এক নজরে নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর শানে প্রচলিত মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর কিছু কথা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ

এক নজরে নবী মুহাম্মাদ সাঃ এর শানে প্রচলিত মিথ্যা, বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর কিছু কথা ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ

1️⃣ মুহাম্মদ সাঃ কে প্রথম সৃষ্টি করা হয়েছে, পাঠিয়েছেন পরে!
#ব্যাখ্যাঃ আমরা জানি প্রথম মানুষ ও নবী আদম (আঃ)। এবং আদম আঃ থেকেই মানব জাতির সূচনা হয়। অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

2️⃣ মুহাম্মদ সাঃ নূরের সৃষ্টি!
#ব্যাখ্যাঃ আমরা জানি আদম আঃ কে মাটি দিয়েই সৃষ্টি করা হয়েছিল। আর এই হিসেবে প্রত্যেক আদম সন্তান মাটির সৃষ্ট মানুষ।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

3️⃣ মুহাম্মদ সাঃ কে সৃষ্টি না করলে কিছুই সৃষ্টি হতোনা!
#ব্যাখ্যাঃ এইটা একটা বিভ্রান্তিকর কথা যার কোন ভিত্তি নাই৷ কেননা আল্লাহর ইচ্ছার মধ্যে কোন সৃষ্টি শরত হতে পারেনা। আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করেন।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

4️⃣ আদম ও হাওয়া (আঃ) মুহাম্মদ সাঃ এর উসীলায় দোয়া করেছেন!
#ব্যাখ্যাঃ আমরা জানি আল্লাহ পাক আদম ও হাওয়া আঃ কে একটা দোয়া শিক্ষা দিয়েছিল। যে দোয়া পড়ে তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিল। দোয়াটি সূরা আরাফে ২৩ আয়াতে উল্লেখ আছে।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

5️⃣ মুহাম্মদ সাঃ মারা যায়নি!
#ব্যাখ্যাঃ আমরা জানি শুধুমাত্র আল্লাহ পাক অমর ও অবিনশ্বর। সুতরাং মুহাম্মদ সাঃ সহ দুনিয়ার সকল প্রাণীর মৃত্যু ও ধংস অনিবার্য। এটা চিরন্তন সত্য বিষয়।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

6️⃣ মুহাম্মদ সাঃ গায়েব জানতেন!
#ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ বলেন, গায়েবের কুঞ্জি আল্লাহর নিকট তিনি ছাড়া আর কেহ গায়েব জানেনা (আলকোরানঃ ৬/৫৯)।
তাছাড়া তিনি যদি গায়েব জানতেন, তবে তার উপর ওহী নাযিলের প্রয়োজন হতোনা। কেননা গায়েব যিনি জানেন তিনি সব কিছুই জানবেন অটোমেটিকেলি।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

7️⃣ মুহাম্মদ সাঃ হাজির নাযির!
#ব্যাখ্যাঃ হাজির ও নাযির মানে তিনি সব জায়গায় সবসময় উপস্থিত থাকেন, এবং সব কিছুই দেখেন ও শোনেন। অথচ আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালায় একমাত্র দৃশ্য, অদৃশ্য, উপস্থিত, অনুপস্থিত সব কিছুই দেখেন ও শোনেন। কুরআনে এই বিষয়ে অসংখ্য আয়াত আছে।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

8️⃣ মুহাম্মদ সাঃ সাহায্য করতে পারেন!
#ব্যখ্যাঃ মুহাম্মদ সাঃ মারা গেছেন। সুতরাং কোন মৃত মানুষ জীবিতদের সাহায্য করতে পারেন এইটা বিভ্রান্তিকর কথা। যা মানুষদের শিরকের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়। অর্থাৎ মানুষ আল্লাহর পরিবর্তে তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বেড়াবে।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

9️⃣ মুহাম্মদ সাঃ সব কিছুই দেখেন ও শোনেন! (নাউজুবিল্লাহ)
#ব্যাখ্যাঃ আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালায় সব কিছুই দেখেন ও শোনেন। এইটা তারই একক বৈশিষ্ট্য। কুরআনে এই বিষয়ে অসংখ্য আয়াত আছে।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

🔟 মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহকে দেখেছেন!
#ব্যাখ্যাঃ এই বিষয়ে হযরত আয়শা রাঃ কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিল, যে ব্যক্তি বলবে মুহাম্মদ সাঃ তার প্রভুকে দেখেছেন সে মিথ্যাবাদী। এরপর তিনি কুরআনের ৬/১০৩ আয়াতটি পাঠ করেন।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

1️⃣1️⃣ মুহাম্মদ সাঃ মানুষ নয়, বরং মানুষ রূপে এসেছেন!
#ব্যাখ্যাঃ এইটা মুশরিকদের বিশ্বাস। কেননা তারা মনে করত, মানুষ কখনোই নবী হতে পারেনা। অথচ আল্লাহ মানুষের কাছে মানুষকেই নবী হিসেবে প্রেরণ করেন। দেখুন, ১৭/৯৫
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

1️⃣2️⃣ মুহাম্মদ সাঃ এর ছায়া ছিলোনা!
#ব্যাখ্যাঃ মুহাম্মদ সাঃ নূরের সৃষ্ট প্রমাণের জন্য জাল হাদিসের উপর ভিত্তি করে তারা এই ভিত্তিহীন কথা বলে থাকে। সহীহ্ হাদিসে আছে মহানবী সাঃ এর স্ত্রী যয়নব রাঃ নবীজি সাঃ এর ছায়া দেখতে পেয়েছিল। এছাড়াও একাধিক হাদিসে আছে, ফেরেস্তারা মেঘমালা দিয়ে রাসূল সাঃ কে ছায়া দিতেন। মুহাম্মদ সাঃ নূরের সৃষ্ট হলে কিংবা  ছায়া না থাকলে তার ছায়ার কি প্রয়োজন?
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

1️⃣3️⃣ মুহাম্মদ সাঃ এর জন্মদিন চার খলিফা উদযাপন করেছিল!
#ব্যাখ্যাঃ মুহাম্মদ সাঃ কোন সালের, কোন মাসের, কোন তারিখে জন্মগ্রহণ করেছে হাদিসে তার উল্লেখ নাই। ঐতিহাসিক লেখকরা তার জন্ম তারিখ নিয়ে অনেক মতভেদ উল্লেখ করেছে। অথচ সাহাবীগণ নবীজি সাঃ এর জন্মদিন বা মিলাদুন্নবী উদযাপন করলে এতো মতভেদের প্রয়োজন হতোনা।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

1️⃣4️⃣ মুহাম্মদ সাঃ যাকে ইচ্ছা হেদায়েত করতে পারতেন! (নাউজুবিল্লাহ)
#ব্যাখ্যাঃ হেদায়েত দানের মালিক আল্লাহ। এইটা স্বীকৃত একটি আক্বিদাহ। তাছাড়া তিনি যদি হেদায়েত দানের ক্ষমতা রাখতেন, তবে তার প্রিয় চাচা আবু তালেব কাফের অবস্থায় মারা যেতেন না।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

1️⃣5️⃣ মুহাম্মদ সাঃ কে আল্লাহ তার ধনভাণ্ডার দিয়ে দিয়েছেন! (নাউজুবিল্লাহ)
#ব্যাখ্যাঃ ধনভান্ডারের মালিক আল্লাহ। এটাও একটি স্বীকৃত আক্বিদাহ। মুহাম্মদ সাঃ যদি ধনভান্ডারের মালিক হতেন, তবে তার উম্মতগণ কেউ গরীব থাকতেন না। পিতার সম্পদের ওয়ারিশ যেমন সন্তানেরা হয়। ঠিক নবীজি সাঃ এর সম্পদের ওয়ারিশ তার অনুসারীরা হতো। অথচ আল্লাহ কাকে সম্পদ দিবেন আর কাকে কাছ থেকে কেড়ে নিবেন সেটা তিনিই ঠিক করেন। এইজন্য দেখা যায় কাফেরাও দুনিয়ায় অনেক সম্পদের মালিক হয়ে থাকে।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

1️⃣6️⃣ আহমদ ও আহাদের (আল্লাহর) পারথক্য মিম বরণ! (নাউজুবিল্লাহ)
#ব্যাখ্যাঃ কোন সৃষ্টির মরযাদা উল্লেখ করতে গিয়ে স্রষ্টার সাথে তুলনা করা মূরখতা। যা সুস্পষ্ট শিরক।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

1️⃣7️⃣ আল্লাহ হচ্ছেন দাতা আর মুহাম্মদ সাঃ বণ্টনকারী!
#ব্যাখ্যাঃ মুহাম্মদ সাঃ এর কাছে সাহায্য চাওয়া জায়েজ প্রমাণের জন্যই এই কথা বলে থাকে। মূলত আল্লাহর কাছে ছাড়া আর কারও কাছে সাহায্য চাওয়া বা দোয়া প্রার্থনা করা শিরক। অর্থাৎ যেসকল সাহায্যের জন্য মানুষ অদৃশ্য কারও উপর নির্ভর করে, সে সকল সাহায্য কেবল আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে। কেননা আল্লাহই সাহায্য করেন যখন বান্দাহ বিপদে বা সমস্যায় পড়েন।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।

1️⃣8️⃣ মুহাম্মদ সাঃ এর উপর স্বয়ং আল্লাহ দরুদ পড়েছেন। (নাউজুবিল্লাহ)
#ব্যাখ্যাঃ বিদাতি বেরলভি সম্প্রদায় এমনভাবে কথাটি বলে, যেন আল্লাহ রাসূল এর উপর দরুদ পড়ে, যেভাবে মানুষ পড়ে থাকেন। (নাউজুবিল্লাহ)  স্রষ্টা তার সৃষ্টির জন্য দয়া করেন, অনুগ্রহ করেন। কিন্তু দোয়া করেন না৷ দরুদ বা দোয়ার সাধারণ অর্থ হচ্ছে স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির সাহায্য বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। অতএব, যারা স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে পারথক্য বুঝেনা তারা কিভাবে কুরআন বুঝতে পারবে।

#দরূদ শব্দটি আল্লাহর দিকে ইযবত করলে হয়, আল্লাহ রাসূল সাঃ উপর দয়া বা অনুগ্রহ করেন।
ফেরেস্তাদের দিকে ইযবত করলে হয়, ফেরেস্তাগণ রাসূল সাঃ এর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আর মানুষের দিকে ইযবত করলে হয়, মানুষ রাসূল সাঃ এর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
দেখুনঃ সূরা আহযাবঃ ২৪/৫৬ তাফসিরে ইবনে কাসীর ও তাফসিরে জালালাইন।
অতঃপরঃ উপরোক্ত কথা মিথ্যা ও বানোয়াট।
--------------------------------ঃ--------------------------
শেষ কথাঃ আলা হযরতের অনুসারী দাবিদার বেরলভি সম্প্রদায়  রাসূল সাঃ এর শানে আজগুবি কথা, বানোয়াট ও মিথ্যা প্রশংসা করে ভালোবাসা প্রকাশের চেষ্টা করতেছে, সন্দেহ নেই তারা বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনে লিপ্ত। তাদের এইসব বিভ্রান্তিকর, বানোয়াট ও মিথ্যা কথা মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও ফিতনাকে উস্কে দিচ্ছে। মুসলমানরা মূল আক্বিদার বিষয় থেকে সরে গিয়ে এইসব অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে তর্কে লিপ্ত হচ্ছে।
ইসলামি আক্বিদায় রিসালাত বিশ্বাসের মূল বিষয় হলো, মুহম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহকে আল্লাহর বান্দাহ ও রাসূল হিসেবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে মুখে স্বীকৃতি দেওয়া এবং তার দেখানো পথে চলা।

পরিশেষে দুটি হাদিস দিয়েই আমার সংক্ষিপ্ত আলোচনার ইতি টানলাম।
আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা) বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রা) মিম্বারের উপরে বক্তৃতায় বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:

لا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتْ النَّصَارَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدُهُ فَقُولُوا عَبْدُ اللَّهِ وَرَسُولُهُ.

‘‘খৃস্টানগণ যেরূপ ঈসা ইবনু মারিয়ামকে বাড়িয়ে প্রশংসা করেছে তোমরা সেভাবে আমার বাড়িয়ে প্রশংসা করবে না। আমি তো তাঁর বান্দা মাত্র। অতএব তোমরা বলবে: আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।’’
(বুখারী, আস-সহীহ ৩/১২৭১, ৬/২৫০৫; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৭৮)।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দৌহিত্র হুসাইন ইবনু আলী (রা) বলেন,
أَحِبُّوْنَا بِحُبِّ الإِسْلاَمِ فَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ (ﷺ) قَالَ: لاَ تَرْفَعُوْنِيْ فَوْقَ حَقِّيْ فَإِنَّ اللهَ تَعَالَى اتَّخَذَنِيْ عَبْداً قَبْلَ أَنْ يَتَّخِذَنِيْ رَسُولاً
‘‘তোমরা আমাদেরকে ইসলামের ভালবাসায় ভালবাসবে; কারণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমাকে আমার প্রাপ্যের উপরে উঠাবে না; কারণ আল্লাহ আমাকে রাসূল হিসেবে গ্রহণ করার আগেই আমাকে বান্দা হিসেবে গ্রহণ করেছেন।’’

(হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৩/১৯৬; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৯/২১। হাকিম হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। হাইসামী হাদীসটির সনদ হাসান বলে উল্লেখ করেছেন)

❤️ পরিশেষে আমার সকল ভাল কাজই আল্লাহর জন্য।
✍️ আবুবকর সিদ্দিক।  ২৪/০৫/২০২২

tag: #মুহাম্মদ_সাঃ_সম্পর্কে #প্রচলিত_ভুল_ধারণা
#মুহাম্মদ সাঃ 
#ইসলাম 
#কুরআন 
#হাদিস
#wrong concept of Prophet Mohammed (sm)

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ