হাযির নাজির প্রসঙ্গে / Hazir-Najir

বিসমিল্লাহির_রাহমানির_রাহিম
****************************************
হাজির নাযির বলা হয় তাকে,যাকে কোনো জায়গায় আসতে বা যেতে হয়না। যার কোনো জায়গায় উপস্থিত হওয়া লাগেনা। কোনো জায়গায় উপস্থিত হওয়া ছাড়াই যিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। আর এভাবে বুঝলে একজন মুসলিম যাকে হাজির নাযির বলে সাক্ষ্য দিতে পারেন তিনি হলেন আল্লাহ। আল্লাহ ব্যতীত আর কেউ
হাজির নাযির হতে পারেনা। তিনি আরশে সমাসীন (সূরা ত্বাহা, ২০ :০৫) । আর সেখান থেকেই তিনি তার সৃষ্টি জগতের দেখা-শোনা করেন। আল্লাহ তার হাজির নাযির হওয়ার ব্যাপারটি কোরানে এভাবেই উল্লেখ করেছেন,
"আর নিশ্চয়ই আল্লাহ সবই শোনেন ও দেখেন (সূরা
হাজ্ব, ২২:৬১)।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সব বিষয়ে অবগত (সূরা
হাজ্ব,২২:৬৩)।দেখো, তিনি কতো সুন্দর দ্রষ্টা ও
শ্রোতা (সুরা ক্বাহাফ,১৮:২৬)।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সবই শোনেন ও দেখেন(লোকমান,
৩১:২৮)।
....নিশ্চয়ই তিনি তোমাদের অন্তরের খবরও রাখেন।
যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনি কি জানবেন না (তোমাদের
সম্পর্কে)? অথচ তিনি হলেন সুক্ষ্মদর্শী, সবই অবগত
(সূরা,মূলক, ৬৭ :১৩-১৪)।
এভাবে কোরানের আরও একাধিক সুস্পষ্ট আয়াত পাওয়া যাবে যার দ্বারা আল্লাহ হাজির নাযির হওয়ার ব্যপারটি প্রকাশ পায়। বড়ই আফসোস! এতসব সুস্পষ্ট আয়াতের পরও যেন মুসলমানদের মধ্যে বিভ্রান্তির শেষ নেই এই নিয়ে।
মুসলমানদের মধ্যে কিছু লোক দাবী করে যে,মুহাম্মদ (সা)ও হাজির নাযির। অথচ উপরোক্ত আলোচনা থেকে এই কথা সুস্পষ্ট ভাবে প্রমাণ হয় যে, কোন সৃষ্টির পক্ষে হাজির নাযির হওয়া সম্ভব নয়। তবুও অতিভক্তির কারণে মানুষের মধ্যে সীমালংঘনের ব্যপারটি একেবারেই নতুন নয়। তাই ব্যপারটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা প্রয়োজন।
যারা বলে মুহাম্মদ (সা) হাজির নাযির, তারা উপরে উল্লেখিত স্পষ্ট আয়াত গুলো নিয়ে কখনো চিন্তা করেছে বলে আমার মনে হয়না। তবে তারা যে অস্পষ্ট আয়াত গুলো কে মুহাম্মদ (সা) হাজির নাযির হওয়ার দলিল হিসেবে উল্লেখ করেন তা নিয়ে আমি গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা করেছি। নিম্নে তা নিয়ে আলোচনা করলাম।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন,"হে নবী,আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে(সুরা,আল
ফাতাহ,৪৮:৮)।
হে নবী! আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষী রূপে, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে (সূরা আহযাব, ৩৩:৪৫)।
আমরাতোমাদের কাছে পাঠিয়েছি একজন রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হিসেবে...(সূরা আল মুযাম্মিল,৭৩:১৫)।
লক্ষ্য করুন, কোরানের এই আয়াত গুলোতে আল্লাহ মুহাম্মদ (সা) কে সাক্ষী, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছে বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের মতে সাক্ষী মানে, মুহাম্মদ (সা) তার উম্মতদের সকল কর্মকাণ্ডের সাক্ষী হবেন আখিরাতে। যেহেতু সাক্ষী হতে হলে অবশ্যই দেখতে ও শোনতে হয়। দেখা শোনা
ব্যতীত কেউ সাক্ষী হতে পারেনা। তাই তিনি তার উম্মতদের কর্মকান্ড দেখতে ও শোনতে পান। অর্থাৎ তিনি হাজির নাযির।
এই আয়াত গুলোর ব্যাখ্যায় আমি নবীজি (সা) কে শুধু তার উম্মতের জন্য হাজির নাযির বলে উল্লেখ করেছি।
জানিনা যারা নবীজি (সা)কে হাজির নাযির বলে বিশ্বাস করেন, তারা কি শুধুই উম্মতের জন্য হাজির নাযির মানেন, নাকি পুরো মানব জাতির জন্য!!
উপরোক্ত আয়াত তিনটিতে মহানবী (সা) কে হাজির নাযির বা সাক্ষী বলা হলেও নিম্নে উল্লেখিত আয়াত দুটিতে তার উম্মতদের হাজির নাযির বা সাক্ষী বলা হয়েছে। নিম্নে উল্লেখিত আয়াত দুটি আরও প্রমাণ করে যে তার উম্মতগণ পুরো মানবজাতির জন্য সাক্ষী আর তিনি শুধু তার উম্মতের জন্য সাক্ষী।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,"এভাবেই আমরা তোমাদের বানিয়েছি একটি 'মধ্যপন্থী উম্মাহ ' যাতে করে তোমরা বিশ্ববাসীর জন্য সাক্ষী হতে পারো এবং রাসূল ও হতে পারে তোমাদের জন্য
সাক্ষী (সূরা আল বাকারাহ, ২:১৪৩)।
...যাতে করে এই রাসূল তোমাদের উপর সাক্ষী হয় এবং তোমরাও সাক্ষী হও মানব জাতির উপর....(সূরা হাজ্ব,২২ :৭৮)।
আল্লাহ আমাদেরকে মানবজাতির জন্য সাক্ষী বলেছে, সাক্ষী বলেছে রাসূল (সা) কেও আমাদের জন্য।
এখন প্রশ্ন হলো,
আমরা কি মানব জাতির সব কিছুই দেখি এবং শোনি?
রাসূলও কি আমাদের সব কিছু দেখেন ও শোনেন? সাক্ষী
হওয়ার জন্য কি হাজির নাযির থাকা প্রয়োজন?
উত্তর : প্রকৃত ব্যাপার আল্লাহই ভাল জানেন। তবে কোরান থেকে যতটুকু শিক্ষা পায় তা অনুসারে আপনাদের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতেছি। শাহেদ, শাহাদাত, শুহাদাতুন এই শব্দগুলো কোরান
শরীফে সর্বমোট প্রায় ৪৮ সূরায় ১২৩ বার এসেছে।
বিভিন্ন অর্থে এই শব্দগুলো কোরানে ব্যবহার হয়েছে।
তবে সামগ্রিক ভাবে কাউকে বা কোন জাতিকে সাক্ষী বলা হলে সেটা বুঝানো হয় আখিরাতে বদকারের বিরুদ্ধে নেককারদের সাক্ষী।
আমরা যেমন মানবজাতির সব কিছু দেখিও না, শোনিও
না, তেমনি মুহাম্মদ (সা) ও মানব জাতির সবকিছু
দেখেনও না শোনেনও না। এখানে মুহাম্মদ (সা) এর
উম্মত সকল মানবজাতির জন্য সাক্ষী এর অর্থ হলো,
কিয়ামতের দিন অন্যান্য নবীগণের পথভ্রষ্ট উম্মতরা
যখন তাদের নবীদের সাক্ষ্যদানকে অস্বীকার করবে
তখন আল্লাহ নবীদের বলবেন, তোমাদের কি কোন
সাক্ষী আছে? তখন তারা বলবে, হ্যাঁ, মুহাম্মদ (সা) এর
উম্মত। তখন মুহাম্মদ (সা:)এর উম্মতগণ সাক্ষী দিবে।
যেহেতু, তারা কোরান থেকে এই নবীদের ব্যাপারে
জেনেছিল।
অতএব, এই রকম কোনো সাক্ষ্য প্রদানের জন্য কাউকে
হাজির নাযির হতে হবেনা। বরং কোরান পড়লেই এ
ব্যাপারে সাক্ষী দিতে পারে।
রাসূল (সা:)ও তার উম্মতের সব কিছু দেখেও না শোনেও
না।
বরং রাসূল (সা:) তার উম্মতের জন্য সাক্ষী, এর অর্থ
হলো, আখিরাতে রাসূল (সা:)কে তার উম্মতদের তার
নামে করা বিভিন্ন পাপ কাজের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা
করা হবে। বলা হবে তুমি কি তোমার অনুসারীদের এই এই
কাজ গুলো করার নির্দেশ দিয়েছিল?
সেদিন তিনি তার পথভ্রষ্ট উম্মতদের বিপক্ষে সাক্ষী
দিয়ে বলবেন। না, আমি কখনো তাদের এসব কাজ করার
নির্দেশ দিইনি। বরং আমার মৃত্যুর পর তারা নিজেরাই
এগুলো বানিয়ে নিয়েছে।
অথবা তিনি সেভাবেও সাক্ষী দিতে পারেন যেভাবে
সাক্ষী দিবেন ঈসা (আ:) তার উম্মতদের
ব্যাপারে। ...যতোদিন আমি তাদের মাঝে ছিলাম
ততদিন আমি তাদের কার্যকলাপের সাক্ষী ছিলাম। আর
যখন তুমি আমাকে উঠিয়ে নিয়েছো তখনতো তুমিই
ছিলে তাদের কার্যকলাপের তত্বাবধায়ক আর সব
বিষয়ের সাক্ষী (সূরা মায়েদা,৫:১১৭)।
(আখিরাতে অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষীর একটি
ধারণা মুলক উদাহরণ পেশ করলাম, প্রকৃত ব্যাপার
আল্লাহই ভাল জানেন)।
তবে সাক্ষী হওয়ার ব্যাপারটি এই রকমই হবে।
সাক্ষী হওয়ার জন্য আমাদের যেমন হাজির নাযির হতে
হয়না। তেমনি রাসূল (সা:)কেও হাজির নাযির হতে
হবেনা।
তারপরও আপনারা আমাকে বলতে পারেন,
আমি নিজের মতো করে উদাহরণ দিয়ে রাসূল (সা:)
হাজির নাযির হওয়ার ব্যাপারটি অস্বীকার করতেছি।
তাই একটি হাদিস আপনাদের সামনে উপস্থাপন
করলাম,"কিয়ামতের দিন যখন রাসূলের একদল উম্মত তার
নিকট হাউজে কাওসারের পানি পান করতে আসবে তখন
ফেরেশতাগণ তাদের আসতে বাধা দিবে। রাসূল (সা :)
ফেরেশতাদের বলবে এগুলো আমার উম্মত। তখন
ফেরেশতারা বলবে, আপনি জানেন না আপনার পর এরা
কি করেছিল "(সহি বুখারী)।
এবার আপনারাই বলুন, তিনি যদি হাজির নাযির হন,
তবে তিনি জানতেন না কেন তার এই উম্মতরা কি
করেছিল তার মৃত্যুর পর???
আশা করি পুরো বিষয়টি আপনারা অনুধাবন করতে
ফেরেছেন।
ইতিঃ আল্লাহর অতি নগন্য গোনাহগার গোলাম,
আবুবকর সিদ্দিক।
০১/০৩/১৫ ইং
''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''''

Comments

Popular posts from this blog

Application for permission to visit National Museum.

মিলাদুন্নবী ও সূরা আহযাবের 56 নং আয়াত:

ইবাদতে মাইকের ব্যবহার নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি নিরসন (প্রথম পর্ব)

রাসূল (সা) প্রতি সোমবারে রোজা রাখতেন কেন?

সৈয়দ আব্দুল কাদের জিলানী (রা) এর সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ