প্রশ্নঃ "মুহাম্মদ (সা) আমাদের মতো মানুষ" এই কথাটি কুরআনের কোথায় বলা হয়েছে এবং এর সঠিক ব্যখ্যাকি?

উত্তরঃ আপনার প্রশ্নের দুটি অংশ। প্রথম অংশ হলো
কোথায় কথাটা উল্লেখ আছে এবং দ্বিতীয় অংশ হলো
উত্ত কথা দ্বারা কি বুঝানো হয়েছে।
প্রথম অংশের জবাব,
কুরআনের বেশকিছু জায়গায় আল্লাহ তাআলা রাসূল
(সা)কে আমাদের মতো মানুষ বলে উল্লেখ করেছেন।
নিচে আয়াতগুলো তুলে ধরলাম।
قُلْ إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ يُوحَىٰ إِلَيَّ أَنَّمَا إِلَٰهُكُمْ إِلَٰهٌ وَاحِدٌ ۖ
"বলুন, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের মতো মানুষ, আমার উপর আল্লাহর ওহী নাযিল হয় এবং তোমাদের প্রভু একজন"
(সূরা আল - কাহাফ ১৮ / ১১০, সূরা আল - হা -মিম - আস-সাসদাহ ৪১ / ৬)।
উপরোক্ত আয়াত দুটি ছাড়াও কুরআনের আরও অনেক জায়গায় মুহাম্মদ (সা) যে একজন মানুষ ছিলেন তা উল্লেখ করেছেন।
যেমন, "বলুন, পবিত্র মহান আমার প্রভু, আমি একজন মানুষ ছাড়া আর কি?..(সূরা আল - ইসরা ১৭ /৯৩)।
"মানুষের কাছে কি আশ্চর্য লাগছে যে, আমি ওহী প্রেরণ করেছি তাদের মধ্য হতে একজনের নিকট? ...(সূরা ইউনূস ১০ / ২)।
আশা করি প্রথম অংশের জবাব পেয়েছেন।
দ্বিতীয় অংশের জবাব,
এই ধরনের আয়াতগুলোর শানেনযুল হলো, মুশরিকদের ধারণা ছিল, মানুষ কখনো নবী রাসূল হতে পারেনা। নবী বা রাসূল হবেন মানুষের চেয়ে উর্ধের কোনো সৃষ্টি, যেমন : ফেরেশতা। (surah isra /93). এছাড়াও কাফের মুশরিকরা মনে করত যে, তিনি যেহেতু একজন আল্লাহর নবী, সেহেতু তিনি যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। যেকোন সময় তারা তাদের আবদার পেশ করত। কিন্তু নবী হলেও তিনি যে একজন মানুষ। আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া তিনি কিছুই করতে পারতেন না।

উপরোক্ত আয়াতগুলো নাযিল করে আল্লাহ তাদের ভ্রান্ত ধারণা বা বিশ্বাসের জবাব দিয়েছেন।
অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা)ও একজন মানুষ।
অতএব, "মুহাম্মদ (সা) মানুষ নয় বরং মানুষ রূপে এসেছেন" তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন, বর্তমান সময়ের বিদাতিদের এমন কথা ভিত্তিহীন ও কুরআনের সাথে সাংঘর্ষিক।
কুরআনে মুহাম্মদ (সা)কে "আমাদের মতো মানুষ বলেছেন"
উপরোক্ত কথার অর্থ হলো,
আমরা যেমন পিতা ও মায়ের মিলনের ফসল, রাসূল (সা)ও পিতা ও মায়ের মিলনের ফসল।
আমরা যেমন, বিয়ে করি, রাসূল (সা) ও বিয়ে করেছেন।
আমরা যেমন হাটে বাজারে যায়, রাসূল (সা)ও হাটে বাজারে যেতেন।
আমাদের যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণা, তন্দ্রা, নিদ্রা ইত্যাদি আছে, রাসূল (সা) এর ও ক্ষুধা, তৃষ্ণা, তন্দ্রা, নিদ্রা ইত্যাদি ছিল। আমরা যেমন
অসুস্থ হয়, রাসূল (সা) তেমনি অসুস্থ হতো।
আমরা যেমন পেশ্রাব, পায়খানা কিংবা যানাবাতের কারণে
অপবিত্র হয় রাসূল (সা) এইসব কারণে অপবিত্র হতেন।
আমরা যেমন ভুল করি রাসূল (সা)ও ভুল করতেন। (সহীহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১১৫৯)
আমাদের যেমন মৃত্যু আছে , তারও মৃত্যু হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা উপরোক্ত আয়াতগুলো দ্বারা এইসবে নির্দেশ করেছেন।
এইবার আপনার প্রশ্ন থাকতে পারে, সব দিক থেকে যদি তিনি আমাদের মতে মানুষ হন তবে পার্থক্য কি?
পার্থক্য হলো,
=>আল্লাহ তাকে ওহী দিয়েছেন যা আমাদের দেয়নি।
=>আল্লাহ তাকে উত্তম চরিত্রের অধীকারী বানিয়েছেন।
=>আল্লাহ তার দ্বারা অনেক অলৌকিক কাজ করেছেন।
=>তার সব কথা ও কাজ মানা আমাদের জন্য ইবাদত করেছেন।
=>তিনি মিরাজে গিয়েছিলেন।
=>আল্লাহ্ তাকে ইমামুল মুর সালিন বা সকল নবী রাসূলগণের নেতা বানিয়েছেন।
=>আল্লাহ তাকে রাহমাতুল্লিল আলামিন বানিয়েছেন।
=>তিনি ছিলেন, মাসুম বা নিস্পাপ।
=>তিনি জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকামের অধিকারী হবেন।
এককথায়, মুহাম্মদ (সা) মানবীয় গুণের দিক থেকে তিনি অন্যান্য মানুষদের মতো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। কিন্তুু সম্মান, মর্যাদা, জ্ঞান, খ্যাতি, চারিত্রিক মর্যাদা এসব দিক দিয়ে তিনি সকল মানুষের উর্ধ্বে।
আশা করি উত্তর পেয়েছেন।
NB : প্রশ্ন কর্তা ও উত্তরদাতা উভয় আমি। এখানে উপরোক্ত বিষয় সুস্পষ্ট ভাবে আলোচনার সার্থে আমাকে উভয়ের ভুমিকা পালন করতে হয়েছে।
Date: 22/11/16.

সংযুক্তিঃ (22 April 2022)

উপরের আয়াত গুলির আলোচনা আমার নিজের বিদ্যা বুদ্ধি থেকেই করেছি। এর স্বপক্ষে একটি ঐতিহাসিক তাফসীরের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করলাম৷


মানুষ মুহাম্মাদ সাঃ
তাফসীরে জালালাইন, ১৮ সূরা কাহাফ ১১০ নং আয়াত।


মানুষ মুহাম্মাদ সাঃ
তাফসীরে জালালাইন, ৪১ সূরা ফুসিলাত ০৬ নং আয়াত



মানুষ মুহাম্মাদ সাঃ
তাফসীরে জালালাইন, ১৭ সূরা ফুসিলাত ৯৩ নং আয়াত

মানুষ মুহাম্মাদ সাঃ
সহীহ্ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ১১৫৯

Comments

  1. https://abubakarnetwork.blogspot.com/2016/11/blog-post_23.html

    ReplyDelete
  2. নাউজুবিল্লাহ তুই বেডা বেয়াদপ৷ তোর আক্বিদা টিক নাই।। নবি আমাদের মত মানুষ কিন্তু আল্লাহ আমাদের মত সাধারণ মানুষ বলে নাই।। তোদের কাজ সুধু আমাদের নবিকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করা৷ হিন্দু দের মত তোদের আর হিন্দু দের মধ্যে কোন পার্তক্য নেই আল্লাহ তোদের হেদায়ত দান করুক

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ