; যে তার (স্বামীর) ঈমানের (দীনের) ব্যাপারে সহযোগিতা করে। (আহমদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ) (মিশকাতুল মাসাবীহ 2277)

=> নিম্নের হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ আল্লাহর জিকির ছাড়া মানুষকে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় বলেছেঃ
‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ শয়তান আদম সন্তানের কলবের বা অন্তরের উপর জেঁকে বসে থাকে। যখন সে আল্লাহর জিকির করে তখন সরে যায় আর যখন গাফিল বা অমনোযোগী হয় তখন শয়তান তার দিলে ওয়াস্ওয়াসা দিতে থাকে। (বুখারী, মিশকাতুল মাসাবীহ 2281)

=> নিম্নের হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ আল্লাহর জিকির ছাড়া কোন আল্লাহর বান্দাহ আযাব থেকে রক্ষা পাবেনা বলেছেঃ

"মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর যিকিরের চেয়ে আল্লাহর ‘আযাব হতে রক্ষা করতে পারার মতো কোন ‘আমল আল্লাহর কোন বান্দা করতে পারে না। (মালিক, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ) (মিশকাতুল মাসাবীহ 2284)

=> নিম্নের হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাঃ আল্লাহর জিকির কারীর সাথেই আল্লাহ থাকেন বলেছেঃ

আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা যখন আমার জিকির করে আমার জন্যে তার দুই ঠোঁট নড়ে তখন আমি তার কাছে থাকি। (মিশকাতুল মাসাবীহঃ 2285)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই কথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহর নামই সুন্দর ও বরকতময়। আল্লাহর জিকিরই সর্বশ্রেষ্ঠ, আল্লাহর জিকির আযাব থেকে রক্ষা করবে, আল্লাহর জিকিরই শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবে, আল্লাহর জিকিরই অন্তর নরম করবে। আল্লাহ্ তার নামে জিকির কারীর সাথেই থাকেন।
অতঃপর আল্লাহ ছাড়া আর কারও নামে জিকির করা যাবেনা।


অথচ কিছু সুন্নি লেবাসে শিয়া বলে, আলী রাঃ এর নামে জিকির করা ইবাদত (নাউযুবিল্লাহ) 
#স্ক্রিনশট দেখুন।

শাহিন আহমেদ নামক একজন সুন্নি লেবাস ধারী শিয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাস এর স্ক্রিনশট।
শাহিন আহমেদ নামক একজন সুন্নি লেবাস ধারী শিয়ার ফেসবুক স্ট্যাটাস এর স্ক্রিনশট।

❤ অবশেষে সকল ভাল কাজই আল্লাহর জন্য।
লেখকঃ আবুবকর সিদ্দিক।
২৪/৪/২০২২

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ